গর্ভপাত করাতে পারবেন বিবাহিত-অবিবাহিত সব মহিলাই, নিরাপদ গর্ভপাত দিবসে বড় রায় সুপ্রিম কোর্টের

সমস্ত মহিলা নিরাপদ ও আইনি  গর্ভপাত প্রক্রিয়ার অধিকারী। ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিশ্ব নিরাপদ গর্ভপাদ দিবসে বড় রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, নিরাপদ ও আইনি গর্ভপাতের বিষয়ে একজন বিবাহিত মহিলা ও একজন অবিবাহিত মহিলার মধ্যে কোনও পার্থক্য করা যাবে না।

Saborni Mitra | Published : Sep 29, 2022 7:20 AM IST

 
সমস্ত মহিলা নিরাপদ ও আইনি  গর্ভপাত প্রক্রিয়ার অধিকারী। ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ বৃহস্পতিবার বিশ্ব নিরাপদ গর্ভপাদ দিবসে বড় রায় দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, নিরাপদ ও আইনি গর্ভপাতের বিষয়ে একজন বিবাহিত মহিলা ও একজন অবিবাহিত মহিলার মধ্যে কোনও পার্থক্য করা যাবে না। পার্থক্য করলে সেটা হবে অসাংবিধানিক। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী গর্ভধারণের ২০-২৪ সপ্তাহের মধ্যে সকল মহিলা গর্ভপাত করানোর অধিকারী। 

যুগান্তকরী রায়ের মধ্যেই শীর্ষ আদালত বৈবাহিক ধর্ষণকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যদিও সম্পূর্ণরূপে গর্ভপাতের পরিধির মধ্যে। আজালতের রায় বলা হয়েছে মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি অ্যাক্টের অধীনে ধর্ষণের সজ্ঞায় অবশ্যই বৈবাহিত ধর্ষণ অন্তর্ভূক্ত থাকবে। আদালত আরও জানিয়েছে, একজন মহিলার বৈবাহিক অবস্থা কখনই তাঁকে গর্ভপাতের অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ হল একজন বিবাহিত মহিলাও যৌন হেনস্থার স্বীকার হতে পারে। সম্মতি ছাড়াই স্বামী তাঁকে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করেতে পারে। সেক্ষেত্রে মহিলা যদি গর্ভাবতী হন তাহলে তিনি চাইলে গর্ভপাত করাতে পারেন। কারণ আমাদের দেশে বৈবাহিত ধর্ষণের জন্য কোনও আইন নেই।  বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেপি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি এএস বোপান্নার বেঞ্চ এই যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমেই বিবাহিক ধর্ষণকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনুমান এই পর্যবেক্ষণ বৈবাহিক ধর্ষণের বিষয়ে পরবর্তী রায়ের পথ প্রশস্ত করতে পারে, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশে তীব্র বিতর্ক রয়েছে।

আদালত বলেছে, একজন মহিলার বৈবাহিক অবস্থা তখনই তাঁকে গর্ভপাতের অধকার থেকে বঞ্চিত করতে পারে না। আদালত বলেছে, অবিবাহিত মহিলারাও ২৪ সপ্তাহের মধ্যে একটি অবাঞ্ছিত গর্ভধারণ বন্ধ করার অধিকারী। আদালত রায় দিতে গিয়ে বলেছে, অবিবাহিত ও বিবাহিত মহিলাদের অবাঞ্ছিত গর্ভধারণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা মৌলিক অধিকারের নামান্তর মাত্র। 

বছর ২৫এর এক অবিবাহিত মহিলার দায়ের করা মামলার রায় দিতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্ট এই নির্দেশ দিয়েছে। মহিলা প্রথমে গর্ভপাতের অধকার চেয়ে দিল্লি আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল। দিল্লি আদালতের রায় তাঁর পক্ষে যায়নি। রায়ে দিল্লি আদালত বলেছিল, 'তিনি অবিবাহিত হওয়ায় এই আইনের অধীনে গর্ভপাতের অধিকারী নন। গর্ভাবস্থা একটি সম্মতিমূলক সম্পর্ক অনুসরণ করে।' সেই সময় মহিলা জানিয়েছিলেন তিনি ২৩ সপ্তাহের গর্ভাবতী। এই সময়ের মধ্যে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কোনও বিবাহিত মহিলা গর্ভপাত করাতে পারতেন- পারস্পরিক সম্মতিতে। তারপর সেই মহিলাই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়।  

সুপ্রিম কোর্টে মহিলা  জানিয়েছিলেন,  তিনি গর্ভাবতী। কিন্তু এই অবস্থায় তাঁর সঙ্গী তঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করছেন। তিনি আরও জানিয়েছিলেন, পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। তাঁর বাবা মা কৃষক। কৃষিকাজ করেই তাঁদের দিন চলে। এই অবস্থায় তাঁকে জোর দিয়ে সন্তান পালন করানো প্রায় অসম্ভব। 

মহিলার কোনও ক্ষতি হবে না- মেডিক্যাল বোর্ডের এজাতীয় ছাড়পত্রের পরই ২১ জুলাই আদালত ভ্রূণ গর্ভপাতের অনুমতি দেয়। আদালত গর্ভপাতের অধিকারের বিষয়ে বৈবাহিত অবস্থার প্রশ্নের সমাধান করার জন্য কেন্দ্রের কাছে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। গত ২৩ অগাস্ট এটি গর্ভপাত আইনের ব্যাখ্যার ওপর তার রায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল। 

অন্যদিকে এদিন নিরাপদ গর্ভপাত দিবস। আর সেই কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য একটি আইন সংক্রান্ত ডিজিটাল সংবাদ মাধ্য বার অ্যান্ড ব্রাঞ্চকে স্বাগত জানিয়েছেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। আদালতেই তিনি বলেছেন, আজই যে বিশ্ব নিরাপদ গর্ভপাত তা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি বলেছেন, এই দিনের সঙ্গে এই রায় সম্পর্ণ এক। বিচারপতির কথায় এই সম্পূর্ণ এক। 

Share this article
click me!