ভারত থেকে দ্রুত হারাচ্ছে শৈশব
ভারি ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যেতে হয় খুদেদের
নিজের আশপাশ চেনার আগেই ডুবে যায় পড়ায়
শৈশব বাঁচাতে ভারত সরকারের নয়া উদ্যোগ
মানব জীবনে যে বয়সটাকে গোল্ডন 'টাইম অফ দা লাইফ' বলা হয়, যে সময়ে শুধুই মজা আর মজা থাকে। সাংসারিক বাস্তবিক জীবনের টেনশন, পড়াশোনার চাপ কাকে বলে তা বোঝা যায় না। দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনাবিল আনন্দ ঘেরা থাকে যে সময়টা তাকেই বলে শৈশব। কিন্তু এখন শৈশব হারাতে শুরু করেছে। বাড়িতে মাকে নকল করে খেলনা বাটি খেলার বদলে শৈশবকে এখন ভারি ব্যাগ নিয়ে স্কুলে ছুটতে হয়। ভালো করে জ্ঞান হওয়ার আগেই পরীক্ষা বা পড়াশোনার চাপ তাকে গ্রাস করতে থাকে। অথচ কোনও শিশু তিন বছর বয়স থেকেই তাদের আশেপাশের পরিবেশ, বাবা-মার বাইরে আত্মীয় স্বজনকে চিনতে শুরু করে। সেই সময় থেকে বাইরের পৃথিবী সম্পর্কে একটা সাম্যক ধারণা পেতে শুরু করে।
এই পরিস্থিতিতে তাদের পড়াশোনা, একঘেয়ে রুটিন, পরীক্ষা পাশ ফেল, ভালো নম্বরের চাপ পড়তে শুরু করলে, আশপাশ নিয়ে যে শুধু শিশুদের আগ্রহ কমে যাবে তা নয়, পড়াশোনার প্রতি তাদের একটা অনীহা চলতে আসতে পারে। শিশু মনরোগ বিশেষজ্ঞরা আজকে নয়, বহুদিন আগে থেকে এই ধরনের কথা বলেছেন। কিন্তু সেই কথায় গুরুত্ব দিতে নারাজ ছিলেন অভিভাবক বা স্কুল কর্তৃপক্ষরা। নিজেদের নিয়মে তারা পড়াশোনার চাপ দিত শিশুদের ওপর। ছোট্ট বয়স থেকে তাদের মাথার ওপর পড়ত ভালো নম্বর নিয়ে আসার চাপ। সেই চাপ থেকে মুক্তি দিতে এবার আসরে নামল মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ এডুকেশনাল রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং (এনসিইআরটি)-এর তরফে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। সেখানে জানানো হয়েছে, তিন থেকে ছয় বছরের মধ্যে থাকা শিশুদের কোনও পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। এমনকী মৌখিক পরীক্ষাও নেওয়া যাবে না। মানব সম্পদ উন্নয়নের এই কাউন্সিলের তরফে জানানো হয়েছে, বর্তমানে ভারতে স্কুলের আগে শিশুদের কিন্ডার গার্ডেনের মতো স্কুলে পড়ানোর ঝোঁক বেড়েছে শিশুদের মধ্যে। মূলত, স্কুল যাওয়ার আগে শিশুদের স্কুল যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করার জন্য এই জাতীয় স্কুলের আবির্ভাব হলেও, সম্প্রতি সেখানেও বেড়েছে পড়ার চাপ, পরীক্ষার চাপ, ভালো নম্বর তোলার চাপ। যার জেরে শিশুদের শৈশব অচিরেই হারিয়ে যাচ্ছে।
এনসিইআরটির তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শিশুরা কীভাবে সাধারণের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছে, তারা নতুন নতুন বন্ধু করতে পারছে কি না, পরিবারের সঙ্গে কীভাবে মিশছে তার মূল্যায়ন করতে হবে কিন্ডার গার্ডেন জাতীয় স্কুলগুলোতে। শুধু তাই নয়, সেখানেও কোনও নম্বর বা পাশ ফেলের হিসেব দিতে পারবে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিশুদের রিপোর্ট কার্ডে এই বিষয়ে বিস্তারিত লিখতে হবে। এই রিপোর্ট বছরে অন্তত দুবার শিশুদের অভিভাবকের কাছে পাঠাতে হবে। যাতে চোখের আড়ালে আর পাঁচ জনের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করে, কথা বলে, সেই বিষয়ে একটা ধারণা পেতে পারেন অভিভাবকরা। এনসিইআরটি জানিয়েছে, শিশুদের বয়সের কথা মাথায় রেখে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার শেখাতে হবে। যাতে তাদের স্কুলে যাওয়ার প্রতি বা নতুন কিছু শেখার প্রতি আগ্রহ বাড়ে।