ভালোবাসার বন্ধনের রাখি নিয়ে সেনাদের কাছে 'দেশ', গড়ল এক নজির

  • রাখি মানে ভালোবাসার বন্ধন
  • ভাই-এর মঙ্গলকামনায় বোনেদের বন্ধন
  • সেই ভালোবসার বন্ধন নিয়ে এক নজির গড়ল 'দেশ'
  • ১০ দিনে ১১ হাজার রাখি পৌঁছে দিল তারা

debojyoti AN | Published : Aug 14, 2019 6:06 PM IST / Updated: Aug 15 2019, 11:38 AM IST

 "ঘর-ওয়ালা ফিলিং আয়া?" সমস্বরে চেঁচিয়ে "হা সাব", "ফির অগলা ছুট্টি ক্যান্সেল"!- সকলের অট্টহাসি!২৪ জুলাই সকাল আটটার সময় লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ৪০৩ ফিল্ড হসপিটালের গোটা সেনাবাহিনী ।শুধু আমাদের হাত থেকে রাখি পরবে বলে। সার্থক আমাদের এই অভিযান। এগারো হাজার রাখি নিয়ে আমরা - 'দেশ' এই যাত্রা শুরু করেছিলাম ২১শে জুলাই ।


 
২৩ জুলাই আমরা প্রথম রাখি বন্ধন উৎসব উদযাপন করি সিয়াচেন বেস ক্যাম্পে। বিশ্বের সর্বোচ্চ যুদ্ধ প্রশিক্ষণ স্কুলের কমান্ডিং অফিসার কর্নেল এ কে শর্মা'র হাতে দেশ পাঁচ হাজার রাখি তুলে দেয়। সিয়াচেন বেস ক্যাম্পের ডাক্তার ক্যাপ্টেন অরবিন্দের হাতে রাখি বেঁধে দিয়ে দেশের রাখি পূর্ণিমা উৎসবের সূচনা করা হয়। ২৪ জুলাই সকালে ৪০৩ ফিল্ড হসপিটালে (বা সিয়াচেন বেস হসপিটাল) সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেনাবাহিনীর প্রত্যেকের হাতে সেদিন রাখি বেঁধে দেয় 'দেশ'। শুরু হয় কমান্ডিং অফিসার কর্নেল সৌরভ ভরদ্বাজের হাত থেকে। রাখি পরতে পরতে কেউ অস্ফুটে  বলে ওঠেন 'থ্যাংক ইউ সিস্টার', কেউ বা বলেন 'থ্যাংক ইউ বহেন'। একজন জল ভেজা চোখে বলে ওঠেন 'পহেলি বার কোই মুঝে রাখি বাঁধা'। পরিস্থিতি হালকা করতে কমান্ডিং অফিসার সকলকে জিজ্ঞাসা করলেন 

 "ঘর-ওয়ালা ফিলিং আয়া?"
সমস্বরে সকলে চেঁচিয়ে জবাব দিল
 "হা সাব"।
কমান্ডিং অফিসার তখন ওদের বললেন-
"ফির অগলা ছুট্টি ক্যান্সেল"!

আমার সকলে হাসিতে ফেটে পড়লাম । এইটুকু "ঘর-ওয়ালা ফিলিং" দেওয়ার জন্যই তো আমাদের এই যাত্রা । 

২৬শে জুলাই কার্গিল বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশ পৌঁছে গেছিল দ্রাস। দ্রাস ওয়ার মেমোরিয়ালে দেশ দু হাজার রাখি উপহার দেয়।  দ্রাস ওয়ার মেমোরিয়ালে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে আসা বি এস এফ এর জওয়ানদের হাতেও দেশের এক হাজার রাখি তুলে দেয়। 

দ্রাসেই পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা একটা রাস্তা চলে গেছে ঝর্ণার ধারে অবস্থিত আর্টিলারির ৭৯ মিডিয়াম ফিল্ড রেজিমেন্টে। সেখানে তামিলনাড়ুর তরুণ ক্যাপ্টেন অরুণের আন্ডারে গোটা কুড়ি চল্লিশোর্ধ খালসা সেনা। আমাদের যখন পাহাড়ি ঝর্ণার ধারে গরম চা খাওয়ালেন উনারা, তখন আমরা দেশের রানির কথা ওনাদের জানালাম। অত্যন্ত খুশি হয়ে সবাই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন তক্ষুনি ।নতাঁদের সরল হাসি ও উচ্ছ্বাস আমাদের মন ছুঁয়ে গেল।নআমাদের এই অভিযানে আমাদের সঙ্গে ছিলেন আমাদের দেশেরই এক সদস্য সুনিতাদিদি। তিনি ১৯৯৯ এ কার্গিল যুদ্ধে তাঁর নিজের ভাই ক্যাপ্টেন অমিত ভরদ্বাজকে হারান। এই খালসা সেনাদের ভালোবাসার উষ্ণতায় তখন সুনিতাদিদির চোখে জল। রাখি বাঁধার সময় আপাতদৃষ্টিতে কঠিন সেই মানুষগুলোর চোখেও তখন জল। সেদিন সেই ১১০০০ফুট উচ্চতায় চোখের জলে আর রাখির বাঁধনে দেশ বাঁধা পড়ল ভাই-বোনের এক মধুর  সম্পর্কে। আমরা রাখি পরাতেই দেখি আমাদের সেনা ভাইয়েরা নিজেদের পকেটে হাত ঢোকাচ্ছেন। খালি হাতে রাখি বেঁধে তাঁরা নাকি দেশের বোনেদের ফেরাবেন না। জোড়া হাতে তাদের বোঝালাম যে নিজের বাড়ি, প্রিয়জনের থেকে বহুদূরে বসে তাঁরা যে আমাদের রক্ষা করে চলেছেন নিরলস বিনিদ্র রাত জাগে, এর থেকে বড় উপহার দেশের বোনেদের আর কি বা হতে পারে । 

আমাদের এই অভিযানের হাতে ধরে 'দেশ' কাশ্মীরের উরি, হান্ডওয়ারা আর পাট্টানেও এক হাজার রাখি উপহার দিয়েছে রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের নানান ইউনিটকে।আর প্রাণপণে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছে দেশের রক্ষকদের রক্ষা করতে । না চাইতেই দেশের বোনেরা তাদের সেনাভাইদের থেকে এত নির্ভেজাল ভালোবাসা পেয়ে আজ সত্যিই ধন্য। 

Share this article
click me!