আড়াইশো বছর আগে ভারতের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ এবং পিছিয়ে থাকা নারীদের শিক্ষার আলোয় এনেছিলেন সাবিত্রীবাঈ ফুলে, তাঁরই সাথে হাত মিলিয়েছিলেন ফতিমা শেখ। দুজনের দিকেই কাদা এবং গোবর ছুড়েছিল সমাজ। গালাগালির পরোয়া না করেই এগিয়ে গিয়েছিলেন দুই নারী।
১৮৩১ সালের ৩ জানুয়ারি মহারাষ্ট্রের সাতারা জেলার নাইগাঁওয়ে জন্মগ্রহণ করেন সাবিত্রীবাই ফুলে। মাত্র ৯ বছর বয়সে জ্যোতিবা ফুলের সাথে তাঁর বিয়ে হয়, কিন্তু জ্যোতিবা ফুলে নিজের স্ত্রীকে পড়াশোনা করায় উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি বাড়িতে তাঁর স্ত্রীকে পড়া এবং লেখা শিখিয়েছিলেন। সাবিত্রী শীঘ্রই মারাঠি এবং ইংরেজি পড়তে এবং লিখতে শিখে গিয়েছিলেন এবং স্কুলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সাবত্রীবাঈ শিক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন এবং এই দম্পতি চেয়েছিলেন সমাজের দলিত ও অনগ্রসর শ্রেণীর মহিলারা যাতে প্রত্যেকে পড়াশোনা করার সুযোগ পান।
জ্যোতিবা এবং সাবিত্রীবাঈ মেয়েদের জন্য একটি স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, সমস্যা হয়েছিল যে, আশেপাশে কোনও নারী শিক্ষক ছিল না। সাবিত্রীবাই মেয়েদের পড়ানোর দায়িত্ব নেন এবং তিনি মিশনারি কলেজ থেকে একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে যোগ দেন। এইভাবে, জ্যোতিবা এবং সাবিত্রীবাই ১৮৪৮ সালে পুনেতে প্রথম মহিলা স্কুলের ভিত্তি স্থাপন করেন। মহিলাদের জন্য একটি স্কুল পরিচালনা করা সহজ কাজ ছিল না। প্রথম দিকে বাবা-মায়েরা তাঁদের মেয়েকে স্কুলে পাঠাতে রাজি ছিলেন না। তাঁরা বিশ্বাস করতেন যে, মেয়েদের শিক্ষিত করা পরিবারের জন্য সর্বনাশ বয়ে আনতে পারে। সাবিত্রীবাঈ নিজের সাহস হারাননি। তিনি মানুষের বাড়িতে গিয়ে শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে তাঁদের বোঝানোর চেষ্টা করতেন।
ফাতিমা শেখ মহারাষ্ট্রের পুনে শহরের একটি সাধারণ মুসলিম পরিবারের সদস্য ছিলেন। তিনি ছিলেন সবিতা ফুলের সমসাময়িক এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রথম শিক্ষিত মহিলা। তিনি তাঁর বড় ভাই উসমান শেখের সঙ্গে থাকতেন। উসমান শেখ জ্যোতিবা ফুলের (মহাত্মা জ্যোতিবা ফুলে নামেও পরিচিত) বাল্যবন্ধু ছিলেন। নারী শিক্ষার ব্যাপারে তাঁর উৎসাহ ছিল। সেই কারণেই ফতিমা শিক্ষিত হয়েছিলেন। সাবিত্রীবাঈয়ের কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ফাতিমা শেখ তাঁর মিশনে যোগ দেন। এই মহিলারা একসাথে একটি গার্লস স্কুল খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
সাবিত্রীবাইয়ের মতো ফাতিমা শেখকেও ‘খারাপ মেয়ে’ বলত সমাজ। গালাগালি দেওয়া থেকে কাদা আর গোবর ছোড়া, কিছুই বাদ রাখেননি সাধারণ মানুষ। কিন্তু, ফতিমা শেখ এবং সাবিত্রীবাঈ নাছোড়বান্দা ছিলেন। নীরবে নির্যাতন সহ্য করে সমাজকে অশিক্ষার অন্ধকার থেকে বের করে আনতে চেয়েছিলেন। অবশেষে ১৮৫০ সালে, দ্য নেটিভ ফিমেল স্কুল নামে পুনেতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়। মেয়েদের শিক্ষা দেওয়া ছাড়াও বাল্য বিবাহ রোধ, বহুজন সম্প্রদায়ের শিক্ষা, পিছিয়ে পড়া শিশুদের জন্য স্কুল, ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক কাজে অভাবনীয় দক্ষতা দেখিয়েছিলেন ভারতের দুই নারী। হিন্দু, মুসলমান ,উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যেই নিয়ে এসেছিলেন জ্ঞানের আলো।
আরও পড়ুন-
Sonali Chowdhury: পরিবারকেই বেশি সময় দিতে চান সোনালী চৌধুরী, এবার আসছেন গানের অনুষ্ঠানের সঞ্চালক হয়ে
Bengali Serial: খুলে পড়ছে পরনের শার্ট, 'নিম ফুলের মধু' সিরিয়ালের মানসী সেনগুপ্তর এ কি দশা!
স্বপ্নে গোপাল ঠাকুরের দর্শন পেলে কী হয়? জন্মাষ্টমীর দিন জেনে নিন গূঢ় রহস্য