লাদাখ ও কাশ্মীরের তাপমাত্রা দিল্লি-মুম্বাই এবং উত্তর ভারতের উত্তপ্ত রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। গরমের কারণে কিছু জায়গায় স্কুল বন্ধ সেই সঙ্গে লেহে ফ্লাইটও বন্ধ হয়েছে। খুব গরম হলে কেন ফ্লাইট বাতিল করা হয় তা জেনে নিন।
উত্তর ভারতে যখন বর্ষাকাল চলছে, জম্মু-কাশ্মীর এবং লেহতে প্রচণ্ড গরম। গত কয়েক বছরের রেকর্ড ভেঙেছে তাপমাত্রা। লেহ বিমানবন্দরে গরমের কারণে ৪ টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। লেহ-তে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি এই ঘটনা ঘটে। আসুন জানি কেন গ্রীষ্মে ফ্লাইট বন্ধ করা হয় এবং এই তাপমাত্রায় কেন অন্য এয়ারপোর্টের ফ্লাইট বাতিল করা হয় না।
এবারের প্রচণ্ড গরম কাশ্মীর উপত্যকায় ১৩২ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, লাদাখ ও কাশ্মীরের তাপমাত্রা দিল্লি-মুম্বাই এবং উত্তর ভারতের উত্তপ্ত রাজ্যের তুলনায় অনেক বেশি। গরমের কারণে কিছু জায়গায় স্কুল বন্ধ সেই সঙ্গে লেহে ফ্লাইটও বন্ধ হয়েছে। খুব গরম হলে কেন ফ্লাইট বাতিল করা হয় তা জেনে নিন।
ভারী বৃষ্টি বা তুষারপাতের সময় প্রায়ই ফ্লাইটগুলি টেক অফে অসুবিধায় পড়তে হয়। কিন্তু লেহ-তে গরমের কারণে ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে। গত রবিবার লেহ বিমানবন্দরে ৪টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। যেখানে এর আগে শনিবার দিল্লি থেকে একটি ফ্লাইট লেহ বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেনি। বর্তমানে লেহ-তে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছেছে, যা এই এলাকার জন্য অস্বাভাবিকভাবে গরম।
প্রচন্ড গরমে প্লেন টেক অফ করতে পারে না কেন?
বিমান টেক অফের সময় পাইলটকে আবহাওয়ার মতো তাপমাত্রা ও বাতাসের চাপের কথা মাথায় রাখতে হয়। যখনই এই কারণগুলির মধ্যে যে কোনও একটি চরম পর্যায়ে চলে যায়, তখন বিমানটি বিলম্বিত হতে পারে বা এমনকি পুরো ফ্লাইটটি বাতিল হতে পারে। টেক-অফের সময়, পাইলটকে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে লড়াই করে ভারী বিমানটিকে বাতাসে নিয়ে যেতে হয়। মাধ্যাকর্ষণকে পরাস্ত করতে এবং বিমানটিকে উপরের দিকে ঠেলে দিতে বাতাসের সাহায্য নেওয়া হয়। তার মানে, বিমানের ওজন যত বেশি হবে, পাইলটকে উড়তে তত বেশি বাতাসের চাপের প্রয়োজন হবে। কিন্তু গরম তাপমাত্রায় বিমান এই থ্রাস্ট পেতে পারে না।আসলে, বাতাস যত বেশি গরম হয়, ততই তা প্রসারিত হয়। বাতাসের প্রসারণ বিমানটিকে উপরের দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বায়ুর অণুর সংখ্যা হ্রাস করে। এই কারণে ইঞ্জিন প্রয়োজনীয় থ্রাস্ট পায় না।
এই তাপমাত্রায় কেন দিল্লির ফ্লাইট বাতিল করা হয় না?
লেহ-তে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচে। যেখানে দিল্লিতে তাপমাত্রা ৪০ পেরিয়ে গেলেও প্লেন টেক অফ করে। এমন কেন? আসলে, লেহ বিমানবন্দর ১১ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখানে বাতাসে আর্দ্রতা নেই। অক্সিজেনও কম এবং শুষ্ক আবহাওয়া রয়েছে। তাই প্লেন থ্রাস্ট পেতে পারে না।
অন্যদিকে, দিল্লির আবহাওয়া লেহ থেকে একেবারেই আলাদা। আর্দ্রতার কারণে এখানকার বাতাস ভারী। তাই ফ্লাইট টেক অফ করতে কোনও সমস্যা নেই।
যদি শুষ্ক আবহাওয়ায় ফ্লাইটে যেতে হয়-
প্লেন ওড়ানোর সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় জড়িত। যদি বাতাস থেকে থ্রাস্ট পাওয়া না যায়, তাহলে বিমানটিকে বাতাসে নিয়ে যাওয়ার জন্য আরেকটি ফ্যাক্টর ব্যবহার করা হয়। সিএনএন রিপোর্টে, ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পল উইলিয়ামসকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে যে প্রতি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য, বিমানগুলি ১ শতাংশ কম লিফট পায়।
এটি মোকাবেলা করার জন্য, বিমানটিকে টেক অফের সময় গতি বাড়াতে হবে। কিন্তু এর জন্য আবার দীর্ঘ রানওয়ের প্রয়োজন হবে। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি বিমানের ২০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টেক অফের জন্য ৬৫০০ ফুটের রানওয়ের প্রয়োজন হয়, তবে একই বিমানের ৪০ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় টেক অফের জন্য ৮২০০ ফুটের রানওয়ে প্রয়োজন।
যদি ছোট রানওয়ে থেকে ফ্লাইট টেক অফ করতে হয়, তাহলে বিমানের ওজন কমাতে হবে। এতে এয়ারলাইন্সগুলো সাধারণত লাগেজ বা যাত্রী সরিয়ে ওজন কমায়, যার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয় এবং ক্ষতির মুখে পড়তে হয় বিমান সংস্থাকে।