নাম ললিতা। বাইশ বছরের তরুণী ললিতা থাকেন কর্ণাটকের হিরিউর শহরে। তাঁর বাবা ওই শহরের নেহেরু মার্কেটের একজন সবজি বিক্রেতা। এমন একটি পরিবারে জন্মে সাধারণত মেয়েরা উচ্চ শিক্ষার কথা ভাবতে পারে না। কারণ অল্প বয়সেই তাঁদের বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে।
কিন্তু ললিতা, লাখে একজন- যে সে কথা ভাবতে পেরেছিল এবং তাঁর ভাবনাকে সফল করতে পেরেছে। ললিতা নিজের এই লড়াইটা একাই লড়েছেন। তাঁর এই লড়াইয়ে সঙ্গী শুধু তাঁর কঠোর পরিশ্রম এবং সাধনা।
ললিতার দিন শুরু হত কাক ডাকা ভোরে। ঘুম ভাঙা চোখে সে যেমন তাঁর বাবাকে বাজারে সবজি বিক্রিতে সাহায্য করত পাশাপাশি এরই ফাঁকে চালাত তাঁর লেখাপড়া। এইভাবেই একদিন স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে যায় সে। তাপর কলেজ। তখনও ঘরে ফিরে এসে মাকে ঘরের কাজে সাহায্য করতে হত। ঠিক এই রুটিনেই ললিতা বছরের পর বছর লেখাপড়া চালিয়ে গেছেন মন প্রাণ সঁপে দিয়ে। কলেজের শিক্ষা শেষ করেছেন কৃতিত্বের সঙ্গেই। তারপর ভরতি হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানেও রেখেছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর।
ভিসভেসভারাইয়া টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে ললিতা এ বছর সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পাস করেছেন। এছাড়াও গ্রাজুয়েট অ্যাপটিচিয়ুড টেস্ট ইন ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষাতেও ললিতা রেকর্ড ৭০৭ নম্বর পেয়ে পাস করেছেন। এজন্য ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পাচ্ছেন গোল্ড মেডেল। ললিতার সাধনা এবং সিদ্ধিলাভের যাযত্রাপথ এখানেই থেমে নেই। ললিতা সুযোগ পেয়েছেন আমেরিকায় গিয়ে সেখানকার নামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা করার। কিন্তু ললিতার ইচ্ছে নিজের দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা আইএসআরও-তে কাজ করার। কারণ ললিতার আদর্শ তারই দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার প্রধান কে শিভান। তিনিও ললিতার মতো এক গরীব কৃষক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন।
ললিতা তাঁর পরিবারে প্রথম মানুষ যে স্কুলের গণ্ডী পেরিয়ে স্নাতক হয়েছেন। তাঁর পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরেই বাজারে সবজি বিক্রয় করে আসছেন। ললিতার এই সাফল্যে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছেন নোবেলজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী।
আর্থিক কষ্টের পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতাকেও যে সে এইভাবে জয় করতে পারবে, তা ভাবতেই পারেননি তাঁর বাবা-মা। ললিতার সাফল্যের খবর প্রকাশিত হয়েছে কর্নাটকের সংবাদ মাধ্যমে। সামাজিক মাধ্যমগুলিতেও ললিতাকে নিয়ে সাড়া পড়ে গিয়েছে। কিন্তু ললিতা এসব ব্যাপার নিয়ে মোটেও মাথা ঘামাচ্ছেন না। তার লক্ষ্য মহাকাশ গবেষণা।