Khalistani Terrorist Attack List: এর আগে কী কী হামলা চালিয়েছে খালিস্তানি জঙ্গিরা, দেখুন তালিকা

বর্ষশেষের রাতে মুম্বইয়ে (Mumbai) খালিস্তানি জঙ্গিরা হামলা চালাতে পারে। এখনও পর্যন্ত ভারতে তারা কতগুলি হামলা চালিয়েছে জানেন, দেখে নিন তালিকা (List of Terrorist Attacks by Khalistanis)। 
 

Web Desk - ANB | Published : Dec 30, 2021 11:04 PM IST

খালিস্তানি জঙ্গিরা (Khalistani Terrorists) হামলা চালাতে পারে বলে মুম্বই (Mumbai) শহরকে সতর্ক করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই খালিস্তানি আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটলেও, ১৯৮০-র দশকে জারনেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালের নেতৃত্বে পালে হাওয়া পেয়েছিল এই আন্দোলন। আর তার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়েছিল ব্যাপক হিংসা। যা অপারেশন ব্লু স্টার-এ ভিন্দ্রানওয়ালের মৃত্যুতেও শেষ হয়নি। এখনও ভারতে ও ভারতের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তারা সক্রিয়। ১৯৮০-র দশক থেকেই একের পঞ্জাব ও আশপাশের রাজ্যগুলিতে একের পর এক হামলা চালিয়েছে খালিস্তানপন্থীরা। দেখে নেওয়া যাক আমাদের দেশে খালিস্তানি জঙ্গিদের হামলার দীর্ঘ তালিকা - 

২৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৮১ - খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা একটি ভারতীয় জেটলাইনার হাইজ্যাক করে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানে। তবে, পাকিস্তানি কমান্ডোরা সকল যাত্রীকেই উদ্ধার করা হয়েছে। ৪১ জন হিন্দু যাত্রী আহত হয়েছিলেন।

এপ্রিল, ১৯৮৩ - পঞ্জাব পুলিশের ডিআইজি অবতার সিং অটওয়ালকে, শিখদের পবিত্রতম গুরুদ্বার অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির সাহিবের ভিতরে হত্যা করা হয়। ভিন্দ্রানওয়ালের অনুমতি ছিল না বলে, দীর্ঘ সময় তাঁর মৃতদেহ স্পর্শ পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। দেহে পচন ধরে গিয়েছিল। নিরস্ত অবস্থায় প্রার্থনা করতে এসেছিলেন তিনি। 

অক্টোবর, ১৯৮৩ - কাপুরথালা জেলার ধিলওয়ান থেকে জলন্ধরগামী একটি বাসে ৬ জন হিন্দু যাত্রীকে হত্যা করেছিল খালিস্তানিরা। অন্য এক ঘটনায় এক পুলিশ সাব-ইন্সপেক্টর এবং একজন ট্যাক্স ইন্সপেক্টরকেও ট্রেনে উঠে হত্যা করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ওই সময়ের বিভিন্ন ঘটনায় খালিস্তানি জঙ্গিদের হাতে নিহত হন ১৭৫ জনেরও বেশি মানুষ।

২১ অক্টোবর, ১৯৮৩ - খালিস্তানি জঙ্গিরা গোবিন্দগড়ে একটি ট্রেনে উঠে ৫৮ জন হিন্দু যাত্রীকে হত্যা করেছিল। বেসরকারি মতে সংখ্যাটা ১০০-র বেশি।

১ জানুয়ারি ১৯৮৪ থেকে ৩ জুন ১৯৮৪ - অপারেশন ব্লু স্টারের আগের পাঁচ মাসে পাঞ্জাবের বিভিন্ন জায়গায় সরকারি মতে ১৯৮ জন হিন্দুকে হত্যা করেছিল খালিস্তানিরা। বেসরকারি মতে নিহত হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ৫০০-র বেশি।

৩ জুন থেকে ৮ জুন ১৯৮৪ - অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দিরে অপারেশন ব্লুস্টার। ভারত সরকারের অনুমান অনুসারে, মোট ৪৯৩ জন জঙ্গি ও অসামরিক ব্যক্তির হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। বেসরকারি মতে অবশ্য, মৃত্যু হয়েছিল ৩০০০-এর বেশি মানুষের। এর মধ্যে ১২৮০ জন ছিল জঙ্গি, যারা ভিন্দ্রানওয়ালের নেতৃত্বে মন্দির কমপ্লেক্সের ভিতরে লুকিয়ে ছিল। সেনাদের সঙ্গে তাদের লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে মৃত্যু হয় অসামরিক নাগরিকদের। 

১০ এবং ১১ মে, ১০৮৫ - নয়াদিল্লি হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে পরপর দুদিনে খালিস্তানিদের ধারাবাহিক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছিলেন ৮৫ জন হিন্দু। সন্ত্রাসবাদীরা একটি ট্রেন ও ২টি বাসে ট্রানজিস্টর বোমা ব্যবহার করেছিল। এছাড়া, বাজার ও পার্কের মতো জনবহুল জায়গাতেও বোমা রেখেছিল। 

১৭ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৬ - ফিল্লাউরে এক শিবসেনা নেতাকে হত্যা করা হয়। আরও বেশ কয়েকজন হিন্দু নেতাকে নিশানা করা হয়েছিল। জগবানি এবং অজিত পাঞ্জাবি নামে দুটি পত্রিকায়, প্রকাশ্য়েই হিন্দু নেতাদের হিট লিস্ট প্রকাশ করা হত। 

৮ মে ১৯৮৭ - নরমপন্থী আকালি নেতা জীবন সিং উমরানাঙ্গলের ছেলে সুখদেব সিংকে খুন কালিস্তানি জঙ্গিরা। মাঝা অঞ্চলে বাড়ি বাড়ি ঘুরে জীবন সিং জঙ্গিদের পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করতেন। জঙ্গিদের হিংসার পথ ছাড়ার জন্য রাজি করাতে, পরিবারদের সাহায্য চেয়েছিলেন।

৬ জুলাই, বর্তমানে মোহালি জেলার অন্তর্গত লালরু। সেখানে খালিস্তানি জঙ্গিরা একটি বাসে গহামলা চালিয়ে ৩৮ জন হিন্দু যাত্রীকে নামিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল। 

২০ অক্টোবর, ১৯৮৭ - এবার হামলা দিল্লিতে। দীপাবলির দিন রাজধানির বিভিন্ন স্থানে ১২ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিল খালিস্তানিরা। 

৩ মার্চ, ১৯৮৮ - কাহরি সাহরিতে একটি উৎসব সমাবেশে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে  ৩৫ জনকে হত্যা করা হয়েছিল। আহত হন আরও ৫০ জন।

২ এপ্রিল, ১৯৮৮ - পাঞ্জাবের বিভিন্ন জেলায় বাড়িতে ঢুকে ঢুকে খালিস্তানি বন্দুকবাজরা ৭ জন শিশু-সহ ৩৭ জনকে হত্যা করেছিল। 

২৫ জুন, ১৯৮৯ - মোগায় নেহেরু পার্কে দৈনিক কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছিলেন  আরএসএস-এর স্বয়ংসেবকরা। মোটরসাইকেলে করে আসা কিছু খালিস্তানি জঙ্গি গুলি করে তাদের ২৭ জনকে হত্যা করেছিল। তারা এসে প্রথমে উস্কানিমূলক স্লোগান দিয়েছিল। তারপর নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করেছিল।

২৮ মে, ১৯৯০ - খালিস্তান কমান্ডো বাহিনী একটি খামারে হামলা চালিয়ে ১১ জন হিন্দু সহ মোট ১৩ জন অভিবাসী শ্রমিককে হত্যা করেছিল।

জুন, ১৯৯১ - লুধিয়ানা স্টেশন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে এমার্জেন্সি ব্রেক টেনে কালিস্তানি জঙ্গিরা দুটি ট্রেন থামিয়েছিল। তারপর ট্রেনে উঠে গুলি চালিয়ে অন্তত ৮০ জন যাত্রীকে হত্যা করেছিল। এরপর হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। ট্রেনটি বড্ডুওয়াল স্টেশনে গেলে, ডাক্তারদের নিয়ে এসেছিল উদ্ধারকারী দল। স্থানীয় গ্রামবাসীরাও জীবিতদের খাদ্য, জল, ওষুধ দিয়ে সাহায্য করেছিল। 

ডিসেম্বর, ১৯৯১ - চারজন খালিস্তানি জঙ্গি লুধিয়ানা থেকে ফিরোজপুরগামী লোকাল প্যাসেঞ্জার ট্রেনে উঠেছিল। সোহিয়ান নামের এক গ্রামের কাছে আসতেই তারা এমার্জেন্সি চেইন টেনেছিল। সোহিয়ান ক্রসিংয়ে আরও ছয় সশস্ত্র জঙ্গি ট্রেনে উঠেছিল। জঙ্গিরা একে-৪৭ বন্দুক দিয়ে হিন্দু বলে মনে হওয়া সকল যাত্রীদের লক্ষ্য করে গুলি করে। নিহত হন ৪৯ জন, তার মধ্যে দুজন ছিলেন অহিন্দু। এই গণহত্যার পর, বন্দুকধারীরা ট্রেন ছেড়ে রাতের অন্ধকারে গায়েব হয়ে গিয়েছিল।

১৫ মার্চ, ১৯৯২ - লুধিয়ানায় খালিস্তানি জঙ্গিদের হাতে ১৮ জন নিহত হয়েছিল।

১০ আগস্ট, ১৯৯২ - বারনালায় শিখ জঙ্গিদের হাতে ৩১ জন নিহত হয়েছিল।

৩১ অগাস্ট, ১৯৯৫ - চণ্ডিগড়ে, এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহত হন পঞ্জাবের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিয়ন্ত সিং। আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল ওই ঘটনায়। খালিস্তানপন্থী দল বাব্বর খালসা এই হত্যার দায় স্বীকার করেছিল। তবে, নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, হামলা চালিয়েছিল খালিস্তান কমান্ডো বাহিনী।

১৯৯০-এর দশকের শেষদিকে খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদ থিতিয়ে আসলেও, একুশ শতকে ফের নতুন করে তাদের সক্রিয় হতে দেখা গিয়েছে। ২০০৫ সালের ২২ মে নয়াদিল্লির লিবার্টি সিনেমা এবং সত্যম সিনেমায় 'জো বোলে সো নিহাল' চলচ্চিত্রের স্ক্রিনিং চলাকালীন পরপর বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। ৩ জন মারা যায় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছিলেন। 

১৯ জুন, ২০০৬ ভারতের জলন্ধরে আন্তঃরাষ্ট্রীয় বাস টার্মিনাসে বোমা বিস্ফোরণের ফলে ৩ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছিলেন। পুলিশের একজন মুখপাত্র জানান, হামলার পিছনে ছিল খালিস্তান জিন্দাবাদ বাহিনী (KZF)। তাদের এক নেতা পাকিস্তানে এবং আরেকজন কানাডা থেকে হামলার পরিকল্পনা করেছিল। আরেকজন স্থানীয় অপরাধী তা কার্যকর করেছিল।

১৪ অক্টোবর,  ২০০৭ - লুধিয়ানার শিঙ্গার সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণে ৬ জন নিহত এবং ৩২ জন আহত হন। এর পিছনেও ছিল খালিস্তানপন্থীরাই। 

২০১৬-১৭ -  পাঞ্জাবে শিবসেনা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ এবং বিজেপির একাধিক নেতার উপর হামলা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ছয় হিন্দু নেতাকে হত্যা করা হয়েছিল।
 

Share this article
click me!