বছরের শুরুটা হয়েছিল CAA বিরোধী আন্দোলন দিয়ে, শেষ পর্বে সরকারের মাথা ব্যাথার কারণ হল অন্নদাতারা

  • বছরের শুরুতে ছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী আন্দোলন
  • উত্তাল হয়ে উঠেছিল দিল্লির শাহিনবাদ 
  • শেষ পর্বে আন্দোলন শুরু করেন কৃষকরা 
  • কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে সরব তারা 

Asianet News Bangla | Published : Dec 14, 2020 5:35 AM IST / Updated: Dec 21 2020, 11:13 AM IST

২০২০ এই বছরের শুরুটা হয়েছিল সরকার বিরোধী আন্দোলন দিয়ে আর বছরটা শেষও হতে চলেছে সরকার বিরোধী আন্দোলন দিয়ে। দুটি আন্দোলনে কেন্দ্রবিন্দুই দেশের জাতীয় রাজধানী দিল্লি।  ২০১৯ সালের ১২  ডিসেম্বর সংসদে পাস হয়েছিল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। লোকসভা নির্বাচনে যা ছিল বিজেপির ইস্তেহারের অন্যতম প্রধান বিষয়। তারপর থেকেই সিএএ-এর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা দেশ। নাগরিকত্ব চলে যেতে পারে- এই আশঙ্কা থেকে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। তবে সিএএ বিরোধী আন্দোলনে নজর কেড়েছিল শাহিনবাগ। 

শাহিনবাগে আন্দোলন মূলত পরিচালিত হয়েছিল মহিলাদের দিয়ে। আন্দোলনের প্রথম সারিতেই ছিলেন সংখ্যালঘু ও গৃহস্থ মহিলারা। পরবর্তীকালে জামিয়া মিলিয়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা আন্দোলনে সামিল হয়। সংসদে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পরই আন্দোলন শুরু হয়ে যায় শাহিনবাগে। ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে এই আন্দোলন চলে ২৪ মার্চ ২০২০। দেশে করোনাভাইরেসার কারণে লকডাউন ঘোষণা করায় নিরাপত্তার কারণে অবস্থান বিক্ষোভে ইতি  টানেনে। কিন্তু তার আগেই এই আন্দোলন নিয়ে মামালা গড়িয়েছে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। 

সিএএ আন্দোলন নিয়ে আরও একবার হিংসার মুখ দেখেছিল দিল্লি। জাতীয় রাজনীর বিস্তীর্ণ এলাকা রণক্ষেত্রের আকার নেয়। কিন্তু তখনও আন্দোলনকারীরা নিজেদের দাবিতে আনড় থেকে আন্দোলন চালিয়ে যান। এই আন্দোলনের মুখ হয়ে যান ৮৩ বছরের বিলকিস বানো। তাঁকে শাহিনবাগ দাদি হিসেবেই চেনে গোটা দেশ। টাইম ম্যাগাজিনে প্রভাবশালীর তালিকায় স্থান পাওয়ায় তাঁর নাম দিল্লির ছোট্ট গলি ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও। শাহিনবাগ আন্দোলন ঘিরে ক্রমশই চাপ বাড়তে থাকে দিল্লিতে বিজেপি সরকারের ওপর। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে মাঝ পথেই থেমে যায় সেই আন্দোলন। তবে আন্দোলনকারীদের নিয়ে এখনও পর্যন্ত চানাপোড়েন অব্যাহত। দিল্লি সন্ত্রাসে নাম জড়িয়ে থাকায় অনেক আন্দোলনকারীকেই জেলবন্দি থাকতে হয়েছে। অধিকাংশের ক্ষেত্রেই ইউএপিএ ধারা দেওয়া হয়েছে। 

গত ২৭ সেপ্টেম্বরে কৃষি বিল পাশ হয় সংসদে তারপর রাষ্ট্রপতি রামথান কোবিন্দ বিলে সই করার পরেই তা আইনে পরিণত হয়। এই কৃষি বিলের প্রতিবাদে প্রথম থেকেই বিক্ষোভ দেখিয়ে আসছিলেন দেশের অধিকাংশ কৃষক। সেই বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ সংঘবদ্ধ রূপ নেয় গত ২৬ নভেম্বর থেকে। কৃষকরা দিল্লি চলো ডাক দিয়ে জাতীয় রাজধানীর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। কৃষি আন্দোলেনের সামনের সারিতে রয়েছে পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরা।

তিনটি কৃষি আইন বাতিলের পাশাপাশি নূন্যতম সহায়ক মূল্য কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে টানা ১৯ দিন ধরে দিল্লি সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান বিক্ষোভে বসেছে রয়েছে দেশের অন্নদাতারা। কারণে দিল্লি সীমানাবর্তী এলাকা বন্ধ করে দিয়েছে দিল্লি পুলিশ। দিল্লি হরিয়ানায়, দিল্লি উত্তর প্রদেশ সীমানা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দিল্লি ঢুকতে না পেরে পাল্টা কৃষকরা দিল্লি অবরোধের ডাক দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকার আন্দোলনকারী কৃষকদের বুরারি ময়দানে বিক্ষোভ দেখানোর প্রস্তাব দেয়। তবে সেই প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যান করে কৃষকরা। একাধিক বৈঠকে সরকারের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করে  তারা। কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পাঁচ বার বৈঠক হয়েছে কৃষকদের। একবার কথা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। তবে কোনও ক্ষেত্রেরই কোনও রকম রফা সূত্র বার হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার এমএসপি নিয়ে আশ্বাস দিয়েও কৃষকরা তা মানতে নারাজ। তারা স্পষ্ট করে জানিয়ে গিয়েছে নতুন তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে হবে। 

 


দিল্লির উপকণ্ঠে চলা কৃষি আন্দোলেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে সংঘবদ্ধ করেছে কৃষকদের। বেশ কয়েক সংগঠন  ও রাজনৈতিক দলগুলি আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এই আন্দোলনেও লেগেছে বিচ্ছন্নাতাবাদী তকমা।খালিস্তানপন্থীরা আন্দোলন হাইজ্যাক করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কখনও আবার অতিবাম বা মাওবাদীরা আন্দোলনে মদত দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই সব দাবি উড়িয়ে দিয়ে আন্দোলনকারীরা জানিয়েছে এটা সম্পূর্ণ কৃষকদের আন্দোলন। আর এই আন্দোলনে প্রতিকী ভারত বনধ থেকে শুরু করে অনশন আন্দোলেনও করেছে। কিন্তু এখনও কোনও সমধান সূত্র বার হয়নি।  

Share this article
click me!