মণিপুরের পুলিশ কমান্ডোদের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সমর্থন করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ব্যাটালিয়ন ও থানা থেকে দুই হাজারের বেশি প্রাণঘাতী অস্ত্র লুট করা হয়। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে মণিপুরে মৌলবাদের মাধ্যমে নতুন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে।
মণিপুরের হিংসার ঘটনার সুযোগে রাজ্যে কি অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে চিন! এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভারতীয় গোয়েন্দারা। ফলে ঘটনা খতিয়ে দেখতে মণিপুরে আসতে হয় সেনাপ্রধান মনোজ পান্ডেকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পাশাপাশি সেখানকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। নিরাপত্তা সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্র তিনটি পয়েন্টে মণিপুরের ভেতরের গল্পটি বিস্ময়কর। সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস এবং সিএপিএফ আসার পরেও কীভাবে সেখানে মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলির 'বেসরকারি সরকার' অব্যাহত ছিল। যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হবে সেখানে ব্যক্তিগত দলগুলো যানবাহন চেক করছিল। মণিপুরের পুলিশ কমান্ডোদের বিরুদ্ধে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সমর্থন করার অভিযোগ আনা হয়েছিল। ব্যাটালিয়ন ও থানা থেকে দুই হাজারের বেশি প্রাণঘাতী অস্ত্র লুট করা হয়। মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে মণিপুরে মৌলবাদের মাধ্যমে নতুন উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে।
প্রথম পয়েন্ট:
মণিপুরে উপস্থিত একজন সিএপিএফ অফিসার বলেছেন, কোনো একক কারণের জন্য হিংসার ঘটনা শুরু হয়েছে, এমন বলা যাবে না। ৩ মে থেকে মণিপুরে হিংসা শুরু হয়। সেনা ও কেন্দ্রীয় আধাসামরিক বাহিনী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেখানে পৌঁছেছে। তা সত্ত্বেও ইম্ফল এবং পাহাড়ের কিছু অংশে প্রচণ্ড হিংসা হয়েছে। মণিপুরে নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি সত্ত্বেও, কুকি এবং মেইতি সম্প্রদায়ের লোকেরা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছিল। উভয় স্থানে ব্যক্তিগত নাকা স্থাপন করা হয়েছে। অর্থাৎ যে কাজটি পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনী করছে, সেই দায়িত্ব পালন করছিল কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ বা মৌলবাদী গোষ্ঠীর লোকেরা। যানবাহন থামিয়ে বিপক্ষ দলের লোকজন তাতে চড়ছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চেক করা হচ্ছে মানুষের পরিচয়পত্র। এ ধরনের অনেক স্থানে সংঘর্ষ হয় এবং যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মায়ানমার সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে এ ধরনের অনেক বেসরকারি নাকা বসানো হয়েছে। ইম্ফলের রাস্তা অবরোধ করে নিরাপত্তা বাহিনীকে এগোতে দেয়নি দুর্বৃত্তরা। এর জেরে মণিপুরের পাহাড় ও সমতল ভূমিতে সহিংসতা বেড়ে যায়।
দ্বিতীয় পয়েন্ট:
সহিংসতা শুরু হওয়ার পর প্রায় দেড় ডজন থানা থেকে অস্ত্র লুট করে দুর্বৃত্তরা। মনে রাখবেন সেই সময় রাজ্যে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী উপস্থিত ছিল। প্রাথমিকভাবে লুট হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা ছিল ৩৭৫টি। সিআরপিএফ ক্যাম্পও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে মৃত্যু হল এক CRPF CoBRA জওয়ানের। সেনা ও অফিসারদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। সিআরপিএফের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' ফিলিপের পুরো বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। চুড়াচাঁদপুরে রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের দুই জওয়ান আহত হয়েছেন। সেখানে কয়েক ডজন এনকাউন্টার হয়েছিল, যেখানে দুর্বৃত্তরা লুট করা অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। সেটন এবং তোরবুং এলাকায় নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে একই অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। দুই দিন আগে খঙ্গাবোকে মণিপুর পুলিশের আইআরবি থেকে ৭০টি অস্ত্র, ৬ষ্ঠ আইআরবি সদর দপ্তর থেকে ৩০০ অস্ত্র এবং পাহাড়ের টেংগোপোল থানা থেকে প্রায় আড়াইশ অস্ত্র লুট করা হয়। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় এক হাজারের বেশি অস্ত্র পৌঁছে গেছে দুর্বৃত্তদের হাতে। মেইতেই সম্প্রদায় কুকির বিরুদ্ধে অস্ত্র লুট করার অভিযোগ করলে, কুকি সম্প্রদায় এর জন্য মেইতিকেই দায়ী করে।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সেনাবাহিনী, আসাম রাইফেলস এবং সিএপিএফ-এর উপস্থিতিতে ২৭ দিন পরেও মণিপুরে হিংসা থামেনি, কেন! তাহলে কোন বহিরাগত শক্তি এই হিংসার ঘটনায় ইন্ধন যোগাচ্ছে, সেই বিষয়ে এবার ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন ভারতীয় গোয়েন্দারা।