লালবাহাদুর একটি আদর্শ, তাঁর মৃত্যু আজও রহস্য

লালবাহাদুর শাস্ত্রী ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই সময়ের কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন। স্বাধীনতার পরেই ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। আপাত শান্ত মানুষটির মধ্যে যে এক তেজস্বী ও দীপ্ত মানসিকতা রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই দেশের নেতারা তা বুঝতে পেরেছিলেন। 

এক হীরা ব্যবসায়ী মুম্বাইয়ের পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তছরুপ করে বিদেশে গা ঢাকা দিয়ে বসে আছে। প্রতারণার অভিযোগে সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হয়েছে ব্যাংকের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা। নাগাল মিললেও এখনও গ্রেফতার হয় নি সেই প্রতারক হীরা ব্যবসায়ী। সে কবে ওই ঋণ শোধ করবে,  আদৌ করবে কিনা তা কেউ জানে না। তবে জীবীত থাকার সময় গাড়ি কেনার জন্য এই পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক থেকেই ঋণ নিয়েছিলেন দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি সেই ঋণ শোধ করে যেতে পারেন নি। তবে তাঁর স্ত্রী স্বামীর পেনশন থেকে সেই টাকা শোধ করেছিলেন। 
লালবাহাদুর শাস্ত্রী ভারতের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী। সেই সময়ের কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেন। স্বাধীনতার পরেই ক্ষমতায় আসে কংগ্রেস। আপাত শান্ত মানুষটির মধ্যে যে এক তেজস্বী ও দীপ্ত মানসিকতা রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই দেশের নেতারা তা বুঝতে পেরেছিলেন। 
কংগ্রেস সরকার গঠিত হওয়ার পর দেশের শাসন ব্যবস্থায় গঠনমূলক ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার জন্য ডাক দেওয়া হয় তাঁকে। তাঁর নিজের রাজ্য উত্তর প্রদেশে তাঁকে সংসদীয় সচিব নিযুক্ত করা হয়। এরপর তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। একে একে সামলাতে শুরু করলেন রেল, পরিবহণ ও যোগাযোগ, শিল্প ও বাণিজ্য, স্বরাষ্ট্র সহ বিভিন্ন দপ্তর। নেহরুর অসুস্থতার সময় তাঁকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী ঘোষণা করা হয়। 


একটি রেল দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানির ঘটনার দায় স্বীকার করে নিয়ে তিনি রেলমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নেহরু সংসদে তাঁর সপ্রশংস উল্লেখ করে বলেছিলেন, রেলমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তিনি খুশি মনেই গ্রহণ করছেন। কারণ, সাংবিধানিক দিক থেকে তা খুবই যুক্তিপূর্ণ যদিও সকলেই জানেন যে রেল দুর্ঘটনার জন্য তিনি কোনভাবেই দায়ী নন।
১৯৬৪ সালের ৯ই জুন তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেন। তার ঠিক কয়েক দিন আগেই ২৭শে মে জওহরলালের মৃত্যু হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক সৌজন্যতায় পরিণত হয়েছিল বলে শোনা যায়।
১৯৬৬ সালের জানুয়ারিতে তাসখন্দ চুক্তি সম্পন্ন করতে সেখানে গিয়ে মে মাসের ১১ তারিখ রাতে হোটেলের ঘরেই তাঁর মৃত্যু হয়। সরকারি ভাবে জানানো হয় তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। কিন্তু, তাঁর পরিবারের সদস্যরা এই মৃত্যুর পিছনে রহস্য আছে বলে বারে বারেই তাঁরা ‘গোপন’ ফাইল প্রকাশের দাবি তুলেছেন।
কয়েক বছর আগেও তাঁর ছেলে সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবার দেহ যখন দিল্লি বিমানবন্দরে নামানো হয় তখন গোটা শরীরটা নীল হয়ে গিয়েছিল। কপালের দু’পাশে স্পষ্ট সাদা ছোপ দেখা দেছিল। তাঁর মা ললিতাদেবী নাকি তখনই বলেছিলেন, এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। 

Latest Videos


প্রাক্তন প্রধানম্নত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর ছেলে অনিল শাস্ত্রী জানিয়েছিলেন,  তিনি যিখন স্কুলে পড়তেন রিকশা করে স্কুলে যেতেন। স্কুলে যাওয়ার জন্য একবার বাবার অফিসের গাড়ি চেয়েছিলেন। কিন্তু তা দিতে রাজি হননি লাল বাহাদুর। ফলে বাবাকে গাড়ি কেনার জন্য চাপ দেওয়া শুরু হয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব ভিএস ভেঙ্কটরমনের কাছ থেকে তাঁর পরিবার জানতে পারেন নতুন ফিয়াট গাড়ির দাম ১২ হাজার টাকা। কিন্তু ব্যাঙ্কে ছিল ৭ হাজার টাকা। লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ঋণের জন্য আবেদন করেন। আবেদনের দিনেই ঋণের ৫ হাজার টাকা পেয়ে যান তিনি। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পরেই মারা যান শাস্ত্রী। 
মৃত্যুর পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণ পরিশোধের জন্য নোটিশ পাঠান লালবাহাদুরের স্ত্রী ললিতা শাস্ত্রীর কাছে। ললিতা শাস্ত্রী তাঁর পরিবারের পেনশন থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে কিস্তিতে শোধ করেন সেই ঋণ।  ১৯৬৪ সালের মডেলের ফিয়াট গাড়িটে এখনও রাখা রয়েছে রাজধানীর এক নম্বর মোতিলাল নেহরু মার্গের লাল বাহাদুর শাস্ত্রী মেমোরিয়ালে।
অনিল শাস্ত্রীর কথা অনুযায়ী, তাঁর বাবা নিয়মিত ডায়েরি লিখতেন। সেখানে অনেক খুঁটিনাটি কথা লেখা থাকত। কিন্তু লালবাহাদুরের মৃত্যুর পর থেকে ওই ডায়েরিরও কোনও হদিশ মেলেনি। যেমন খোঁজ পাওয়া যায়নি তাঁর সঙ্গে যে ফ্লাস্কটি ছিল সেটিরও। লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং সচিবও দুর্ঘটনার শিকার হন। দুইজনেরই দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যু হয়। ওই দু’জনকেও তদন্ত কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল। দু’-দু’বার এমন সমাপতন খুবই আশ্চর্যজনক বলে মত দিয়েছিলেন অনিল।

Share this article
click me!

Latest Videos

Live: মথুরাপুরে সদস্যতা অভিযান অগ্নিমিত্রা পালের, দেখুন সরাসরি
Suvendu Adhikari Live: বিধানসভার বাইরে মুখোমুখি শুভেন্দু অধিকারী, দেখুন সরাসরি
'বালি চুরি, কয়লা চুরিতে যুক্ত পুলিশদের একাংশ' বিস্ফোরক মন্তব্য মমতার | Mamata Banerjee
উপনির্বাচনে (By Election) কেমন ফল করবে বিজেপি? দেখুন কী বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
হঠাৎ করে TMC নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে কেন? কী উদ্দেশ্যে? প্রশ্ন অগ্নিমিত্রার | Agnimitra Paul