১০ বছর আগে ছিঁড়ে ফেলা অধ্যাদেশই কাল হল রাহুল গান্ধীর। যা আজ তাঁকে বাঁচাতে পারত। যাইহোক রাহুল গান্ধী ইস্যুতে জোর তরজা কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে।
রাহুল গান্ধী আর সাংসদ নন। তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে গেছে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বিজেপি। রাগুল গান্ধীর পাশে থাকার বার্তা দিয়ে কংগ্রেস জানিয়েছে, তারা কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আইনি ও রাজনৈতিক লড়াই লড়বে। পাশাপাশি কংগ্রেসের অভিযোগ রাহুল গান্ধীক কণ্ঠরোধ করতেই এই পদক্ষেপ। পাল্টা আসরে নেমেছে বিজেপি। দলের পক্ষ থেকে কংগ্রেসের সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে। পাশআপাশি বিজেপি বলেছে, আইন মেনেই পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের গুঞ্জন রাহুল গান্ধী নিজের করব ১০ বছর আগেই নিজেই খুঁড়ে ছিলেন।
বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ার মাত্র এক ঘণ্টা আগেই সংসদে উপস্থিত ছিলেন রাহুল গান্ধী। তিনি সংসদ কমপ্লেক্সে দলীয় সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। তবে অবার করার মত ঘটনা হল ২০১৩ সালে ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং আমলে সুপ্রিম কোর্ট জনপ্রতিনিধি আইনের বিধান বাতিল করার জন্য একটি রায়কে ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় একটি অধ্যাদেশ এনেছিল তাঁর সরকার। যার উদ্দেশ্য ছিল অপরাধী বা দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত রাজনীতিকদের বাঁচানো। এই অধ্যাদেশে বলা হয়েছিল,জনপ্রতিনিধি আদালতে আবেদনের জন্য তিন মাস সময় পাবেন। কিন্তু আইনে বলা হয়েছিল, দুই বছর বা তারও বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত সাংসদকে অযোগ্য ঘোষণা করা হবে- যেদিন থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেই রাহুল গান্ধী নিজেই অধ্যাদেশের বিরোধিতা করেছিলেন। প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে একটি প্রেস কনফারেন্সে অধ্যাদেশটি ছিঁড়ে ফেলেছিলেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের জানিয়ে ছিলেন অধ্যাদেশ সম্পর্কে 'এটাই' তাঁর মতামত। ১০ বছরে সেই আইনের ফাঁসেই ফেঁসে গেলেন কংগ্রেস নেতা। সেই সময় অধ্যাদেশ কার্যকর হলে এত তা়ড়াতাড়ি তাঁর সাংসদ পদ খারিজ হত না। আদালতে আবেদন করার সময় পেতেন তিনি।
২০১৩ সালে জনপ্রতিনিধি আইনের ৮(৪) ধারায় বলা হয়েছে অযোগ্যতা শুধুমাত্র দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ থেকে তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পরে কার্যকর হয়। এই সময়ের মধ্যে সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করতে পারেন সাংসসদরা। কিন্তু লিলি থমাস বনাম ভারত সকরার মামলায় ২০১৩ সালের রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে RPA ৮(৪) ধারাকেই অসাংসবিধানিক বলে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। তারপরই মনমোহন সিং দোষী সাব্যস্ত সাংসদদের বাঁচাতে একটি অধ্যাদেশ জারি করেন করেন। সেই অধ্যাদেশই ছিঁড়ে ফেলেছিলেন রাহুল গান্ধী।
রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ ভারতীয় গণতন্ত্রের জন্য একটি কালো দিন। আইনি পথে লড়াই হবে বলেও জানিয়েছেন কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি আরও বলেন, সত্য কথা বলা, সংবিধানের জন্য লড়াই করা ও জনগণের আইনি অধিকারের জন্য লড়াই করার কারণেই তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। পাল্টা বিজেপি নেতা জেপি নাড্ডা বলেছেন, রাহুল গান্ধী ওবিসি সম্প্রদায়কে চোরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সেই কারণেই আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করছে। পাল্টা খাড়গে বলেন, ললিত মোদী বা নীরব মোদী কেই দলিত বা ওবিসি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নয়। রাহুল গান্ধী গোটা দেশের সত্য মানুষের সামনে তুলে ধরেছে তাই বাধা দেওয়া হয়েছে তাঁকে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ ও কেসি ভেনুগোপাল বলেন, রাহুল গান্ধী ইস্যুতে আইনি পথে লড়াই হবে। কংগ্রেস ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তাঁরা বলেছেন আইনের পথে সত্যের জয় হবে বলেও তাঁরা আশাবাদী।
সংসদীয় বিষয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশী বলেছেন, এটি আইনি সিদ্ধান্ত। কংগ্রেস বিচার বিভাগকেই প্রশ্ন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, সিদ্ধান্ত আদালত নিয়েছে। তাই কংগ্রেস কার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে তা স্পষ্ট নয়। বিজেপি নেতা ভূপেন্দ্র যাদব বলেছেন, রাহুল গান্ধীকে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছিল। সমস্ত নিয়ম মেনেই তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে আপ নেতা তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেন, মোদীর নেতৃত্বে দেশ ধ্বংস করার প্রক্রিয়াই হল রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ করে দেওয়া। অন্যদিকে অখিলেশ যাদব বলেন, মুদ্রাস্ফীতি ও আর্থিক সমস্যা থেকে দেশের মানুষের নজর ঘোরাতেই রাহুল গান্ধীর সাংসদ খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধীরা রাহুল গান্ধী ইস্যুতে একহাত নিয়েছে কংগ্রেসকে।