মত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকরর জন্য জন ফাঁসিকাঠে ঝোলানে কতটা যুক্তি সংগত। এই নিয়ে কেন্দ্রকে আলোচনা করেত বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিল সুপ্রিম কোর্ট।
মৃত্যুদণ্ড নিয়ে নতুন বিতর্ক। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যু সবথেকে উপযুক্ত কিনা তা জানতে চেয়েছে। পাশাপাশি এটি ব্যাথাহীন পদ্ধতি কিনা তা পরীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের পরামর্শ দিয়েছে। ফাঁসি মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পরিবর্তে বা বিকল্প হিসেবে অন্য কোনও পদ্ধতি যা 'কম বেদনাদায়ক' হতে পারে তা কার্যকর করা যায় কিনা তাই নিয়ে চিন্তাভাবনা করার পরামর্শ দিয়েছে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ২ মে।
দেশের প্রধানবিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় ও বিচারপির পিএস নরসিমার বেঞ্চ অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটমনি এই বিষয়ে বিষদ বিবরণ দিতে নির্দেশ দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ফাঁসিতে মৃত্যুর হওয়ার সময় প্রভাব ও ব্যাথার বিষয়ে কোনও ডেটা বা গবেষণা হয়েছে কিনা, এটি সবথেকে বেশি কিনা- তাও জানাতে হবে। মৃত্যুদণ্ডের সাজা কার্যকর করার জন্য এটাই কি একমাত্র উপযুক্ত পদ্ধতি হতে পারে? তাও জানতে চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আদালত বলেছে, 'ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্য়ুদণ্ড কার্যকর করার জন্য জন্য কি প্রভাব পড়ে, এই ধরনের মৃত্যু ঘটতে ঠিক কতটা সময় লাগে, এই ধরনের মৃত্যু কার্যকর করতে যে বস্তুগুলি প্রয়োজন হয় তার প্রাপ্যতা সম্পর্কে আমাদের কাছে আরও ভাল তথ্য থাকা জরুরি। বর্তমান বিজ্ঞান সম্মত অন্য কোনও পদ্ধতির থেকে এটা ভাল কিনা? নাকি অন্য কোনও পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে যা মানুষের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার জন্য আরও বেশি উপযুক্ত হতে পারে?' যদি সরকার এজাতীয় সমীক্ষা না করে থাকে তাহলে অবিলম্বে এই বিষয়ে সমীক্ষা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করার পরামর্শ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, 'কেন্দ্র যদি এই গবেষণাটি না করে থাকে তাহলে আমরা একটি কমিটি গঠন করতে পারি যাতে NLU দিল্লি, বেঙ্গালুরু বা হায়দরাবাদের মত দুটি জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ, AIIMSএর কয়েকজন ডাক্তার, সারা দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও কয়েক জন বৈজ্ঞানিক ও বিশেষজ্ঞ থাকতে পারে।' সুপ্রিম কোর্ট আরও বলেছে, আমরা একটি উপসংহারে পৌঁছাতে পারে তা হলে ফাঁসিতে মৃত্যু উপযুক্ত। তবে আমাদের এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী ঋষি মালহোত্রা একটি আবেদন করেছিলেন। সেখানে তিনি আবেদন করেছিলেন, ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরা করা বন্ধ করা হোক। পরিবর্তে ইনজেকশন বা ইলেক্ট্রিকশকের মত তুলনামূলকভাবে ব্যাথাহীন পদ্ধতি অবলম্বন করা হোক। সেই আবেদনের শুনানি এদিন হয়। তাতেই সুপ্রিম কোর্ট এই মন্তব্য করেছে। আবেদনে আরও বলা হয়েছিল, আইন কমিশন তার ১৮৭ তম প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, যে দেশে ফাঁসি বাতিল করা হয়েছে ও ফাঁসি পদ্ধতি হিসেবে বৈদ্যুতিক আঘাত, গুলি বা প্রাণঘাতী ইনজেকশন ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে এজাতীয় পদ্ধতির সংখ্যা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি স্পষ্টভাবেই বলছে ফাঁসিতে নিঃসন্দেহে তীব্র শারীরিক নির্যাতন ও যন্ত্রণা হয় মৃত্যপদযাত্রীর। আইনজীবী নিজের আবেদনের পক্ষে এদিন আদালতে সওয়াল করতে গিয়ে বলেছেন, তাঁর ব্যক্তিগত মত হল ফাঁসিকে মৃত্যু অত্যান্ত নিষ্ঠুর প্রক্রিয়া ও অমানবিক। তিনি আরও বলেছেন বর্তমানে জল্লাদের বড়ই অভাব। মাঝেমধ্যে কলকাতা বা মুম্বই থেকে দিল্লিতে জল্লাদ নিয়ে আসতে হয়।
পাল্টা বিচিরপতি নরসীমা বলেছিলেন মৃত্যুর সময় যে কোনও মানুষেরই মর্যাদা থাকা উচিৎ। আর মৃত্যু যতটা সম্ভব কম বেদনাদায়ক হওয়া উচিৎ। তিনি আরও বলেছেন ফাঁসি এই দুটি শর্তই পুরণ করে বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকার এদিন বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রি প্রাণধাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। কিন্তু সেই মৃত্যুও তাৎক্ষণিক নয়। প্রধানবিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণঘাতী ইনজেকশনে মৃত্যুতেও ব্যাথা হয়, তার প্রমাণ রয়েছে- এই নিয়ে তিনি কিছু পড়াশুনা করেছেন।