এবার মেয়ের বিরুদ্ধেই খড়হস্ত বাবা। জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র নেতা শেহলা রশিদের বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে মুখ খুললেন তাঁর বাবা আব্দুল রশিদ সোরা। যার মধ্যে অন্যতম অভিযোগ তাঁর মেয়ের জন্য তাঁর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে আশঙ্কা করেছেন তিনি। তাঁকে একাধিকবার হুমকি দিওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বলেন তাঁকে মুখ বন্ধ করে বাড়িতে থাকবে বলা হয়েছিল। এইসব অভিযোগ নিয়েই জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের ডিজিপির কার্যালয়ে এফআইআর দায়ের করেছেন রসিদ সোরা। পাশাপাশি কাশ্মীরের পিপিলস আন্দোলনের তহবিল নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন। তাঁর অভিযোগ অবৈধ পথেই আসছে ওই অর্থ। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের কাছে তিনি নিরাপত্তা দাবি করেছেন।
আব্দুল রশিদ সোরা জম্মু ও কাশ্মীরের ডিজিপিকে জানিয়েছেন শায়লা রসিদ রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবকিছু বদলে যেতে থাকে। তাঁকে, তাঁর স্ত্রী জুবাইদা ও বড়মেয়ে আসমাকে ক্রমাগত হুমকির মুখোমুখি হতে হয়। তিনি বলেন সালটা ছিল ২০১৭। সেই সময় শেহলা রশিদ ছিলেন দিল্লি। জেনএনইউতে সমাজবিজ্ঞানের পিএইটডি করছিলেব। আর পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঠিক দুই মাস আগে শায়লার বাবা আব্দুল রসিদকে ডেকে পাঠায় জুহুর ওয়াতালি ও রশিদ ইঞ্জিনিয়ার (প্রাক্তন বিধায়ক)। তাঁরা আব্দুল রসিদকে জানিয়েছিলেন তাঁরা নতুন একটি রাজনৈতিক দলের পত্তন করছেন যার নাম জম্মু কাশ্মীর পিপিলস পার্টি বা জেকেপিপি। শায়লাকে তাঁরা তাঁদের দলের সদস্য করতে চান। আর শায়লার জন্য তাঁরা তিন কোটি টাকাও রেখেছেন। আব্দুল রসিদের প্রশ্ন কোথা থেকে এল এই টাকা? যদিও সেই সময় তিনি তাদের থেকে কোনও টাকা গ্রহণ করেননি বলেও জানিয়েছেন।
মাস দুই পরে শায়লা বাড়ি ফেরেন। তখন পুরো ঘটনা শেহলা রশিদকে জানান তাঁর বাবা। সেই সময় শায়লা বলেন তিনি জেকেপিপিতে নাম লিখিয়েছেন। রাজনৈতিক দলটি যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সেদিনের অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল দলের কর্তাব্যক্তি ও সদস্যদের সম্পর্কে একটি সাম্যক ধারনা তৈরি করা। কিন্তু কুখ্যাত লোকদের সঙ্গে মেয়ের ওঠাবসা পছন্দ হয়নি তাঁর বাবার। কারণ সন্ত্রাসবাদী তহবিল মামলায় ইউএপিএ-র অধীনে ধৃত জুহুর ওয়াতআলি। তাই তিনি বারবার শেহলাকে বুঝিয়ে ছিলেন রাজনৈতিক দলটি ঠিক নয়। কিন্তু কোনও কথা শোনেনি শেহলা। মেয়ে নাকি বাবাকে জানিয়েছিলেন বিজেপি ও আরএসএস অতি ডানপন্থী দল, আর তিনি অতিবামপন্থায় বিশ্বাস করেন। তাঁর আদর্শগত পার্থক্যকেই তিনি প্রাধান্য দেবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় মেয়ের চাপে পড়েই তিনি তিনি বন্ধ রেখেছিলেন। পাশাপাশি মেয়েকেও বারবার সেই পথ থেকে সরে আসার কথা বলেছিলেন বলে দাবি করেন তিনি। আর রাজনৈতিক দলের সদস্যদের তাঁর বাড়িতে আসা যাওয়া লেগেই থাকত। যা একেবারেই পছন্দ ছিল না তাঁর।
কিন্তু বর্তমানে তাঁর বিশ্বাস, তাঁর বাড়িতে বসে চালান হচ্ছে দেশবিরোধী কার্যকলাপ। আর সেই কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতরা গোটা পরিবারের একটি হুমকির সামিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। গোটা পরিবারই দীর্ঘদিন শেহলাকে এই কাজ থেকে বিরত রাখারে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তিনি অভিযোগ জানাবেন বলে জানানোর পর তাঁকে বাড়ি থেকে বার হতেও বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। সব বাধা উপেক্ষা করে তিনি চান সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলটির তহবিল নিয়ে তদন্ত হোক। পাশাপাশি তাঁর গোটা পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সম্পর্ক তদন্তের নির্দেশ দেওয়ারও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। আব্দুল রসিদ তাঁর অভিযোগপত্রে আরও জানিয়েছেন এখন গোটা পরিবারের রয়েছে শায়লার পক্ষে। তাঁর বড় মেয়ে ও স্ত্রীও তাঁকে বারবার হুমকি দিচ্ছে।