Roundup 2021: শত শত কোভিড-১৯ রোগীর মৃতদেহে অপবিত্র হল গঙ্গা নদীর জল


২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ভারতে হানা দিয়েছিল কোভিড-১৯ মহামারির বিধ্বংসী দ্বিতীয় তরঙ্গ। আর সেই সময়ই ভারতের পবিত্রতম নদী গঙ্গার জলে ভেসে উঠেছিল শয়ে শয়ে মৃতদেহ। 

ভারতের পবিত্রতম নদী গঙ্গা (River Ganga), বিশ্বের অন্যতম দীর্ঘ নদীও বটে। ২০২১ সালে এই নদীর জলই কলুষিত হয়েছে শত শত মানুষের মৃতদেহে। উত্তরপ্রদেশ, বিহার এমনকী পশ্চিমবঙ্গেরও বিভিন্ন স্থানে গঙ্গায় মৃতদেহ ভেসে উঠতে দেখা গিয়েছে। কোথাও নদীর পাড়ের বালি জলে ধুয়ে গিয়ে তার তলা থেকে বেরিয়ে এসেছে সাদা কাপড়ে মোড়া সারি সারি মৃতদেহ। দেহগুলি ময়নাতদন্তের মতো অবস্থায় ছিল না, কিন্তু অনুমান করা হয় এই সকল মৃতদেহই কোভিড-১৯ (COVID-19)'এ মৃতদের। সেই কারণেই এই মৃতদেহ ভেসে ওঠা নিয়ে গঙ্গাপাড়ের এলাকাগুলিতে ছড়িয়েছিল করোনা আতঙ্কও। তবে তার থেকেও বড় কথা হল, পবিত্র গঙ্গায় ভাসতে থাকা এই দেহগুলি বুঝিয়ে দিয়েছে, ভারতে কোভিড-১৯'এর সরকারি পরিসংখ্যানে বড়সড় ফাঁক রয়েছে।   

২০২১ সালের এপ্রিল মাসে নভেল করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে, ভারতে উত্থান ঘটেছিল করোনা মহামারির বিধ্বংসী দ্বিতীয় তরঙ্গের (COVID-19 Second Wave)। হাহাকার পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। প্রথম তরঙ্গে মহামারির প্রভাব মূলত শহরাঞ্চলে সীমিত থাকলেও, দ্বিতীয় তরঙ্গে ভাইরাস হানা দিয়েছিল গ্রামাঞ্চলেও। অক্সিজেনের অভাবে, চিকিৎসা পরিষেবার অভাবে, খাবি খেতে খেতে বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি রেকর্ড বলছে শুধু এপ্রিল মাসেই ২ কোটি ৫০ লক্ষের বেশি নতুন সংক্রমণ এবং ২ লক্ষ ৭৫ হাজার ভারতবাসীর মৃত্যু হয়েছিল। তবে, মহামারি বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই দাবি, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যাটা কয়েকগুণ বেশি। নদীর তীরে বালি সরে দেখা যাওয়া মৃতদেহগুলি, চব্বিশ ঘন্টা জ্বলন্ত চিতা, শ্মশানে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার স্থান ফুরিয়ে যাওয়া, আর গঙ্গায় ভাসা ওই লাশগুলি সরকারী তথ্যে না থাকা মৃত্যুগুলির প্রমাণ।

Latest Videos

প্রথম গঙ্গায় সারি সারি মৃতদেহ ভাসার খবর এসেছিল, ১০ মে, উত্তরপ্রদেশ (Uttar Pradesh) সীমান্তের কাছে বিহারের (Bihar) চৌসা গ্রামে গঙ্গার তীরে ৭১ টি মৃতদেহ ভেসে উঠেছিল। পচে যাওয়া মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্ত করে খুব একটা লাভ হয়নি। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, কয়েকটি ছিল দেহের অবশিষ্টাংশ, যেগুলি নদীর তীরে দাহ করার পরে সম্ভবত জলে ভেসে গিয়েছিল। কিন্তু, অনেক দেহ না দাহ করেই নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। একদিন পরই চৌসা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর জেলার গহমার গ্রামে নদীর তীরে কয়েক ডজন পচা মৃতদেহ কুবলে খেতে দেখা গিয়েছিল হিংস্র কুকুরের দল, কাক, শকুনদের। স্থানীয়রা দাবি করেছিল, মৃতদেহগুলি বেশ কয়েক দিন ধরেই বাঁধের উপর এসে জমছে, বিহারের ঘটনাটি সংবাদ শিরোনামে না আসা পর্যন্ত গ্রামবাসীদের অভিযোগ প্রশাসন কানেই নেয়নি। 

কয়েকদিন পর, পার্শ্ববর্তী বালিয়া জেলা স্নান করতে গিয়ে গ্রামবাসীরা দেখেছিলেন একইভাবে লাশ ভাসছে। স্থানীয় পুলিশ ৬২টি মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল। এরপর কনৌজ, কানপুর, উন্নাও এবং প্রয়াগরাজে নদীর তীরে আবিষ্কার হয়েছিল সারি সারি অগভীর কবর। গঙ্গার তীরে নদীর পারে মানব-আকৃতির বহু ঢিবি দেখা গিয়েছিল। সেইসব ঢিবি থেকে কোথাও কোথাও বেরিয়ে রয়েছে সাদা সাদরের অংশ। প্রত্যেকটির ভিতরে ছিল একেকজনের দেহ। উত্তরপ্রদেশ জুড়ে গঙ্গা নদীর তীরে এরকম বহু জায়গা থেকে ওই সময় এই ধরণের অগভীর কবর উদ্ধার হয়েছিল। 

হিন্দু ধর্মে মৃতদেহ দাহ করা হয়। কিন্তু অনেক সম্প্রদায় আবার শিশু মৃত্যু, অবিবাহিত মহিলাদের মৃত্যু হলে বা সংক্রামক রোগ কিংবা সাপের কামড়ে মারা গেলে, মৃতদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেয়, যাকে 'জল প্রবাহ' বলে। ভারতের দরিদ্র প্রান্তিক মানুষদের অনেকেরই দেহ দাহ করার মতো সামর্থ্যও থাকে না। তাই অনেক ক্ষেত্রেই তারা সাদা কাপড়ে মৃতদেহ মুড়ে জলে ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হয়। মহামারি বলে নয়, স্বাভাবিক সময়েও গঙ্গায় মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। তবে, তা একটি কি দুটি। অল্প সময়ের মধ্যে, নদীর তীরে এতগুলি জায়গা জুড়ে  এরকম শয়ে শয়ে দেহ ভাসতে এর আগে দেখা যায়নি। 

আর এটাই সরকারি পরিসংখ্যান সারবত্তাহীনতার ব় প্রমাণ। সরকারি হিসাব বলছে, ১৬ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত কানপুরে ১৯৬ জনের করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে। অথচ, শহরের সাতটি শ্মশানের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৮,০০০ কোভিড রোগীর সৎকার করা হয়েছে। বৈদ্যুতিক চুল্লি ২৪ ঘন্টা করে চালিয়েও সামাল দেওয়া যায়নি। প্রশাসন শ্মশানের জন্য বাইরের মাঠে কাঠের চিতায় দেহ পুড়িয়েছে। তবে সেখানে শুধু শংসাপত্রসহ হাসপাতাল থেকে আসা কোভিড মৃতদেহগুলির শেষকৃত্য চলছিল। এর বাইরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা-চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে যে বহু সংখ্যক মানুষ মারা গিয়েছে তাদের মৃতদেহগুলি শহরের উপকণ্ঠে বা উন্নাওয়ের মতো পার্শ্ববর্তী জেলায় নিয়ে গিয়েছিল তাদের পরিবার পরিজনরা। সেখানেও কাঠ বা দাহ করার জায়গার অভাব হলে, বাধ্য হয়ে নদীর তীরে তাদের কবর দিতে হয়েছে।

সব থেকে মর্মান্তিক হল, এই অজ্ঞাত দেহগুলি প্রত্যেকেই কারোর না কারোর ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, বাবা কিংবা মা। মৃত্যুর পর তাদের কিছুটা অন্তত সম্মান প্রাপ্য ছিল। কিন্তু তাঁরা সরকারি পরিসংখ্যানের অংশও হয়ে উঠতে পারেননি। অজ্ঞাত পরিচয়ে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে, শেষ শোয়া শুতে হয়েছে কোনও এক অজানা কবরে। যেখান থেকে আবার দেহ ছিঁড়ে খেয়েছে শেয়াল-কুকুরে। ২০২১-এ প্রকৃত অর্থেই বলা যায়, 'রাম তেরি গঙ্গা মেইলি'। 
 

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari Live: এগরায় জনসভা শুভেন্দুর, কী বার্তা, দেখুন সরাসরি
Dev Adhikari : এবার কী আসছে খাদান ২? খাদান সাফল্য পেতেই বড়সড় ঘোষণা দেব-যীশুদের
শুভেন্দুকে পাল্টা দিতে গিয়ে হাসির খোরাক বাংলাদেশের এই নেতা | Suvendu Adhikari | Bangladesh News
Narendra Modi : 'কুয়েত যেন মিনি হিন্দুস্তান', কুয়েত সফরে এসে কেন বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?
Narendra Modi : কুয়েতের সঙ্গে সম্পর্কে জোর ভারতের, দেখুন কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী