এ যেন চিৎপুরের যাত্রা পাড়ার যাত্রা-র চিত্রনাট্যকেও ফেল করিয়ে দেবে। বলতে গেলে সরকার ফেলা নিয়ে জোর মল্লযুদ্ধ এখনও অব্যাহত কর্ণাটকে। ছলা-কলা কৌশলে যখন কংগ্রেস ও জেডিএস সরকার টিকিয়ে রাখার শেষ মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ঠিক তখনই চিনে জোঁকের মতো সরকার ফেলার জন্য কংগ্রেস ও জেডিএস-এর রক্তক্ষরণ ঘটিয়েই চলছে বিজেপি। এহেন পরিস্থিতিতে সোমবার ছ'টায় ফের আস্থাভোটের সময় নির্ধারণ করেছেন কর্ণাটক বিধানসভার অধ্যক্ষ কে আর রমেশ। সেই সঙ্গে পদত্যাগী বিধায়কদের ডিসকোয়ালিফিকেশন ইস্যু নিয়ে কাল সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
গত কয়েক দিনে কর্ণাটক বিধানসভায় একাধিকবার আস্থা-ভোটের সময় ঘোষণা করেও তা নেওয়া যায়নি। কারণ, কংগ্রেস ও জেডিএস-এর জোট সরকার এমন সব কৌশল নিয়েছিল যে শেষপর্যন্ত আস্থা ভোট অনুষ্ঠিত হয়নি। শুক্রবার বেলা দেড়টা-য় আস্থাভোট নেওয়ার সময় দিয়েছিলেন রাজ্যপাল বাজুভাই ভালা। কিন্তু তা নেওয়া যায়নি। শাসক জোটের নেতারা সেদিন একাধিক আলোচনা নিয়েই সময় কাটিয়েছিলেন। আস্থাভোট যাতে করা হয় সে জন্য দু-দু'বার বিধানসভার স্পিকারকে আস্থাভোট করানোর জন্য নির্দেশ পাঠিয়েছিল রাজ্যপাল। কিন্তু সেই নির্দেশ না মেনেই অধ্যক্ষ কে আর রমেশ বিধানসভায় অধিবেশন চালিয়ে যান বলেও অভিযোগ।
কর্ণাটকে এই নাটকীয় পরিস্থিতি নিয়ে সুপ্রিমকোর্টও একাধিক বার্তা দিয়েছে। তারপরেও কর্ণাটকে-র বর্তমান সরকার নিয়ে নাটক অব্যাহত। সোমবার সকালে ফের একবার আস্থাভোটের সময় ঘোষণা করেছেন অধ্যক্ষ কে আর রমেশ। তিনি জানিয়েছেন, আজ সন্ধায় এই আস্থা ভোট হবে। কংগ্রেস ও জেডিএস-এর জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামীকে এই জিন সন্ধ্যাতেই আস্থাভোটের মুখোমুখি হতে হবে। অনেকেই মনে করছেন এদিনই কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামীর ভাগ্য নির্ধারণ চূড়ান্ত হয়ে যাবে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে কুমারস্বামী সরকারের পতন এখন কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। ১৬ জন কংগ্রেস এবং জেডিএস বিধায়ক ছাড়াও বিএসপি-র এক বিধায়ক জানিয়েছেন, দলের শীর্ষনেতৃত্বের নির্দেশে আস্থা ভোটে অংশ নেবেন না তিনি। আর সেই কারণেই আস্থাভোটের জোটের সদস্য সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০০-এ। অন্যদিকে বিজেপি সমর্থক বিধায়কদের সংখ্যা হতে পারে ১০৭।
বিদ্রোহী বিধায়কদের নিজের দফতরে আগামীকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল ১১টার সময়ে ডেকে পাঠিয়েছেন কর্নাটকের বিধানসভার অধ্যক্ষ কে আর রমেশ। পাশাপাশি আজই আস্থাভোট হবে ভেবেই ইতিমধ্যেই বিধানসভায় এসে উপস্থিত হয়েছেন বিজেপি নেতা বিএস ইয়েদুরাপ্পা। রামাদা হোটেল থেকে বিধানসভার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বিজেপির বিধায়করা। আজ সন্ধ্যে ছটার মধ্যে আস্থাভোট শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন স্পিকার।
গতকাল সংবাদ সংস্থা দ্বারা প্রকাশিত একাধিক ছবিতে দেখা গিয়েছে, ভারতীয় জনতা পার্টির বিধায়করা এদিন রামাদা হোটেলেই যোগাভ্যাস করছিলেন। এদিন অবশ্য কংগ্রেসের তরফে দাবি করা হয় যে সরকার কীভাবে বাঁচানো যায় তার উপায় বের করে ফেলেছেন তাঁরা। কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শেষ দিন হতে চলেছে কুমারস্বামীর। অনেকে আবার এও দাবি করছেন এই যুদ্ধে জেডিএস আত্মত্যাগের জন্য প্রস্তুত ছিল এবং তাঁরা কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সিদ্ধারামাইয়া, জি পরমেশ্বর অথবা ডিকে শিব কুমারকেই দেখতে চান।