জম্মু ও কাশ্মীর - শান্তি স্থাপনের পথে প্রথম পদক্ষেপ

দীর্ঘ দিন ধরে জম্মু ও কাশ্মীরে শান্তি নেই

গত ২৪ জুন সেখানকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী

এবার কি শান্তির পথে ফিরবে উপত্যকা

লিখলেন শ্রীনগরের ১৫ কর্পস-এর প্রাক্তন কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন

গত কয়েক প্রজন্ম ধরেই জম্মু ও কাশ্মীর এবং শান্তি একেবরেই সমার্থক নয়। আর তাই কেউ এই অঞ্চলে

শান্তির কথা বললেই লোকে অবাক হয়ে যায়। গত ২৪ জুন জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের বিষয়ে

Latest Videos

আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকের কোনও অ্যাজেন্ডা ছিল না। তবে, ঐকমত্যের মাধ্যমে

শান্তিবৃদ্ধি ও আলোচনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য়েই তা ডাকা হয়েছিল বলে মনে হয়। কেন্দ্রশাসিত

অঞ্চলের দুই বিভাগেরই মূলধারার রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন কয়েক

মাস আগে পর্যন্ত গৃহবন্দি ছিলেন। গণতন্ত্র এবং রাজনীতির সৌন্দর্য এটাই যে রাজনৈতিকভাবে প্রাসঙ্গিক

থাকতে গেলে সব ভুলে এগিয়ে যেতেই হয়।

এই অঞ্চলের পরিস্থিতি অনুসরণ করলেই বোঝা যায় ২০১৯-এর ৫ অগাস্ট থেকে ভারতের অংশ হিসাবে জম্মু

এবং কাশ্মীর-এর পূর্ণ এবং চূড়ান্ত সংহতকরণ নিশ্চিত করাটাই ভারত সরকারের স্পষ্ট অ্যাজেন্ডা ছিল। ৩৭০

ধারা এবং সম্পর্কিত সাংবিধানিক বিধানগুলি বাতিল করা হয়েছিল। রাজ্যটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে

বিভক্ত করা হয়েছিল যেখানে একটি অংশ ছিল জম্মু এবং কাশ্মীর এবং অন্যটি ছিল লাদাখ। একের পর এক

সক্রিয় উদ্যোগের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদেরর ডানা ছেঁটে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। স্থানীয়

যুবদের সন্ত্রাসবাদী দলে নিয়োগের পরিমাণ কমেছে।

প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি হ্রাসের সাথে সাথে নাগরিকদের কাছে সত্যি সত্যি পৌঁছানোর জন্য

কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির প্রশাসন কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছে। এর ফলে জনগণের মধ্যে উন্নত ভবিষ্যতের

নতুন প্রত্যাশা দেখা দিলেও, তাদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতার মনোভাব কোনওভাবেই কাটানো যায়নি।

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অনেকে বসে গিয়েছিল। সুরক্ষা বাহিনীর কার্যকরভাবে ভাবে চাপ বজায় রাখায় যাঁরা রাস্তায়

সক্রিয় আন্দোলনে জড়িত ছিল তারাও পিছু হটে। বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদেরও আটক করা হয়েছিল, তাঁরা

আজও বন্দিই আছেন। বেশিরভাগ সময়ই ইন্টারনেট মোবাইল যোগাযোগ স্থগিত রাখা হয়েছিল। অনেক

মানবাধিকারকর্মী রেগে গেলেও, এতে করে এলওসি জুড়ে প্রক্সি মাস্টারদের সঙ্গে সমন্বয় সাধন, প্রশিক্ষণ,

এবং বাহ্যিক যোগাযোগ বন্ধ রাখা নিশ্চিত করা গিয়েছিল।

জেলা উন্নয়ন কাউন্সিলের নির্বাচন করা সত্ত্বেও, এখনও বিধানসভা নির্বাচন করা এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল

থেকে আবার রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া যায়নি দুটি কারণে। প্রথম কারণ কোভিড মহামারির যন্ত্রণা এবং

দ্বিতীয়টি নতুন সাংবিধানিক মর্যাদায় পরিবর্তনের কারণে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক মেজাজ এবং বাস্তবতা।

জম্মু ও কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি সম্পর্কে মূল্যায়ন এবং নতুন রাজনৈতিক উদ্যোগের গুরুতর

প্রয়োজনের কথা বলছেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে, সম্ভবত বর্তমান আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক সুরক্ষা

পরিবেশও জম্মু এবং কাশ্মীরকে আরও স্থিতিশীল করার জন্য উপযুক্ত সময়।

আফগানিস্তান থেকে বাহিনী প্রত্যাহার করতে বদ্ধপরিকর আমেরিকা আর তালিবানরাও কাবুলের দরজায়

কড়া নাড়ছে। এই অবস্থায় পাকিস্তানের নজর মূলত তাদের পশ্চিমী প্রতিবেশী দেশের দিকেই রয়েছে। তারা

জানে, তাদের একটা ভুল পদক্ষেপেই তাদের স্বার্থবিরোধী শক্তিগুলি এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে

পারে, যাকে পাকিস্তান তাদের বাড়ির উঠোন হিসাবে মনে করে। এতে করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা

পরিস্থিতিও প্রভাবিত হতে পারে। যা বিরাট মাপে নিরাপত্তা বাহিনী পাঠিয়ে দুই থেকে তিন বছরেরও বেশি

সময় ধরে স্থিতিশীল করেছিল তারা।

জম্মু এবং কাশ্মীরে একটি তৃতীয় পক্ষ পাকিস্তানের স্বার্থের পক্ষে উপযুক্ত নয়, তারা একসাথে

তিন পক্ষকে সামলাতে পারবে না। এই পরিস্থিতি, নিজেদের অনিশ্চিত অর্থনৈতিক অবস্থা এবং এফএটিএফ

এর পর্যবেক্ষণের তলায় থেকে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধবিরতির পথ বেছে নিয়েছে। জম্মু এবং কাশ্মীরে সক্রিয় হস্তক্ষেপ থেকে এক ধাপ পিছিয়ে এবং ভারতের সঙ্গে ব্যাক-চ্যানেল যোগাযোগ শুরু করেছে। তবে, তারপরও কোনও এক্তিয়ার ছাড়াই অবিলম্বে জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ফেরানোর মতো উদ্ভট দাবি করে, এই অঞ্চলে তারা প্রভাব বজায় রাখার প্রত্যাশা করছে।

তাই, আন্তর্জাতিক মহলের অনেক কম মনোযোগ এবং পাকিস্তানের সক্রিয় হস্তক্ষেপের সুযোগের বাইরে, জম্মু এবং কাশ্মীরে স্বাভাবিককরণের প্রক্রিয়াটি অনেক দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে পারে। একটি নতুন রাজনৈতিক সম্প্রদায় গঠনের প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করেনি। পুরানো রাজনৈতিক খেলোয়াড়রা ফিরে এসেছেন, যারা ডিডিসি নির্বাচনের মতোই উপত্যকার রাজনৈতিক পথকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা

দেখিয়ে অবাক করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সুযোগ নষ্ট না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং পুরানো রাজনৈতিক খেলোয়াড়দের প্রতি তাদের রাজনৈতিক অবস্থান বদলেছে। শেষ পর্যন্ত তারা এক মঞ্চে একত্রিত হয়েছে। নমনীয়তা এবং সুযোগ নেওয়ার নামই রাজনীতি।

জম্মু এবং কাশ্মীরে রাজনীতিবিদদের আলোচনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়ে কিছু আঞ্চলিক রাজনৈতিক বিষ দূর করা গিয়েছে এবং আরও কিছু মৌলিক বিষয়ের দিকে এগোনোর পথ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বলে মনে হয়। এটাও স্পষ্ট যে জম্মু-কাশ্মীরের কিছু নেতা এখনও ৩৭০ ধারা ফেরানোর দাবি থেকে না সরলেও,  আপস করতে হলে তারা অন্তত রাজ্যের মর্যাদা পুনরুদ্ধারের দাবি জানাবেন। মূল ধারার রাজনৈতিক নেতাদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একটি রাজনৈতিক চাল হিসাবেই যে জম্মু এবং কাশ্মীর'এর মর্যাদা হ্রাস করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করেছিলেন, এখন তা যে কেউ উপলব্ধি করতে পারবে। রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোটাই শেষ পংক্তি হিসাবে পরিণত হচ্ছে, বিশেষ মর্যাদা তার পিছনে চলে গিয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে যাবে।

তিন ঘণ্টার আলোচনার পর সকলেই রাজনৈতিক কোনও বক্তব্যের সন্ধানের করছিলেন। কিন্তু, এই বৈঠকটি সম্ভবত এই জাতীয় আরও বহু বৈঠকের প্রথম, তাই সেই বৈঠক থেকে কোনও ফলাফল প্রত্যাশা করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। জম্মু ও কাশ্মীরে রাজনৈতিক অচলাবস্থা যে আর বেশিদিন চলবে না এবং সীমানা পুনর্বিন্যাসের পরই বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, তা কেন্দ্রীয়য় নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছে। এতে করে

সম্পূর্ণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে, যার আগে সম্ভবত রাজ্য়ের মর্যাদাও ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতিবিদদের কারোরই আপত্তি ছিল না বলেই মনে হয়। জম্মু এবং কাশ্মীরে কিন্তু, সাংবিধানিক প্রয়োজনীয়তা অনুসারে ১৯৬৩, ১৯৭৫ এবং ১৯৯৫ সালেও সীমানা পুনর্বিন্যাস হয়েছিল।

'দিল কি দূরি এবং দিল্লি কি দূরি'র উপর জোর না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এখন উচিত রাজনৈতিক সমর্থন-সহ ভারতীয় সেনাবাহিনীর হৃদয় ও মন জয় করার পুরানো ধারণাকে প্রেরণা দেওয়া। আলোচনা ও কথাবর্তার ভবিষ্যত যাই হোক না কেন, দিল্লী এবং শ্রীনগর বা জম্মুর একই অবস্থানে থাকাটা দেশবিরোধী প্রবণতাকে পরাস্ত করতে এবং জম্মু ও কাশ্মীর থেকে প্রক্সি প্রভাব দূরে রাখতে অপরিহার্য। আশা করি এই বৈছক আরও আলোচনা এবং মতামত ভাগ করে নেওয়ার সূচনা করবে, দুইয়েরই খুব প্রয়োজন।

লেখক - অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন, শ্রীনগরের ১৫ কর্পস-এর প্রাক্তন কমান্ডার, বর্তমানে কাশ্মীরের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর।

Share this article
click me!

Latest Videos

'উনি মুখ্যমন্ত্রী উনি যা মনে করবেন তাই করবেন' হিডকোর চেয়ারম্যান পদ যেতেই এ কী বললেন ফিরহাদ?
দেখুন কামুক প্রতিবেশীর কাণ্ড! একলা পেয়ে নাবালিকাকে নিশানা! তারপর যা হলো | Ranaghat News Today
এই সরকার সব তুলে দিয়েছে! ক্লাস টেন পাশ করলেই মোবাইল কেনো আর গেম খেলো : শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
'দিনকাল খুব খারাপ, পাশেই বাংলাদেশ' চরম ইঙ্গিত শুভেন্দুর | Suvendu Adhikari | Bangla News |
Live : শেষ বিদায় ড. মনমোহন সিং | Last Rites of Former PM Dr. Manmohan Singh