নিয়ন্ত্রিত সীমারেখা ধরে ফের ভারতের উপরে হামলা পাকিস্তানের। রবিবার ভোর থেকে পুঞ্চ সেক্টরে নিয়ন্ত্রিত সীমারেখা বরাবর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তানের সেনা। সকাল ৬.১৫টা থেকে ভারতীয় সেনার চৌকি লক্ষ করে উড়ে আসতে থাকে গুলি, মর্টার শেল, ছোট গোলাও। নিয়ন্ত্রিত সীমারেখার যেখানে এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করা হয়েছে ঠিক তার কাছেই রয়েছে বালাকোট সেক্টর। এই বালাকোটেই ভারত সার্জিকাল স্ট্রাইক করেছিল। তবে, পাকিস্তানের হামলা জবাব দিচ্ছে ভারতীয় সেনা। এখনও পর্যন্ত পাওয়া খবরে ভারতীয় সেনাও এই অনৈতিক হামলার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
দিন কয়েক আগেই লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চিনা ফৌজের সঙ্গে ভারতীয় সেনার হাতাহাতি ও বচসা হয়। এতে ২০ জন ভারতীয় সেনা শহিদ হয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী মোট ৭৬ জন জওয়ান এতে জখম হয়েছিলেন। ভারতীয় সেনার উপযুক্ত জবাবে চিনা ফৌজেরও অন্তত ৪৫ জন মারা গিয়েছেন। যদিও, সরকারিভাবে চিন এত সংখ্যক চিনা ফৌজের মারা যাওয়ার খবর স্বীকার করছে না। চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস অবশ্য ৩৫ জনেরও বেশি চিনা ফৌজের মৃত্যুর কথা দাবি করেছে। প্রায় সাড়ে চার দশক পরে ভারত ও চিনের সেনার মধ্যে সামান্য হাতাহাতি ও মারপিঠে এত সংখ্যক প্রাণ ঝরেছে। এই ঘটনার পর থেকেই লাদাখ সেক্টরে উত্তেজনা চরমে। ভারত চিন-কে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কারণ, চিনা ফৌজ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল পার করে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল শুধু নয় বেআইনিভাবে একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের ভূমিও দখল করেছিল। এরপরও ভারতীয় সেনা যথেষ্ট শান্তির সঙ্গে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য চিনা ফৌজের কাছে আবেদন রেখেছিল। সেই মোতাবেক ভারতীয় সেনার বহু আবেদন ও অনুরোধের পর চিনা ফৌজ লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের ওপারে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু, তাদের তাবু, ওয়াচ টাওয়ার কিছুই তারা সরায়নি। পরে ভারতীয় সেনা সেগুলি সরাতে গেলে চিনা ফৌজ ফের লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল পার করে এসে হামলা করে। গত কয়েকদিন এই ইস্যুতে রীতিনমতো গরম হয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনীতিক মহল।
চিন এর আগেও বহুবার জোর করে ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে। পরে ফ্ল্যাগ মিটিং-এর মাধ্যমে তাদের নিজেদের ভূমিতে ফেরত পাাঠানো হয়েছে। কিন্তু, করোনাভাইরাসের এই আবহে চিনের এবারের আগ্রাসন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভারতের উপর হামলা-কে আর খাটো করে দেখছে না দিল্লি। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উপযুক্ত জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বহু বছর থেকেই কূটনৈতিক কারণে চিন ও পাকিস্তান একে অপরের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে এবং দুই দেশের সেনাই নানা সময়ে এলওসি এবং এলএসি বরাবর ভারতীয় সেনাদের নিশানা করেছে। ফলে, পাকিস্তানের এদিনের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন চিনার সঙ্গে কূটনৈতিক আঁতাতে তৈরি হওয়া ষড়যন্ত্রের ফল বলেই মনে করা হচ্ছে। গত দেড় বছরে পাকিস্তান যেভাবে জম্মু ও কাশ্মীরে এলওসি এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ভারতীয় সেনার উপর হামলা করেছে, তার সংখ্যাটা তার আগের চার বছরে হওয়া যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সংখ্যার থেকে অনেক বেশি।