গত ১৫ জুন গালওয়ান উপত্যকায় চিন ও ভারতীয় সেনার সংঘর্ষর পর পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক বৈঠক হলেও উত্তেজনা এখনও রয়েছে সীমান্তে। ভারতের উপর চিনের এই হামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেও আসছে একের পর এক প্রতিক্রিয়া। শুধু ভারত নিয়ে চিনের বিরুদ্ধে একাধিক দেশের অভিযোগ রয়েছে তাদের আগ্রাসি মনোভাবের জন্য। আর এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েই এবার আকসাই চিনকে চিনা দখলমুক্ত করতে ঝাপাচ্ছে ভারত।
১৯৬২ সালে চিনের আগ্রাসনের শিকার হয়েছিল ভারতীয় ভূখন্ডে থাকা আকসাই চিন। এই ৩৮ হাজার বর্গ কিমি এলাকাটি একসময় লাদাখের অন্তর্গত ছিল। কিন্তু চিনের দাবী, এই অংশটি তাঁদের দেশের জিনজিয়াং প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত। এই নিয়েই দুই দেশের বিরোধ শুরু হয়।
তবে ১৯৬২ সালে যখন চিন লাদাখের এই অংশটি দখলে ঝাঁপায় সেই সময় ওই জায়গায় ভারতীয় সেনা বাহিনীর একটি মাত্র ব্রিগেড পাহারার দায়িত্বে ছিল, যেখানে মাত্র ২ হাজার জওয়ান ছিলেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলেছে। সেই লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের পাল্টা প্রায় ৪৫ হাজার সেনা মোতায়েন করেছে ভারত।
গত মে মাসের শুরু থেকেই লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনা বাড়াতে শুরু করেছিল চিন। পরিস্থিতি বুঝে ভারত কিন্তু সমরসজ্জা শুরু করে দেয়। তাই বর্তমানে এখন ৪৫ হাজার ভারতীয় জওয়ান মোতায়েন রয়েছে লাদাখে। ভারতীয় সেনার তিন বিভাগকেই মোতায়েন করা হয়েছে এই দুর্গম এলাকায়। শুধু তাই নয়, সবচেয়ে শক্তিসালী টি-৯০ ভীষ্ম ট্যাঙ্কও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে পূর্ব লাদাখে। তাই আগামী দিনে ভারত আকসাই চিন দখল মুক্ত করতে চাইলে চিনকে কড়া টক্করের মুখে পড়তে হবে। কারন, দুর্গম পাহাড়ি এই এলাকায় অনুপাত হল ১:১২। অর্থাৎ ভারতের এই পরিমান বাহিনীর মোকাবিলায় চিনের প্রায় ৫ লক্ষ সেনার প্রয়োজন হবে।
গত কয়েক মাস ধরে একাধিক পার্বত্য এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর উত্তেজনা তৈরি করে চলেছে চিন। বারেবারে সীমান্ত টপকে নিয়ন্ত্রণরেখায় এপারে ভারতের অংশ দখলের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে লাল ফৌজ। তবে ভারতও যে এবার মাথা নোয়াতে রাজি নয় তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে চিনকে।
সমুদ্রতল থেকে প্রায় ১৭,০০০ ফুট উপরে অবস্থিত আকসাই চিন। কাশ্মীরের প্রায় ২০% এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই এলাকা । ১৯৪৭ সালের পর থেকেই চিন আকসাই চিনে অনুপ্রবেশ শুরু করে। ১৯৫৭ সালে চিন রাস্তা তৈরি করেছিল। ১৯৫৮ সালে চিন তার মানচিত্রে আকসাই চিনকে দেখিয়েছিল। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পরে চিন আকসাই চিনের দখল নেয়। ১৯৬৩ সালে পাকিস্তান আকসাই চিনকে চিনের হাতে তুলে দেয়।
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট লাদাখকে জম্মু-কাশ্মীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে, পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা দেয় কেন্দ্র। তখন নয়াদিল্লির এই পদক্ষেপের তীব্র আপত্তি তুলেছিল বেজিং। চিনের উদ্বেগের অবশ্য যথেষ্ট কারণও ছিল। কারণ, তিব্বত থেকে জিনজিয়াং প্রদেশে যাওয়ার মসৃণ পথ এই আকসাই। যদি, এই রুটটি কোনও ভাবে অবরুদ্ধ করা হয়, তবে চিনকে কারাকোরাম হয়ে বিকল্প পথে পৌঁছতে হবে।
এখন ভারত যদি আকসাই চিনের দিকে এগোয়, জিনজিয়াং প্রদেশের উপর থেকে চিনের আধিপত্য হারিয়ে ফেলার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এই জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের উপর চিনা সরকারের অত্যাচার গোটা বিশ্বের কাছে অজানা নয়।