পিছনে পড়ল ১৪০ টি দেশের ১২,০০০ এরও বেশি শিক্ষক
সেরার শিরোপা জিতে নিলেন মহারাষ্টের রঞ্জিতসিং দিশাল
ভারতে নারী শিক্ষার প্রসার ও কিউআর কোড ভিত্তিক বইয়ের বিপ্লব ঘটিয়েছেন তিনি
পুরস্কারের ১০ লক্ষ ডলার অর্থ তিনি ভাগ করে নিচ্ছেন, সেরা দসে থাকা অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে
১৪০ টি দেশের ১২,০০০ এরও বেশি শিক্ষক, তাদের মধ্য থেকেই সেরার শিরোপা জিতে নিলেন মহারাষ্টের শিক্ষক রঞ্জিতসিং দিশাল। ভারতে নারী শিক্ষার প্রসার ও কিউআর কোড ভিত্তিক বইয়ের বিপ্লব ঘটানোর জন্যই তাঁকে এই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এই সম্মান জেতার পর দিশাল বলেছেন, 'কোভিড-১৯ মহামারি দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের শিক্ষার অবস্থা কী। তবে এই কঠিন সময়ে শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর যাতে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, তা নিশ্চিত করতে সর্বোত্তম চেষ্টা করছেন। একটি ভাল শিক্ষা।'
এই পুরস্কার জেতায় সম্মান অর্থ হিসাবে তিনি ১০ লক্ষ মার্কিন ডলার পাচ্ছেন। তবে তার অর্ধেকটা তিনি দিয়ে দিচ্ছেন তাঁর সঙ্গে বিশ্বের সেরা দশে নির্বাচিত হওয়া অন্যান্য শিক্ষকদের। তিনি বলেছেন, 'শিক্ষকরা চক এবং চ্যালেঞ্জের মিশ্রণে ছাত্রছাত্রীদের জীবন পাল্টে দেন। তারা সর্বদা দান এবং ভাগ করে নেওয়ার প্রতি বিশ্বাস রাখেন এবং তাই, আমার পুরষ্কারের টাকার ৫০ শতাংশ অন্যান্য শীর্ষ দশ ফাইনালিস্টদের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করে দিতে পেরে অমি খুব খুশি I আমার বিশ্বাস আমরা একসঙ্গে এই বিশ্বকে পরিবর্তন করতে পারি।
২০০৯ সালে মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার পরিতোয়াদি গ্রামের জেলা পরিষদ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতে এসেছিলেন ৩১ বছরের দিশাল। একটি গোশালা আর একটি স্টোররুমের মধ্যে অবস্থিত স্কুলবাড়িটির তখন একেবারে জরাজীর্ণ অবস্থা। সেখান থেকেই লড়াই শুরু করেছিলেন এই শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের জন্য ক্লাসের পাঠ্যপুস্তকগুলি তিনি তাদের মাতৃভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। সেইসঙ্গে, শিক্ষার্থীদের হাতে অডিও কবিতা, ভিডিও বক্তৃতা, গল্প এবং অন্যান্য বিষয় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তিনি কিউআর কোড দেওয়া শুরু করেছিলেন। এর প্রভাবে স্কুলে মেয়েদের উপস্থিতি একশো শতংশ হয়ে গিয়েছিল। গ্রামে আর কোনও কিশোরীর বিবাহ হয়নি।
মহারাষ্ট্রে দিশালের স্কুলেই প্রথম কিউআর কোড চালু হয়েছিল। তিনিই রাজ্য সরকারের কাছে কিউআর কোড চালু করার বিষয়ে প্রস্তাব জমা দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে সরকার সমস্ত ক্লাসের জন্য কিউআর কোড দেওয়া পাঠ্যপুস্তক প্রবর্তন করা শুরু করেছিলে। ২০১৮ সালে, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক ঘোষণা করেছিল, জাতীয় শিক্ষা কাউন্সিল-এর সমস্ত পাঠ্যপুস্তকে কিউআর কোড এম্বেড করা থাকবে।
গ্লোবাল টিটার প্রাইজ-এর প্রতিষ্ঠাতা সানি ভার্কি জানিয়েছেন, 'শিক্ষকরা সমাজে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা তুলে ধরতেই 'গ্লোবাল টিচার প্রাইজ' প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। বিশ্বজুড়ে তরুণদের জীবনে শিক্ষকদের ব্যতিক্রমী কাজ আরও বাড়ানোর প্রত্যাশা করে পুরষ্কারটি। এই বছর, আমরা আগের তুলনায় আরও বেশি করে, শিক্ষকদের বিশ্বজুড়ে তরুণদের শেখানোর জন্য বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে যেতে দেখেছি। তাঁদের সৃজনশীলতা, সহানুভূতি এবং প্রতিটি শিশুর একটি উন্নত মানের শিক্ষার অধিকার পূরণের সংকল্পের জন্য সর্বত্র শিক্ষকদের প্রশংসা করা উচিত'।