তবরেজকাণ্ডে এবার মুখ খুললেন প্রধানমন্ত্রী। বুধবার রাজ্যসভায় জবাবী ভাষণে এই মৃত্যু নিয়ে মুখ খোলেন। তিনি বলেন, 'ঝাড়খণ্ডের কথা এল সংসদে। এই যুবকের মৃত্যুতে আমি দুঃখিত। দোষীরা সাজা পাক চাই আমি। কিন্তু গোটা রাজ্যকে এর কারণে খারাপ দেগে দেওয়া ঠিক কথা নয়। এই রাজনীতি করলে কখনও উন্নতি হবে না। ঝাড়খণ্ডেও সজ্জন ব্যক্তি থাকেন। আইন আইনের পথে ব্যবস্থা নিক। দোষী শাস্তি পাক। হিংসা পৃথিবীকে আমার-তোমার বলে ভেঙে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ হোক বা ঝাড়খণ্ড, সর্বত্রই হিংসাকে রোখার মানদণ্ড এক। দেশের সমস্ত নাগরিকের সুরক্ষার নিশ্চয়তার দায় আমাদের নিতে হবে। আমরা সবকা সাথ সবকা বিকাশ মন্ত্রে হেঁটেছি। আমরা এর সঙ্গে পেয়েছি সবকা বিশ্বাস। রাজনীতির চশমা খুলে দেখুন সবাই।'
ঝাড়খণ্ডে গত ১৭ জুন গণপিটুনিতে মৃত্যু হয়েছিল তবরেজ আনসারির। জামশেদপুর থেকে তবরেজ ও তাঁর দুই বন্ধু বাড়ি ফিরছিলেন। সেই সময় বাড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে তাদের আটক করে কিছু উত্তেজিত জনতা। তারা সেসময় এক মোটরবাইক চোরকে খুঁজতে বেরিয়েছিল। তবরেজ ও তার সঙ্গীদের মোটরবাইক চোর সন্দেহে আটক করে জনতা। বেগতিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তবরেজের দুই সঙ্গী। কিন্তু, আটকা পড়ে যায় তবরেজ। মোটরবাইক চুরির অপবাদে তাকে মার শুরু হয়। ইতিমধ্যে উন্মত্ত জনতা তবরেজ-এর নাম জানতে পারে। অভিযোগ, মুসলিম নাম শোনার পর মারের মাত্রা আরও বেড়়ে যায়। তাঁকে জোর করে জয় শ্রীরাম বলানো হয়। এত কিছুতেও অবশ্য শেষরক্ষা করতে পারেননি সেই যুবক। বেদম প্রহারে তবরেজের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করলেও বাঁচেনি তবরেজ। অত্যাধিক রক্তক্ষরণ এবং শরীরের ভিতরের বেশ কিছু গ্ল্যান্ড ফেটে যাওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশের বিরুদ্ধেও তবরেজকে হাসপাতালে দেরিতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোহ ওঠে। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। ইতিমধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার করা হলেও বিজেপি-র দিকে আঙুল তুলেছে অনেকে।
তবরেজের মর্মান্তিক মৃত্যু নিয়ে এতদিন কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষেও কোনও বয়ান দেওয়া হয়নি। এমনকী বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বও এই নিয়ে খুব একটা প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি। ফলে, লোকসভার অধিবেশনে বারবারই বিজেপি-র বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা। এহেন পরিস্থিতিতে বুধবার প্রধানমন্ত্রী তবরেজকাণ্ডে শুধু মুখ খুললেন না সেই সঙ্গে জানালেন তাঁর সরকার ও দলের অবস্থানের কথাও।