২০১৭ সালে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল পাকিস্তানি সামরিক আদালত। প্রক্রিয়াগত ত্রুটির কারনে আন্তর্জাতিক আদালতে সেই ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে আবেদন জানায় ভারত। একরাশ উৎকণ্ঠাকে সঙ্গী করে একের পর এক বিনিদ্র রাত কাটিয়েছে সীমান্তের এপারে থাকা কুলভূষণের নিকট পরিজনেরা। অবশেষে বুধবার আন্তর্জাতিক আদালত রায় ঘোষণা করতে চলেছে বহুল চর্চিত কুলভূষণ যাদব মামলার। বর্তমানে পাকিস্তানি সামরিক জেলে বন্দী রয়েছেন কুলভূষণ।
পাকিস্তানের দাবি সন্ত্রাসদীর্ণ বালুচিস্তানে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে গুপ্তচর-বৃত্তি করতে গিয়ে পাক-সেনার হাতে ২০১৬ র মার্চে গ্রেফতার হন কুলভূষণ। ভারতের পাল্টা দাবি নৌবাহিনীর প্রাক্তন অফিসার কুলভূষণ ব্যক্তিগত কাজে ইরানের ছাবাহার বন্দরে উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে তাকে অপহরণ করে পাকিস্তানি সেনা। সেই শুরু। ভারতের তরফ থেকে বহুবার আবেদন জানানো হলেও পাকিস্তানে কর্মরত ভারতীয় কূটনীতিক দের কূলভূষণের ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি পাকিস্তানি প্রশাসন। এমনকী বারংবার আবেদন জানানো হলেও সাক্ষাতের অনুমতি পায়নি তার মা। পাকিস্তানের দাবি ভারত বারবার চেষ্টা চালিয়েছে কুলভূষণের কাছ থেকে গোপন তথ্য পাওয়ার, যা সে গুপ্তচর বৃত্তি করে সংগ্রহ করেছে। সেই তথ্যের হস্তান্তর আটকানোর জন্যই বাধ্য হয়েই তারা তাকে ভারতীয় দূতাবাসের কোনও কর্মীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। এরকম পরিস্থিতিতে সামরিক আদালতে বিচার শেষে ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে তার ফাঁসির আদেশ হয়। বিচার প্রক্রিয়ায় একাধিক অসঙ্গতি থাকার জন্য ভারত তৎক্ষণাৎ আন্তর্জাতিক আদালতে আবেদন জানায় ফাঁসির আদেশ বাতিল করার জন্য। এবং আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার প্রক্রিয়া চলার দরুন, পাকিস্তানও বাধ্য হয় কুলভূষণের ফাঁসির আদেশকে সাময়িক ভাবে রদ করতে। আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পাকিস্তান বাধ্য হয় কূলভূষণের সঙ্গে তার মা এবং স্ত্রীকে দেখা করার অনুমতি দিতে। কিন্তু সেক্ষেত্রেও নয়া দিল্লির তরফে অভিযোগ করা হয় যে তাদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করেছে পাকিস্তানি আধিকারিকরা।
এরকম পরিস্থিতি তে প্রায় দুই বছর ধরে শুনানি চলার পর বুধবার আন্তর্জাতিক আদালতে রায় ঘোষণা হবে কুলভূষণ মামলার। আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক আদালতে হার অবশ্যম্ভাবী। ফাঁসির আদেশ বহাল থাকার কোন প্রশ্নই ওঠে না। এখন দেখার সত্যিই যদি রায় কুলভূষণ এবং ভারতের পক্ষে যায়, তাহলে পাকিস্তানের তরফ থেকে কিরকম মনোভাব দেখানো হয়।