কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি নিয়ে যে নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে, তার হাওয়া গিয়ে পড়ছে সূদূর কার্মাটোড়ে। হ্যাঁ, ক্ষোভে ফুঁসছে কার্মাটোড়। একদিন দুই দিন নয়, বিদ্যাসাগর এখানে প্রায় জীবনের দুই দশক কাটিয়েছেন। তাঁর জীবনাবসানও এইখানেই। বিদ্যাসাগর মারা যান ১৮৯১এ। ১৮৭৩ থেকে ১৮৯১ ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন কার্মাটোড়ের নন্দনকাননের সাঁওতালপল্লিতে কাটান।
রাজ্যে যখন বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা নিয়ে তুমুল অশান্তির পরিবেশ, গোটা বাঙালি জাতি ঘটনার অভিঘাতে শোকস্তব্ধ, তখন তার ঢেউ গিয়ে পড়ছে কলকাতা থেকে বহু দূরে ঝাড়খণ্ড-বাংলা সীমান্তের কার্মাটোড়েও। "গোটা ঘটনায় আমরা শোকস্তব্ধ। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক, এই আমাদের দাবি।" বলছেন বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান দিলীপকুমার সিংহ। এই কমিটির হাচতেই রয়েছে বিদ্যাসাগরের কার্মাটোড়ের বাসভবনের দেখভালের দায়িত্ব।
মাত্র ২৪০০০ টাকার বিনিময়ে ১৯৭৪ সালে এই বাড়িটি কিনে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেয় বিহার বাঙালি অ্যাসোশিয়েসান। ১৫০০০ টাকা দিয়ে সাহায্য করেছিলেন তৎকালীন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী আব্দুল গফফর। ক্রমে সেখানে হয়েছে বিদ্যাসাগরের আবক্ষ মূর্তি বসানো হয়েছে। রয়েছে বিদ্যাসাগরের স্মৃতিবিজরিত বহু জিনিসও। আজও এই বাড়ির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী এই বাড়িটিকে হেরিটেজের মর্যাদা দিতে চান। রয়েছে তাঁর নামে হোমিওপ্যাথি দাতব্য চিকিৎসালয়। তবে তাঁর নামাঙ্কিত স্কুলটি বন্ধই হয়ে গিয়েছে অর্থাভাবে।
বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর পরে, অ্যাসোশিয়েশান দায়িত্ব নেওয়ার আগে এই বাড়িতে আরএসএস-এর ড্রিল হত। রাষ্ট্রীয় সেবক সংঘের কড়া নজর থেকে বিদ্যাসাগরের স্মৃতি রক্ষার উদ্যোগেই সেদিন নড়েচড়ে বসেছিলেন বাঙালিরা। আজ কয়েক দশক পেরিয়ে ফের ধর্মসংকট। প্রাণের ঠাকুর বিদ্যাসাগরকে নিয়ে টানাটানি। এলাকাবাসীরা বলছেন, প্রাণ থাকা পর্যন্ত বাড়িটির গায়ে আঁচ লাগতে দেবে না কার্মাটোড়।