১৯৩৭ সালে আজকের দিনেই চলে গিয়েছিলেন বিশ্ববরেণ্য বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রয়াণ দিবসে ফিরে দেখা তাঁর আবিষ্কার

শুধু উদ্ভিদের প্রাণ আবিষ্কার নয়, তাঁর বিখ্যাত আবিষ্কারগুলির মধ্যে রয়েছে মাইক্রোওয়েভ রিসিভার, ট্রান্সমিটারের উন্নয়ন, এবং ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রও। 

Sahely Sen | Published : Nov 23, 2022 4:22 AM IST

বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান শুধুমাত্র ভারতের নয়, সমগ্র মানব সভ্যতার উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। পদার্থবিজ্ঞান এবং উদ্ভিদবিদ্যা উভয় জগতেই ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। শুধু বিশ্ববরেণ্য বাঙালি হিসেবে নয়, সম্পূর্ণ পৃথিবীর ইতিহাসে তাঁর আবিষ্কার আজও প্রভূত গুরুত্বপূর্ণ।

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুই প্রথম মাইক্রোওয়েভ প্রযুক্তির ওপর সফল গবেষণা করেন যার ফলস্বরূপ আবিষ্কার হয় রেডিও। তাঁর বিখ্যাত আবিষ্কারগুলির মধ্যে রয়েছে মাইক্রোওয়েভ রিসিভার, ট্রান্সমিটারের উন্নয়ন, এবং ক্রেসকোগ্রাফ যন্ত্রও, যার দ্বারা গাছের বৃদ্ধি নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা যায় । উদ্ভিদের জীবনচক্র তিনিই প্রমাণ করেছিলেন।

বিজ্ঞানী বসুর জন্ম ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। তাঁর পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে বিক্রমপুরের রাঢ়িখালে। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় ফরিদপুরের একটি স্কুল থেকে। এরপর ১১ বছর বয়সে তিনি কলকাতা চলে যান এবং সেখানে সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১৮৭৫ সালে এন্ট্রাস পাশ করেন। এরপর বিজ্ঞানে স্নাতক হন ১৮৭৯ সালে এবং উচ্চশিক্ষার জন্য চলে যান ইংল্যাণ্ডে। কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিষয়ে বি.এ. পাশ করেন। ১৮৮৪ সালে লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি. ডিগ্রি লাভ করেন।

ইংল্যাণ্ড থেকে তৎকালীন অবিভক্ত ভারতে ফেরার পর জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক হয়ে যোগ দেন। ১৮৯৪ সাল থেকে শুরু করেছিলেন বৈদ্যুতিক তরঙ্গের ওপর গবেষণা। তার ঠিক ২ বছর পর ১৮৯৬ সালে লণ্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টর অফ সায়েন্স উপাধি পান।

ড. জগদীশ চন্দ্র বসুকে ভারতীয় উপমহাদেশে বিজ্ঞান চর্চার জনক বলা হয়। বাস্তবে বিশ্বে বেতারের আবিষ্কারক হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছিলেন মার্কনি, কারণ জগদীশ বসু বেতার তরঙ্গের আবিষ্কারক হিসেবে নিজের নামে পেটেন্ট করেননি। এ কারণেই এই আবিষ্কারের জন্য তাঁর নাম স্বীকৃত হয়নি বলে মনে করেন বিশ্বের বহু বিজ্ঞানীরা। বহু বিশেষজ্ঞদের দাবি, জগদীশ চন্দ্র বসুই প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ।

মনে করা হয়, তিনিই সবচেয়ে প্রথম আবিষ্কার করেছিলেন গাছপালার প্রাণ আছে। কিন্তু, জানা যায় যে, অতি প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষের মানুষ বিশ্বাস করতো গাছ একটা জীবন্ত স্বত্ত্বা। একই বিশ্বাস করতেন অ্যারিস্টটলও। তাহলে বিজ্ঞানী বসুর আবিষ্কারে বিশেষত্ব কোথায় ছিল?

বিজ্ঞানীদের মতে, গাছের যে প্রাণ আছে, সেই বিষয়টি গাছের জন্ম নেওয়া, বা বড় হওয়া কিংবা মরে যাওয়া দেখে বুঝতে পারতেন মানুষ। কিন্তু বাইরের কোনও উদ্দীপক বস্তু ব্যবহার করলে বা গাছকে আঘাত করলে গাছ যে সাড়াও দেয়, সেটা জগদীশ চন্দ্র বসুই তাঁর যন্ত্রের সাহায্যে প্রমাণ করে দেখান। এটিই ছিল উদ্ভিদ বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার

শেষ জীবন পর্যন্ত কল্লোলিনী কলকাতাতেই কাজ চালিয়ে গিয়েছিলেন বিজ্ঞান চর্চার জনক। ১৯৩৭ সালের ২৩শে নভেম্বর এই শহরেই মহাজ্ঞানী ড. জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রয়াণ হয়।


আরও পড়ুন-
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে কাণ্ডারি ছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুও, তাঁর অবদান তুলে ধরবে ভারতীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক
কলকাতায় এসেই কালীঘাট মন্দিরে পুজো দিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, পুরোহিতদের সঙ্গে করলেন বাক্যালাপও
ফিরহাদ বনাম মদন বাক্যবাণ, তৃণমূলের অন্দরের মতপার্থক্য শেষমেশ গিয়ে ঠেকল বিরিয়ানিতে

Share this article
click me!