'লকডাউন করোনার সামাজিক টিকা', সত্যিই কি সময় মতো লকডাউন জারি করেছে ভারত

লকডাউন ভারতে 'সামাজিক টিকা' হিসাবে কাজ করেছে

ভারত একেবারে সঠিক সময়ে লকডাউন জারি করেছিল

দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন

তাঁর এই দাবি কতটা যুক্তিযুক্ত

 

লকডাউন ভারতে 'সামাজিক টিকা' হিসাবে কাজ করেছে। রবিবার এমনই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রী হর্ষ বর্ধন। তাঁর দাবি, ভারত একেবারে সঠিক সময়ে লকডাউন জারি করেছিল। যা অনেক উন্নত দেশও করেনি। বস্তুত, অনেক আগেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই বিষয়ে ভারত সরকারের প্রশংসা করেছিল। সম্প্রতি ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধনকে সংস্থার এক্সিকিউটিভ বডির চেয়ারম্যান করে সেই এই বিষয়টিতে আরও মান্যতা দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু, সত্যিই কি ভারত একেবারে সঠিক সময়ে লকডাউন জারি করেছিল?

এই আলোচনায় ঢোকার আগে জেনে নেওয়া যাক, রবিবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঠিক কী বললেন। এদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, লকডাউনের আগে ভারতে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার হার ৩.৪ দিন ছিলয অর্থাৎ ৩.৪ দিনে আক্রান্তচের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু, ২৪ মার্চ লকডাউন জারির দুই মাস পরে এই আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে সময় লাগছে ১৩ দিনেরও বেশি। তাঁর মতে 'লকডাউন এবং এর সমস্ত নির্দেশিকা একটি শক্তিশালী সামাজিক ভ্যাকসিন বা টিকা হিসাবে কাজ করেছে'।

Latest Videos

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আরও দাবি, ভারত একেবারে সঠিক সময়ে লকডাউন জারি করেছিল। অন্যান্য উন্নত দেশগুলি এই সিদ্ধান্ত নিতে অনেকগুলি দিন অপচয় করেছে। কিছু কিছু দেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার পর তারা লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বেশিরভাগ জায়গায় আংশিক লকডাউন জারি করা হয়েছে।

এবার আসা যাক লকডাউনের সঠিক সময়ের প্রশ্নে। ভারতে প্রথম করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল ৩০ জানুয়ারি, কেরলে। তবে ভারতে করোনাভাইরাস রোগীর সংখ্যা চড়চড়িয়ে বাড়তে শুরু করেছিল মার্চের শুরু থেকে। ওই মাসের প্রথম দিন করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৩। আর প্রধানমন্ত্রী যেদিন প্রথম লকডাউন জারি করেছিলেন সেই ২৪ মার্চ, ভারতের করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৩৬। আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করা হয়েছিল এর ৪ দিন আগে অর্থাৎ ২০ মার্চ।

অঙ্কের হিসাবেই বোঝা যাচ্ছে, মার্চের শুরু থেকে যদি লকডাউন, কিংবা নিদেনপক্ষে আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ করা যেত, সেই ক্ষেত্রে ভারতে সংক্রমণের এই বিস্তার সহজেই রোধ করা যেত। দুইমাসের বেশি সময় ধরে লকডাউন জারি রাখতে হত না। তাতে করোনাভাইরাসের প্রত্যক্ষ মৃত্যুই শুধু আটকানো যেত না, লকডাউন জারির ফলে করোনার যে প্রত্যক্ষ মৃত্যুর সংখ্যা, সেটাও কমানো যেত। এই সময়কালে পথ দুর্ঘটনা-রেল দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অনেক পরিযায়ী শ্রমিকদের, খাদ্যাভাবের বলি হয়েছেন অনেকে, এমনকী মদ না পেয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয়েছে জনা চল্লিশেক নিয়মিত মদ্যপায়ী ভারতবাসীর। মানসিক অবসাদে, আতঙ্কে, খাদ্যাভাবের চিন্তায় বহু মানুষ আত্মহত্যা করেছেন, সেগুলিও হয়তো ঠেকানো যেত।

পরিযায়ী শ্রমিকদের প্রসঙ্গে আরেকটি মত উঠে এসেছে, আর কয়েকটা দিন কি অপেক্ষা করা যেত লকডাউন জারির আগে? বিশ্বের প্রায় সব দেশেই, এমনকী বাংলাদেশের মতো প্রতিবেশী রাষ্ট্রেও লকডাউন জারির আগে মানুষকে নিজেদের গুছিয়ে নিতে অন্তত ৩দিন সময় দেওয়া হয়েছে। আর ভারতবাসী পেয়েছিলেন ৪ ঘন্টা। দেড়মাসের উপর ভিন রাজ্যে চরম সমস্যায় পরিযায়ী শ্রমিকরা আটকে থাকেন। তারপর তাদের আবার ফিরিয়ে দেওয়া হয় নিজ নিজ রাজ্যে। আর সেই শ্রমিকরা ফিরতেই অনেক গ্রিন জোন হিসাবে ঘোষিত জেলাতেও নতুন করে ছড়িয়েছে সংক্রমণ। হাতের সামনে উদাহরণ উত্তর দিনাজপুর।

আর গত সাতদিন, অর্থাৎ লকডাউন ৪-এ যে শিথিলতা আনা হয়েছে, তারপর থেকে দেশে ৩৪০০০-এর বেশি নতুন করোনা রোগী পাওয়া গিয়েছে। সাতদিনে পাঁচবার ভেঙেছে ২৪ ঘন্টায় সবচেয়ে বেশি করোনা রোগীর সংখ্যাবৃদ্ধির রেকর্ড। রবিবারও নতুন রেকর্ড হয়েছে।

টিকা বা ভ্যাকসিন কোনও ভাইরাস-এর বিরুদ্ধে শরীরে অনাক্রম্যতা তৈরি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। লকডাউন শিথিল করতেই যদি রোগীর সংখ্যাও দিন দিন বাড়তে থাকে, তাহলে কি অনাক্রম্যতা গড়ে ওঠার দাবি করা যায়? লকডাউনের প্রথম দফায় করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা আর লকডাউনের বলির সংখ্যা প্রায় সমান সমান ছিল। পরে সেভাবে করোনাকে পাল্লা দিতে না পারলেও এখনও সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এতগুলি লোককে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে লকডাউনে সত্যিই কি লাভ হল? প্রশ্নগুলি তোলার সময় এসে গিয়েছে। বিপর্যয়ের সময় সংহতি প্রদর্শন মানে, অস্বস্তিকর প্রশ্ন তোলা বন্ধ রাখা নয় কিন্তু।

 

Share this article
click me!

Latest Videos

PM Modi Live : সেনা দিবসে যুদ্ধ জাহাজের কমিশন করলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী, দেখুন | Asianet News Bangla
West Bengal-এ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে Suvendu Adhikari-র বিক্ষোভ মিছিল! দেখুন সরাসরি
'স্যালাইন কাণ্ডে মমতার গ্রেফতারি চাই', স্বাস্থ্য ভবনের সামনে ঝাঁঝিয়ে উঠলেন শুভেন্দু অধিকারী
Baghajatin Update : বাঘাযতীনে বেআইনি নির্মাণ ঘিরে তুঙ্গে তরজা! প্রতিবাদে বামেরা | CPIM Protest
কি অভিযোগ? হঠাৎ বিধাননগর থানায় ঢুকে পড়লেন শুভেন্দু অধিকারী | Suvendu Adhikari | Bidhannagar