সাইক্লোন যশ আঘাত হানতে চলেছে প্রধানত ওড়িশাতেই
তবে তাই নিয়ে খুব উদ্বীগ্ন নয় বঙ্গের প্রতিবেশী রাজ্য
কারণ তৈরি রয়েছে সাইক্লোনের বিরুদ্ধে তাদের সুরক্ষার প্রথম সারি
পিছনে রয়েছে, আইআইটি খড়গপুরের দুই বাঙালি অধ্যাপকের মস্তিষ্ক
আসছে ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন যশ (Very severe cyclone Yaas)। পশ্চিমবঙ্গ কিছুটা নিশ্চিন্ত, কারণ বাংলায় সরাসরি আঘাত না করে এই ঘূর্ণিঝড় স্থলভাগে প্রবেশ করতে চলেছে ওড়িশার বালাসোর-এর দক্ষিণদিকে। তবে, যত বড়ই সাইক্লোন আসুক না কেন, আর ভয় পায় না বাংলার এই প্রতিবেশী রাজ্য। প্রাকৃতিক দুর্যোগে কিছু সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়তো হবে, কিন্তু, প্রাণনাশের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু কেন? কীভাবে সম্ভব হল এই অসম্ভব? এর পিছনে রয়েছে, আইআইটি খড়গপুরের দুই বাঙালি অধ্যাপকের মস্তিষ্ক।
১৯৯৯ সালে ভয়ঙ্কর সুপার সাইক্লোনের সাক্ষী হয়েছিল ওড়িশা। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৯,৮৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বেসরকারি মতে অবশ্য মৃত্যুর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ গুণ বেশি। তবে, সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার পরই সাইক্লোনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ব্যবস্থা নিয়েছিল ওড়িশা সরকার। আর এই বিষয়ে তারা দায়িত্ব দিয়েছিল খড়গপুর আইআইটির সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক শ্রীমান কুমার ভট্টাচার্য্য এবং ওই বিভাগেরই ভিসিটিং প্রফেসর গোপাল চন্দ্র মিত্রকে।
দেড় বছর সময় নিয়ে ২০০৪ সালে তাঁরা একটি সাইক্লোন সেন্টারের প্রোটোটাইপ তৈরি করেছিলেন। আর তারপর সেই মডেল অনুযায়ী ওড়িশার উপকূলীয় জেলা - বালাসোর, কেন্দ্রপাড়া, পুরী জগৎসিংপুরে, প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলের অর্থ ব্যবহার করে ৬০০টিরও বেশি সাইক্লোন সেন্টার তৈরি করা হয়েছিল। প্রতিটি কেন্দ্রে অন্তত এক হাজার লোক থাকতে পারে।
এই সাইক্লোন সেন্টারের কাঠামোগুলি রিইনফোর্সড কংক্রিট দিয়ে তৈরি। স্টিলের কাঠামো হলে আরও মজবুত হত, কিন্তু, উপকূলীয় অঞ্চলে নোনা বাতাসে কাঠামোগুলি মরচে পড়ে দুর্বল হয়ে যেত। এছাড়া, দোতলায় ব্যবহার করা হয়েছে 'ইনফিল দেওয়াল' প্রযুক্তি। অর্থাৎ, রিইনফোর্সড কংক্রিটের দুটি কলামের মধ্যে তৈরি করা হয়েছে কংক্রিটের প্রাচীর। এতে করে কলামগুলির শক্তি বৃদ্ধি হয়। নীচের তলায় অবশ্য কোনও দেওয়াল নেই, রয়েছে শুধু স্তম্ভগুলি। যাতে কোনও প্রতিরোধ ছাড়া বাতাস বয়ে যেতে পারে। বদ্ধ কাঠামো হলে বাতাসের চাপে দেওয়াল ও স্তম্ভ ভেঙে যেতে পারত। দ্বিতীয় তলেও বাতাস বয়ে যাওয়ার জন্য কিছুটা খোলা জায়গা রাখা হয়েছে। প্রতিবন্ধী মানুষও যাতে এই কেন্দ্রে আশ্রয নিতে পারে, তার জন্য সিঁড়ির পাশাপাশি র্যাম্পের ব্যবস্থাও রয়েছে।
২০০৪ সালে এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলি তৈরির পর থেকে ২০১৪ সালে ফেইলিন ২০১৮ সালে তিতলি, ২০১৯ সালে ফনি, আমফান-এর ধাক্কা সামলাতে হয়েছে ওড়িশাকে। মৃত্যুর সংখ্যা এই সবকটি সাইক্লোনে ১০০ জনও হয়েছে কিনা সন্দেহ। অধ্যাপক শ্রীমান কুমার ভট্টাচার্য্য এবং অধ্যাপক গোপাল চন্দ্র মিত্র-র দাবি, ঘন্টায় ২৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে গেলেও সাইক্লোন সেন্টারগুলির কিছু হবে না। শুধু তাই নয়, এই সাইক্লোন সেন্টারগুলির আরও একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হ'ল, বিপর্যয়ের সময় ছাড়া এগুলিকে স্কুল বা শাক-সবজির বাজার হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।