নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে রীতিমতো তাণ্ডব চলেছে রাজ্যে। ভাঙচুর করা হয়েছে স্টেশনে, পুড়েছে ট্রেন। পরিষেবা তো ব্যাহত হয়েইছে, আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বিপুল। আর এই ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ি করে এবার আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে রেল। দায়ের করা হবে দেওয়ানি মামলা।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। প্রথম যেদিন আন্দোলন শুরু হয়, সেদিন থেকেই বিক্ষোভকারীদের নিশানায় রেল। হাওড়ার উলুবেড়িয়া স্টেশনে ট্রেন অবরোধ করেন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষেরা। স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় ট্রেন লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়েন বিক্ষোভকারীরা। মুর্শিদাবাদ, মালদহে একাধিক স্টেশনে চলে ভাঙচুর। মুর্শিদাবাদের কৃষ্ণপুর স্টেশনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয় লোকো শেডে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি ট্রেনে। পুড়ে ছাই হয়ে পাঁচটি ট্রেনের একাধিক বগি। মালদহে ভালুকা রোড স্টেশনেও তাণ্ডব চালান বিক্ষোভকারীরা। এ রাজ্যে পরিষেবা তো বিঘ্নিত হয়েইছে, বিক্ষোভকারীদের তাণ্ডবে তিনশো কোটি টাকা আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে রেলের। কিন্তু এই ঘটনার দায় কার? রেলের বক্তব্য, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা দায়িত্ব রাজ্যের। বিক্ষোভকারীরাও বহিরাগত নন, সকলের পশ্চিমবঙ্গেরই নাগরিক। সেক্ষেত্রে প্রশাসন পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিলে, ট্রেন কিংবা স্টেশনে হামলার ঘটনা ঘটত না। শুধু তাই নয়, যে জায়গার উপর দিয়ে রেললাইন গিয়েছে, যে এলাকায় স্টেশন অবস্থিত, তার সবটাই রাজ্যের জমি, রাজ্যের সম্পত্তি। এ রাজ্যে রেলে সম্পত্তি নষ্টের দায় এড়াতে পারে না সরকার। জানা গিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের একটি নির্দেশকে সামনে রেখেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দায়ের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। তবে কোনও আদালতে মামলা দায়ের করা হবে, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি।
উল্লেখ্য, দিন কয়েক আগে সম্পত্তির রক্ষার দায় রেলের উপরই চাপান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়। তাঁর স্পষ্ট বার্তা, 'দু'একটা ছোট ঘটনা ঘটছে। আর তাতেই ট্রেন বন্ধ। রেলের সম্পত্তি রেলকেই রক্ষা করতে হবে।' বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে নাগরিকত্ব আইন বিরোধী হিংসা সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতেও রেলকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টি ওঠে। সরকারের তরফে আদালতকে জানানো হয়, রেলের সম্পত্তি ও রেললাইন নিরাপত্তার দায়িত্ব রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স বা আরপিএফ ও রেলওয়ে প্রোটেকশন স্পেশাল ফোর্স বা আরপিএসএফ-এর। রাজ্য়ে ৭১৫টি রেল স্টেশনে রয়েছে। গণ্ডগোল হয়েছে মোটে ৫ থেকে ৬টি ছোট স্টেশনে। রেল নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে না পারলে আদালতেরও যে কিছু করার নেই, শুনানি শেষে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণেও তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।