বিহারের (Bihar) পূর্ব চম্পারন (East Champaran District) জেলায় তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম রামায়ণ মন্দির (Great Ramayana Temple)। এই মন্দির শুধু হিন্দুদের বিশ্বাসের কেন্দ্রই নয়, হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের (Hindu-Muslim Unity) দৃষ্টান্তও হতে চলেছে, কেন জানেন?
হিজাব বিতর্ক (Hijab Controversy), কাশ্মীরি পণ্ডিত সম্প্রদায়ের গণহত্যার (Genocide of Kashmiri Pandits) মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দেশে যখন, সাম্প্রদায়িক ভেদ ক্রমে বাড়ছে, সেই সময়ই গোটা দেশের সামনে উদাহরণ স্থাপন করল বিহারের (Bihar) এক মুসলিম (Muslims) পরিবার। পূর্ব চম্পারন (East Champaran District) জেলার চকিয়া-কেশরিয়ার কাছে জানকিপুরে (Jankipur) এলাকায় তৈরি হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম রামায়ণ মন্দির - 'বিরাট রামায়ণ মন্দির' (Great Ramayana Temple)। আর এই মন্দির নির্মাণের জন্যই জমি দান করেছেন ওই মুসলিম পরিবার, যার বাজার মূল্য ২.৫ কোটি টাকা! তাই, এই রামায়ণ মন্দির শুধু হিন্দুদের বিশ্বাসের কেন্দ্রই নয়, হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের (Hindu-Muslim Unity) দৃষ্টান্তও হতে চলেছে।
এই বিরাট রামায়ণ মন্দিরটি নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে পাটনার মহাবীর মন্দির ট্রাস্ট (Mahabir Mandir Trust, Patna)। ট্রাস্টের প্রধান তথা প্রাক্তন আইপিএস অফিসার, আচার্য কিশোর কুনাল (Acharya Kishore Kunal) জানিয়েছেন, ওই মুসলিম জমিদাতার নাম ইশতিয়াক আহমেদ খান (Ishtiaq Ahmed Khan)। তিনি বর্তমানে ব্যবসার কাজে অসমের গুয়াহাটিতে (Guwahati, Assam) বসবাস করলেও, আদতে তিনি বিহারের পূর্ব চম্পারনেরই বাসিন্দা। সম্প্রতি তিনি, কেশরিয়া মহকুমার রেজিস্ট্রার অফিসে (Keshariya Sub-Divisional Registrar's Office) গিয়ে, মন্দির নির্মাণের জন্য তাঁর পারিবারিক জমি দান সংক্রান্ত সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছেন। কিশোর কুনাল আরও বলেছেন, ইশতিয়াক আহমেদ খান ও তাঁর পরিবারের এই অনুদান, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের একটি বিরাট উদাহরণ।
আচার্য সাফ জানিয়েছেন, মুসলমানদের সাহায্য ছাড়া এই স্বপ্নের হিন্দু মন্দির প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা কঠিন ছিল। ইশতিয়াক খানই সিংহভাগ জমি দিলেও, স্থানীয় আরও বেশ কয়েকটি মুসলিম পরিবারও এই মন্দির নির্মাণের জন্য জমি দান করেছে মহাবীর মন্দির ট্রাস্টকে। পাটনার হনুমান মন্দিরের পক্ষ থেকে এই প্রত্যেকটি পরিবারকে সম্মান জানানো হবে। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত ট্রাস্টের হাতে ১২৫ একর জমি এসেছে। তারা আশা করছে শীঘ্রই এই এলাকায় আরও ২৫ একর জমি তারা পাবে। আর তারপরই সেই জমিতে তৈরি হবে, বিরাট রামায়ণ মন্দির।
জমির কাগজ হস্তান্তর করছেন ইশতিয়াক খান
কত বড় হবে এই মন্দির? বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বড় রামায়ণ মন্দিরটি রয়েছে কাম্বোডিয়ার (Cambodia) আঙ্কোরভাটে (Angkor Wat Temple Complex)। পূর্ব চম্পারণের মন্দিরটি উচ্চতায়, বারোশ শতাব্দীতে তৈরি এই বিশ্ব-বিখ্যাত আঙ্কোরভাট মন্দিরের থেকেও লম্বা হবে। নির্মাণ কাজ শেষ হলে, এর উচ্চতা দাঁড়াবে ২৭০ ফুট। ১৫০ একর জমির উপর তৈরি হতে যাওয়া মন্দিরটি লম্বা ও চওড়ায় হবে যথাক্রমে ১০৮০ ফুট এবং ৫৪০ ফুট। গোটা মন্দির কমপ্লেক্সে মোট ১৮ টি মন্দির থাকবে। শিধু তাই নয়, এই মন্দির কমপ্লেক্সের শিব মন্দিরে যে শিবলিঙ্গটি থাকবে, সেটি হবে বিশ্বের বৃহত্তম শিবলিঙ্গ। ফলে, রামায়ণ মন্দিরটি বিহারের সর্বশ্রেষ্ঠ মন্দির তো হতে চলেছেই, এটি দেশের বৃহত্তম মন্দিরগুলিরও অন্যতম হবে।
সব মিলিয়ে এই মন্দির প্রকল্পের খরচ আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকা। একই সঙ্গে মন্দিরটি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যাতে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এর মহিমা বজায় থাকে। প্রথম মন্দিরটির নকশা এমনভাবে করা হয়েছিল, যাতে এর কাঠামোটি ন্যূনতম ১০০ বছর টিকে থাকে। পরে, এর কাঠামোগত নকশায় বিশেষ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে, এখন দাবি করা হচ্ছে, মন্দিরটি ন্যূনতম আড়াইশো বছর টেকসই হবে।
বিরাট রামায়ণ মন্দির তৈরির ব্যানার
এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (CPWD) প্রাক্তন ডিরেক্টর বিনীত জয়সওয়ালকে (Vinit Jaiswal) এই নির্মাণ প্রকল্পের মুখ্য পরামর্শদাতা হিবাসে নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আচার্য কিশোর কুনাল। পাশাপাশি, ট্রাস্টের পক্ষ থেকে শীঘ্রই নয়াদিল্লিতে নতুন সংসদ ভবন নির্মাণে নিয়োজিত বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেওয়া হবে। প্রথমে পুরো মন্দিরটি লোহা, সিমেন্ট এবং শক্ত কাচ দিয়ে তৈরির পরিকল্পনা করা হলেও, পরিবর্তিত নকশা মেনে এখন এর কাঠামো নির্মাণে বিশেষ ধরনের ইস্পাত ব্যবহার করা হবে। ইতিমধ্য়েই, মন্দিরের বাইরের চত্বর তৈরির কাজ শুরু করে দেওয়া হয়েছে।