আফতাব তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করছে। এই অভিযোগ তুলে পলিগ্রাফিক টেস্টের আবেদন নিয়ে আদালতে দিল্লি পুলিশ। মঙ্গলবার মামলা শুনবে আদালত।
শ্রদ্ধা ওয়াকার খুন-কাণ্ডি মূল অভিযুক্ত আফতাব আমিন পুনাওয়ালা দিল্লি পুলিশকে কি ঘোল খাইয়ে ছেড়ে দিয়েছে? তেমনই প্রশ্ন উঠেছে দিল্লি পুলিশের হালচাল দেখে। কারণ নার্কো টেস্টের আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর এবার আফতাব পুনাওয়ালার পলিগ্রাফিক টেস্টের আবেদন জানিয়েছিলে দিল্লি পুলিশ। পুলিশের দাবি আফতাব তদন্তকারীদের সর্বদাই বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আর সেই কারণে একাধিক সময় প্রশ্নের উত্তর দিলেও তা সমস্যায় ফেলছে তদন্তকারীদের। তাই আফতাব যেসব প্রশ্নের উত্তর এতদিন ধরে দিয়েছে তা সঠিক বা ভুল তা জানতে অভিযুক্তের পলিগ্রাফ টেস্টের প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।
সোমবার দিল্লি পুলিশ আফতাব আমিন পুনাওয়ালার পলিগ্রাফি টেস্টের জন্য দিল্লির সিটি কোর্টে আবেদন করেছেন। আগামিকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট বিজয়শ্রী রাঠোরের উপস্থিতিতে এই মামলার শুনানি হবে। তদন্তকারীদের বক্তব্য আফতাব তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আর সেই কারণে তার বক্তব্য সঠিক না ভুল তা জানতেই পলিগ্রাফিক টেস্ট হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এদিন এই মামলা প্রথমে উঠেছিল আভিরাল শুক্লার বেঞ্চে। তিনি মামলা শুনে বলেন, আগে দিল্লি পুলিশ নার্কো টেস্টের আবেদন জানিয়েছিল। সেই মামলা শুনেছিলেন বিচারপতি রাঠোর। সেই কারণে পলিগ্রাফ টেস্টের মামটিও তার শোনার প্রয়োজন। সিদ্ধান্ত যথাযথ হবে বলেও আশাবাদী তিনি।
আদালত আগেই দিল্লি পুলিশকে নার্কো টেস্ট করারোর অনুমতি দিয়েছে। কিব্তু দিল্লি পুলিশ তার মধ্যেই আফতাবের বয়ানে বেশ কিছু অসঙ্গতি লক্ষ্য করে। যা পুলিশকে বিভ্রান্ত করার পক্ষে যথেষ্ট গুরুত্বরূর্ণ। আর সেই কারণ দিল্লি পুলিশ পলিগ্রাফিক টেস্টের অনুমতি চেয়েছে।
নার্কো বিশ্লষণকে ট্রুথ সিরামও বলা হয়।এতে অধুষ হিসেবে দেওয়া হয় সোডিয়াম পেন্টাথাল, স্কোপোলাইমাইন ও সোডিয়াম অ্যামাইটাল দেওযা হয়। এটি মানুষকে আচ্ছন্ন করে। আর সেই কারণে অপারেসনের সময় অ্যানেস্থেশিয়ার মত অবস্থা হয়। তাতেই ব্যক্তি কম বাধাগ্রস্ত হয় ও তথ্য প্রকাশের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। যা ওই ব্যক্তে সচেতন অবস্থায় প্রকাশ করতে পারে না।
অন্যদিকে এদিন আফতাবের নার্কোটেস্ট হওয়ার কথা। দিল্লির একটি হাসপাতালে এই পরীক্ষা হবে। অন্যদিকে দিল্লি পুলিশের একটি দল ইতিমধ্যেই মুম্বইতে পৌঁছে গেছে। খুনের তদন্তের জন্য আরও তথ্য একত্রিত করছে। কারণ শ্রদ্ধা আর আফতাবের আলাপ বা প্রেম পর্বের শুরু মুম্বইতে। একটি ডেটিং অ্যাপের মাধ্যমে আলাপ হয়েছিল। তারপরই তাদের প্রেম। পরিবারের অমতেই তারা সম্পর্ক চালিয়ে যায়। মুম্বই থেকে চলে আসে দিল্লিতে। সেখানে লিভ-ইন সম্পর্ক স্থাপন করে একই সঙ্গে থাকতে শুরু করে।
কিন্তু মে মাসের আগে থেকেই শ্রদ্ধা আর আফতাবের সম্পর্কে চিড় ধরছিল। শ্রদ্ধা আফতাবকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। কিন্তু আফতার বিয়ের সম্পর্কে রাজি ছিল না। অন্যদিকে সংসার খরচ নিয়েও দুজনের মধ্যে গত ১৮ মে তীব্র ঝগড়া হয়। তারপরই আফতার শ্রদ্ধাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর দেহ ৩৫টি টুকরো করে কেটে ফেলে। একটি নতুন ফ্রিজ কিনে সেখানেই রেখেছিল দেহাংশগুলি। ১৮টি প্ল্যাস্টিকে ভরা ছিল দেহের অংশ। প্রতিদিন রাত ২টোর সময় আফতার শ্রদ্ধার দেহের অংশ জঙ্গলে ফেলে দিয়ে আসত। প্রমাণ লোপাটের উদ্দেশ্যেই এই পন্থা নিয়েছিল আফতাব। বর্তমানে দিল্লি পুলিশের হেফাজতে রয়েছে আফতার। সোমবার তার নার্কো পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।