পুলিশের কাছে সূত্র ছিল বলতে নিহতের কাটা হাতে ভগবান হনুমানের উল্কি। সেটা দিয়েই হত্যাকারীকে গ্রেফতার করল নবি মুম্বইয়ের পুলিশ।
গত ১২ সেপ্টেম্বর, নবি মুম্বইয়ের ভাশি এপিএমসি এলাকায় বেশ কয়েকটি প্লাস্টিকের ব্যাগে অজ্ঞাত এক ব্যক্তির বেশ কিছু দেহাংশ পেয়েছিল পুলিশ। কিন্তু, তার মাথা ছিল না, ফলে নিহত ওই ব্যক্তিকে সনাক্ত করাটাই চ্যালেঞ্জ ছিল পুলিশের কাছে। কিন্তু, এই ক্ষেত্রে তাদের সহায় হলেন স্বয়ং বজরঙ্গবলী। নিহতের কাটা হাতে থাকা একটি ভগবান হনুমানের উল্কিই নিহতের পরিচয় দিল পুলিশকে। আর গ্রেফতারও হল হত্যাকারী।
পুলিশ জানিয়েছে, প্লাস্টিকের ব্যাগে যে দেহাংশগুলি মিলেছিল, তারমধ্যে দুইহাত, দুই পা এবং শরীরের আরও কয়েকটি অংশ ছিল। কিন্তু, মাথাসহ শরীরের সনাক্তকারী কোনও অজ্ঞ ছিল না। ফলে এপিএমসি থানায় হত্যা এবং প্রমাণ লোপাটের একটি মামলা দায়ের করেই বসে থাকতে হয়েছিল পুলিশকে। নিহতকেই সনাক্ত করা যাচ্ছিল না। পুলিশ শুধু জানতে পেরেছিল, তার প্রথম নাম 'রবীন্দ্র'। আর তার একটি কাটা হাতের উপর ভগবান হনুমানের ছবি ট্যাটু করা রয়েছে। শুধুমাত্র এই দুটি সূত্রের উপর ভিত্তি করে নিহতকে সনাক্ত করা এবং হত্যার মামলার সমাধান করা ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং, প্রায় খড়ের গাদায় সূচ খোজার মতো।
আর সেটাই করেছিল নবি মুম্বইয়ের পুলিশ। কমিশনার বিপিন কুমার সিং জানিয়েছেন, নিহতকে সনাক্ত করার জন্য, পুলিশের বেশ কয়েকটি দল গঠন করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে আরও কয়েকটি দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল নিহতের শরীরের বাকি অংশগুলি এবং অভিযুক্তকে খুঁজে বের করার জন্য। থানে, রায়গড়, মুম্বই এবং নবি মুম্বইয়ে পাঠানো হয়েছিল দলগুলিকে।
নবি মুম্বই পুলিশ কমিশনারেটের অধীনে রিপোর্ট করা ১০০ জনেরও বেশি নিখোঁজ ব্যক্তির বিবরণ বিশ্লেষণ করেছিল পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, রবীন্দ্র মান্দোতিয়া নামে ৩০০ বছর বয়সী একজন ঝাড়ুদার তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বলে কোপারখাইরেন থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। তার হাতে ভগবান হনুমানের ট্যাটু আছে বলে জানানো হয়েছিল। এরপর কোপারখাইরেন থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে কাটা অজ্ঞগুলি দেখানো হয়। মান্দোতিয়ার পরিজনেরা নিশ্চিত করে, সেগুলি ওই ঝাড়ুদারেরই।
এরপর, পুলিশ বেশ কয়েকটি দিক নিয়ে তদন্তে এগিয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম ছিল সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা। আর সেটাই তাদের পৌছে দিয়েছিল অভিযুক্ত, ২৭ বছর বয়সী সুমিতকুমার হরিশকুমার চৌহানের কাছে। তাকে গ্রেফতার করে জেরা করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় সে পুলিশকে জানায়, নিহত মান্দোতিয়ার সঙ্গে তার আর্থিক বিরোধ ছিল। সেই কারণে গত ৯ সেপ্টেম্বর প্রথমে মান্দোতিয়া গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে সে। তারপর তার দেহকে টুকরো টুকরো করে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে এপিএমসি এলাকায় ফেলে দিয়েছিল। মাথা এবং অন্যান্য অংশ মহাপে এলাকায় মাটিতে পুতে দিয়েছিল।
পরে পুলিশ তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে মান্দোতিয়ার শরীরের বাকি অংশগুলি উদ্ধার করে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর সুমিতকুমার হরিশকুমার চৌহানকে গ্রেফতার করে স্থানীয় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। ২২ সেপ্টেম্বর তাকে পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত। পুলিশ মনে করছে এই অপরাধে আরও কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে। আপাতত সেই লক্ষ্যে তদন্ত চলছে।