ভারত বাংলাদেশের ইলিশ-পেঁয়াজ রাজনীতি, কী সংকেত বয়ে আনছে আগামীর জন্য

  • এপার থেকে যায় পেঁয়াজ
  • ওপার থেকে আসে ইলিশ 
  • পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করেছে ভারত
  • এখনও পর্যন্ত ইলিশ রফতানিতে ছেদ পড়েনি

  
 

Tapan Malik | Published : Sep 20, 2020 7:30 AM IST

এপারে ইলিশ আসা শুরু আর ওপারে পেঁয়াজ যাওয়া বন্ধ। অনেকেই ভেবেছিলেন ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার বদলা হিসেবে বাংলাদেশ ইলিশ রফতানি বন্ধ করে দেবে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে হয়ত ইটের বদলে পাটকেল ব্যবহার শিষ্টাচারবহির্ভূত। বাংলাদেশ কখনও ভারতের সঙ্গে এমন ব্যবহার করেছে বলেও মনে হয়না।
তবে গত  সোমবার থেকে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি যে ট্রাকগুলো পেঁয়াজ আমদানি করার জন্য বেনাপোল সীমান্তে অপেক্ষা করছিল সেগুলোও বাংলাদেশে না ঢুকে মুখ ঘুরিয়ে ফিরে আসে। 
এই ঘটনার দু’দিন আগে বাংলাদেশ ঘোষণা করেছ শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ ভারতে দেড় হাজার টন ইলিশ মাছ রফতানি করবে। আর যেদিন থেকে ভারত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করল সেদিন প্রথম চালানে পঞ্চাশ টন ইলিশ বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে এসেছে। 
কোনও আচমকা সিদ্ধান্ত নয়, বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার পিছনে ভারতের দিক থেকে রাজনৈতিক কারণ যথেষ্ট। এমনিতে এবার উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভারী বর্ষণের কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের বেশিরভাগ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় এসব অঞ্চলে। দক্ষিণ ভারতেও পরিমানে কম হয়। সেখানেও বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।  যার ফলে বাংলাদেশে রাতারাতি পেঁয়াজ আমদানিকারকরা পেঁয়াজ গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। সরকার যখন বিকল্প উৎস থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আনা শুরু করে তখন আবার পেঁয়াজের দাম রাতারাতি পড়তে শুরু করে। অনেক আড়তদারের গুদামজাত করা পেঁয়াজ গুদামেই নষ্ট হয়।


বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানানো হয়েছে। দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ ইমরান ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের আকস্মিক সিদ্ধান্তে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুতপ্ত। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 
তবে ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর দেশের চাষিদের মধ্যে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, পেঁয়াজ রফতানি না করলে তাদের বিরাট লোকসান। অন্যদিকে মোদি সরকার বিহার ভোটের আগে পেঁয়াজের দাম নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ।   
অর্থাৎ রাজনৈতিক বিচারে ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র বাংলাদেশকে আহত করেনি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সে দেশের কৃষকেরাও। ক্ষোভ জানিয়েছেন বিরোধী দলের নেতারাও। কংগ্রেসের শারদ পাওয়ার বলেছেন, সরকার সিদ্ধান্ত না বদলালে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের ভাবমূর্তি যেমন নষ্ট হবে, তেমনি পাকিস্তানকে লাভবান করবে।
বোঝাই যাচ্ছে ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্ত পুরোপুরি রাজনৈতিক। অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ছিল। সামনে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি সরকার চাইছে বিরোধীরা যাতে পেঁয়াজকে ইস্যু করে ভোটের সুবিধা না নিতে পারে। আর এই ভাবনা থেকেই সরকার বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। যদিও কৃষকেরা রপ্তানির পক্ষে। গত বছরও একই রকম ঘটনা ঘটে। সে সময় ভারত প্রথমে রপ্তানি শুল্ক বাড়িয়ে দিয়েছিল। পরে রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। 


পেঁয়াজ, তেল, আটার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম ভারতীয় রাজনীতিতে খুবই স্পর্শকাতর এবং  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রুচির শর্মার দ্য রাইজ অ্যান্ড ফল অফ নেশনস-এ ভারতের রাজনীতিতে পেঁয়াজসহ অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দামের প্রভাব নিয়ে তিনি লিখেছেন, নুন ও পেঁয়াজের মতো দ্রব্য ভারতীয়দের জাতীয় পরিচয়ের অন্যতম স্তম্ভ। ভারতীয়দের খাওয়ার টেবিল এসবের উপস্থিতি ছাড়া চিন্তাই করা যায় না। 
প্রসঙ্গত; ২০১০ সালে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পেলে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ প্রয়োজন মেটাতে পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। এই ঘটনা বোঝা যায় জাতীয় স্বার্থে অনেক সময় শত্রু মিত্রের ব্যবধান হটাৎ কমে যায়। উল্লেখ্য; গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করার পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে দিল্লি গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি ভারতের আচমকা পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করা নিয়ে একটি ছোট্ট কথা বলেছিলেন, তিনি নিজে এখন আর রান্নায় পেঁয়াজ ব্যবহার করেন না। তাঁর এই বক্তব্য ছোট হতে পারে তবে খোদ ভারতের রাজধানীতে বসে এই কথা বলার মধ্যে এক ধরনের কূটনীতি আছে, যা ভারতকে বিব্রত করেছিল।

Share this article
click me!