স্রেফ বেকারত্বের জ্বালায় ক্রমশ আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে দেশের যুব সম্প্রদায়। আর সেই আত্মঘাতী বেকারের সংখ্যা বাড়ছে বছর-বছর! জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর সাম্প্রতিক সমীক্ষা অনন্ত সে কথাই বলছে। আর সেই রিপোর্ট সামনে আসার পর থেকেই দেশজুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তোলপাড়।
কী বলছে সমীক্ষা?
২০১৭ সালের চেয়ে ২০১৮ সালে বেড়েছে আত্মঘাতী বেকারের সংখ্যা। কৃষক আত্মহত্যার এই দেশে দেখা যাচ্ছে, কৃষকের চেয়েও আত্মঘাতী বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে আত্মঘাতী হয়েছিলেন ১২ হাজার ২৪১ জন কর্মহীন বেকার। যাদের মধ্যে ৮২ শতাংশই পুরুষ। আর ২০১৮তে দেখা গিয়েছে, ১২,৯৩৬জন বেকার আত্মঘাতী হয়েছেন। যা ওই বছরে মোট আত্মহত্যার প্রায় ১০ শতাংশ। ঈশ্বরের দেশ কেরলে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বেকার আত্মহত্যা করেছেন। এরপর আত্মহত্যার তালিকায় যথাক্রমে রয়েছে তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, কর্নাটক ও উত্তরপ্রদেশ। সেদিক থেকে আত্মঘাতী বাঙালি ততটা আত্মঘাতী নয় বলেই দেখা যাচ্ছে। এদিকে ডিজিটাল ইন্ডিয়ার এই ছবি সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, এই তাহলে আচ্ছেদিন?
এদিকে এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, দেশে তো বেকারি ক্রমবর্ধমান। তাহলে কি আগামিদিনে আরও বেশি বেকারে আত্মহত্যা প্রত্যক্ষ করবে দেশ? প্রসঙ্গত, ২০১৯-এ বেকারির হার সর্বোচ্চ হয়েছিল গত ৪৫ বছরের মধ্যে। সেই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার এখনও কোনও লক্ষণ দেখা দেয়নি। গাড়ি থেকে বাড়ি শিল্প তথা আবাসন ব্যবসা ব্যাপক মন্দার মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে আর্থিক বৃদ্ধির হার চার শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। যাকে নেহরুর আমলের ঢিমে তেতালায় চলা হিন্দু রেট অব গ্রোথের সঙ্গে তুলনা করেছেন অর্থনীতিবিদরা। দেশজুড়ে তৈরি হওয়া ফ্ল্যাট পড়ে রয়েছে, বিক্রি হয়নি। গাড়ি কারখানা থেকে নিয়মিত ছাঁটাইয়ের খবর এসেছে। জামশেদপুর আদিত্যপুরের কারখানায় নিয়মিত কাজের দিন ছাঁটাই হয়েছে। বাজারে সামগ্রিকভাবে চাহিদা কমেছে। কারণ গ্রামের মানুষের আয় কমেছে। এই পরিস্থিতিতে গ্রামীণ রোজগার বাড়ানোর চেয়ে ব্যাপক কর্পোরেট কর ছাড়ের পথে হেঁটেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। বলাই বাহুল্য, তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে কেউ আগ্রহী হয়নি। এই পরিস্থিতিতে এনরেগা বা একশোদিনের কাজ ও বিভিন্ন গ্রামীণ কর্মসূচিতে ব্যয় ছাঁটায়ের পথে হেঁটেছে সরকার। তাই আদিগন্ত বেকারি নতুন বছরে এতটুকু কমবে বলে আশা করছেন না অর্থনীতিবিদরা।
এক্ষেত্রে মনোবিদরা কী ভাবছেন? মনোচিকিৎসক ডা. জ্যোতির্ময় সমাজদারের কথায়, "তরুণ বয়সে অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণই হল আত্মহত্যা। কেউ চাকরি পেল না বলে যেমন আত্মহত্যা করছে, আবার কেউ নিজের যোগ্যতা মতো কাজ পেল না বলেই আত্মহত্যা করছে। সোনারপুরের অতনু মিস্ত্রী এমএ পাশ করে ঘর ঝাঁট দেওয়ার কাজ পেয়ে বাড়ি ফিরে আত্মঘাতী হয়েছিলেন বছরতিনেক আগে। এক্ষেত্রে আমরা যারা মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তাদের ভূমিকা বলতে গেলে খুবই সামান্য। কেউ অবসাদে ভুগলে তার চিকিৎসা করতে হয় ঠিকই। কিন্তু মনে করুন, দীর্ঘদিন ধরে যদি একজন বেকার যুবক বা যুবতী যদি চাকরি না পায়, তার অবসাদ কতদিন আর ওষুধ-পত্র আর কাউনসেলিং দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন আপনি?"