গত ২৭ বছর ধরে শুধু কলা আর চা খেয়েই বেঁচে আছেন মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরের উর্মিলা চতুর্বেদী। ১৯৯২ সালে তিনি মানত করেছিলেন, অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি উপবাসেই থাকবেন। বয়স এখন ৮৭। শরীর অনেকটাই দুর্বল হয়ে গিয়েছে, কিন্তু জেদ বা মনে জোর, এখনও আগের মতোই। গত শনিবার সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে রাম মন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত হওয়াতে এখন বলছেন মনে শান্তি ফিরে পেয়েছেন।
জব্বলপুরের বিজয়নগরে থাকেন উর্মিলা চতুর্বেদী। ১৯৯২ সালে করসেবকদের হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর ভারতের বিভিন্ন জায়গার মতো মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরেও ছড়িয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার আগুন। অযোধ্যাতে ছড়িয়ে পড়লে অষ্টমজগতের খাবার গ্রহণ না করার শপথ ছিল। উর্মিলা দেবী জানিয়েছেন, সেই সময় তিনি চোখের সামনে হিন্দু এবং মুসলিম ভাইদের একে অপরের রক্ত ঝরাতে দেখেছেন।
ওই ঘটনা তাঁর মনে এতটাই আঘাত করেছিল, যে তার থেকেই তিনি সিদ্ধান্ত নেন এই মন্দির-মসজিদ বিতর্কের কোনও সুস্পষ্ট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তিনি আর খাবার মুখে তুলবেন না। সেই থেকে এখনও পর্যন্ত ওই চা আর কলা খেয়েই আছেন তিনি। এর জন্য তাঁকে নিয়ে অনেকেই মজা করেছে, কেউ কেউ এই উপবাস শেষ করার জন্য চাপও দিয়েছে। তার মধ্যেও কয়েকজন তাঁর জেদ ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করেছে।
অবশেষে গত শনিবার (৯ নভেম্বর) মনে শান্তি পেয়েছেন এই ৮৭ বছরের বৃদ্ধা। গত ২৭ বছর ধরে তাঁর জীবনের একমাত্র আকাঙ্খা ছিল অযোধ্যায় রাম মন্দির হোক। হিন্দু মুসলিম সকলের গ্রহনযোগ্য একটা সমাধান বের হোক। সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে বলে জানিয়েছেন উর্মিলা দেবী।
তবে এখনও উপবাস ভঙ্গ করেননি তিনি। তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল থেকেই টেলিভিশনে চোখ সাঁটিয়ে বসেছিলেন উর্মিলা। সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত রায় শোনানোর পর তিনি প্রথমেই তাঁদের ঘরের রাম মূর্তির সামনে গিয়ে সাষ্টাঙ্গে প্রণাম করেছিলেন। তারপর তাঁর পরিজনরা তাঁকে উপবাস ভাঙার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু উর্মিলা দেবী জানিয়ে দিয়েছেন, মন্দির নির্মাণ হলে তারপর তিনি অযোধ্যায় যাবেন। মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত রামলালার আশীর্বাদ নিলে তবে তাঁর এই কঠোর তপস্যা শেষ হবে।