ইমেল আর হোয়াটসঅ্য়াপের যুগে দাঁড়িয়ে যাঁরা ভাবেন চিঠির দিন ফুরিয়েছে, তাঁদের ধারণা ভুল প্রমাণ করলেন উত্তরাখণ্ডের সুন্দরমণি মান্দোলি। ছেলের বিয়ে উপলক্ষ্য়ে ১৫০০ ইনল্য়ান্ড লেটার বিলি করছেন তিনি। ওটাই হল বিয়ের কার্ড।
সে এক সময় ছিল বটে, যখন আমাদের রোজকার জীবনে মিশে থাকত ১৫ পয়সার পোস্টকার্ড আর নীল রঙের ৩৫ পয়সার ইনল্য়ান্ড লেটার। উৎসবে, আনন্দে, শোকে-দুঃখে, একখানা চিঠি বা ইনল্য়ান্ড আমাদের সম্পর্ককে টিকিয়ে রাখত। বিজয়াদশমীর পর বাঙালি পরিবারে চিঠির চল ছিল চোখে পড়ার মতো। আবার গরমের ছুটিতে দুই স্কুল পড়ুয়া একে অপরকে চিঠি লিখে জানাত, কেমন চলছে হাফইয়ার্লি পরীক্ষার প্রস্তুতি। এমনকি, প্রিয়জন বিয়োগের দুঃসংবাদও অনেক সময়ে চিঠির মাধ্য়মেই পেত মানুষ। শুধু তাই নয়। প্রেমপত্র ব্য়াপারটাও কম জনপ্রিয় ছিল না তখন। আর এই চিঠি থেকেই তৈরি হত কালজয়ী সব পত্রসাহিত্য়।
নব্বই দশকের মাঝামাঝি থেকে চিঠির চল কমে যেতে লাগল। আর তার পরের দশকে, প্রেমপত্রের দখল নিল ইমেল আর মোবাইলের মেসেজ। চিঠির ব্য়বহার একেবারেই তলানিতে ঠেকল। আর, তারও পরে, স্মার্ট ফোন, হোয়াটসঅ্য়াপ, মেসেঞ্জার আর ফেসবুক এসে চিঠিকে একেবারে প্রাগৈতিহাসিক করে তুলল।
এই পরিস্থিতিতে যদি-বা কেউ কোনও চিঠি লেখেন, তা নিতান্তই ব্য়বসায়িক বা চাকরির আবেদনপত্র। সেক্ষেত্রে স্পিড পোস্ট বা কুরিয়ারের ওপরেই নির্ভর করতে হয়। ব্য়স। এই প্রয়োজের বাইরে কেউ বড়-একটা চিঠি লিখতে চান না এখন।
এমতাবস্থায় উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট চামোলি গ্রামের এই ছাপোষা মানুষটি যেন যন্ত্রযুগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। ঠিক করলেন, নিজের ছেলের বিয়েতে তিনি ইনল্য়ান্ড লেটার দিয়ে অতিথিদের নেমন্তন্ন করবেন বলে ঠিক করলেন। তবে যেমন ভাবা তেমনটা করা অত সহজ ছিল না। ইনল্য়ান্ডের লেটারের যেহেতু আর চল নেই সেভাবে, তাই পোস্ট অফিসে গিয়ে অত ইনল্য়ান্ড লেটার জোগাড় করাই সহজ হল না সুন্দরমণির পক্ষে। কিন্তু তবুও হাল ছাড়লেন না তিনি। এ পোস্টঅফিস থেকে সে পোস্ট অফিস দৌড়ে অনেক কষ্টে জোগাড় করলেন দেড়হাজার ইনল্য়ান্ড লেটার। আর তারপর শুরু করলেন অতিথি নিমন্ত্রণের কাজ।
আপাতত গ্রামে নিজের বাড়িতে বলে চিঠির-পর-চিঠি লিখে চলেছেন সুন্দরমণি। সামনে পড়ে রয়েছে অজস্র ইনল্য়ান্ড লেটার। এখনও অনেক চিঠি লেখা বাকি। দেড়হাজার চিঠি হাতে লিখতে তো সময় লাগবেই। তাই না?