চিকিৎসক থেকে সাঁতার প্রশিক্ষক, হিন্দু উদ্বাস্তুদের জন্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ছেন সকলে

  • হিন্দু উদ্বাস্তুদের জীবনের কাহিনি ছুঁয়ে যাচ্ছে সকলকেই
  • পাকিস্তান, বাংলাদেশে আজও অত্যাচারের শিকার হিন্দুরা
  • ফলে নিয়মিতভাবেই ভারতে আসছেন ভিন দেশের হিন্দুরা  
  • আর এই হিন্দুদের জীবনকে সাজিয়ে তুলতে কাজ করছে বহু মানুষ

শিল্পী তিওয়ারি। বয়স তিরিশের সামান্য বেশি। পেশায় চিকিৎসক। কিন্তু, গত বছর পাঁচেক ধরে শিল্পী তিওয়ারির আরও একটি পরিচয় তৈরি হয়েছে। তিনি হলেন হিন্দু উদ্বাস্তুদের মাসিহা। চিকিৎসা সেবার হাত ধরে তিনি নিয়মিত কাজ করে চলেছেন হিন্দু উদ্বাস্তুদের জন্য। কয়েক বছর আগে নয়াদিল্লির রোহিণীর এক ক্যাম্পে হিন্দু উদ্বাস্তুদের শারীরিক পরীক্ষা শুরু করেছিলেন শিল্পী। সেই শুরু। পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের শারীরিক অবস্থা তাঁকে উদ্বেগে ফেলেছিল। হিন্দু উদ্বাস্তুদের সঙ্গে থাকা ছোট-ছোট ছেলেমেয়েদের অপুষ্ঠি ভাবিয়ে তুলেছিল শিল্পী। এঁদের জন্য কাজ করতে করতেই চিকিৎসা সেবায় এক নতুন দিশা পেয়ে যান এই চিকিৎসক। বর্তমানে দিল্লির বুকে তিনটি উদ্বাস্তু ক্যাম্পে কাজ করছেন শিল্পী। এমনকী, রাজস্থান, গুজরাটেও যে সহ হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্প চলছে সেখানেও নিয়মিত যাতায়াত করেন তিনি। 

Latest Videos

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে শিল্পী জানান, হিন্দু উদ্বাস্তুদের নিয়ে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল অপুষ্ঠি। বোঝাই যাচ্ছিল এই মানুষগুলি দীর্ঘদিন ধরেই সেভাবে খাবার পাননি। পাকিস্তানেও যেখানে এই হিন্দুরা বসবাস করতেন সেখানেও প্রবল কষ্ঠের মধ্যে দিয়ে যেতে হত বলে জানান শিল্পী। তিনি জানিয়েছেন, এঁদের কাজের কোনও সুবন্দোবস্ত করেনি পাকিস্তান সরকার। এমনকী, জীবন-ধারনের জন্য নূন্যতম যে বিষয়গুলি দরকার তাও এরা পেতেন না। বলতে গেলে প্রায়ই অভুক্ত অবস্থায় এঁদের দিন কেটেছে পাকিস্তানে। ছেলে-মেয়ে স্কুলে গেলে নিদারুণ অত্যাচারের সম্মুখিন হত। শিল্পীর মতে বলতে গেলে এই সব হিন্দুদের একপ্রকার ব্রাত্য করেই রাখা হয়েছিল। 

হিন্দু উদ্বাস্তু ক্যাম্পগুলিতে শুধু যে পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুরা রয়েছেন এমনটা নয়, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান থেকে আসা হিন্দুরাও আশ্রয় নিয়েছেন এই সব ক্যাম্পে। তবে পাকিস্তান থেকে আসা হিন্দুদের সংখ্যাটাই বেশি বলে জানিয়েছেন তিনি। পাকিস্তান থেকে যে শুধু হিন্দুরা এসেছেন এমনটা নয়, তাদের সঙ্গে শিখরাও রয়েছেন বলেও জানিয়েছেন  শিল্পী। 

আরও পড়ুন- অপহরণ থেকে খুন, জানুন পাকিস্তান-বাংলাদেশে হিন্দুদের সঙ্গে হওয়া অত্যাচারের কাহিনি

বর্তমানে এই সব হিন্দু উদ্বাস্তুদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়াই নয় তাদের অধিকার অর্জনের লড়াইয়েও রাস্তায় নেমেছেন শিল্পী তিওয়ারি। মার্চ মাসে তাঁর নেতৃত্বে দিল্লির যন্তর-মন্তরে এক হিন্দু উদ্বাস্তুদের নিয়ে ধরনাও হয়েছিল। যেখানে শিল্পী এবং হিন্দু উদ্বাস্তু শিবির থেকে আসা মানুষরা পাকিস্তানে হিন্দুদের উপর হওয়া অত্যাচার নিয়ে সরব হন। সেই মঞ্চ থেকে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণেরও চেষ্টা করেন তাঁরা। 

শিল্পী-র মতে, নাগরিকত্ব সংশোধনী এখন আইন হয়ে যাওয়ায় এই সব হিন্দু উদ্বাস্তুদের কাছে এক নতুন আশার আলো সঞ্চার করেছে। এতদিন এই সব হিন্দু উদ্বাস্তুরা ভিসার দৌলতে কিছু সুবিধা পাচ্ছিলেন। কিন্তু একজন নাগরিক একটি রাষ্ট্রের কাছে মর্যাদা পায় উদ্বাস্তুরা সেটা পায় না। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন হওয়াতে এই উদ্বাস্তুদের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে এবং এরা রাষ্ট্র পরিচালিত নানা সুযোগের ফায়দাও নিতে পারবেন। হিন্দু হয়েও এই সব মানুষরা একটি হিন্দু রাষ্ট্রে উদ্বাস্তু হয়েছিলেন, এটা অসহনীয় ছিল বলেই মনে করেন শিল্পী। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে কথোপকথনে তিনি জানান, যেদিন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল রাজ্যসভায় পাশ হয় সেদিন উদ্বাস্তু শিবিরগুলিতে মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। সকলে আনন্দোৎসবে মেতেছিলেন।  

শিল্পী তিওয়ারির মতোই আর এক জন হরি ওম সাহু। একটা সময় ভালো সাঁতারু ছিলেন। সাঁতারু হিসাবে জাতীয় স্তরেও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন হরি ওম। বর্তমানে তাঁর একটাই নেশা, আর সেটা হল যেনতেন প্রকারে হিন্দু উদ্বাস্তুদের সেবা করা। দিল্লির আদর্শনগর এলাকায় থাকেন হরি। সেখানেই একদিন ফাঁকা বিস্তৃর্ণ জমিতে কিছু মানুষকে ঝুঁপড়ি বানাতে দেখে অবাক হয়েছিলেন। দেহাতি হিন্দু বলে মানুষগুলোকে চিহ্নিত করা গেলেও বুঝে পাচ্ছিলেন না এরা কারা। আর কেন-ই বা এলাকায় পরিত্যক্ত, জলা জমির মধ্যে ঝুঁপড়ি তৈরির চেষ্টা করছেন? কৌতুহলবশে এগিয়ে গিয়েছিলেন হরি এবং তাঁর এলাকার কিছু মানুষ। ব্যাস, সেই শুরু। আলাপচারিতায় হরি-রা জানতে পারেন এই মানুষগুলি পাকিস্তান থেকে এসেছেন এবং দিল্লিতে থাকার চেষ্টা করছেন। কারণ, পাকিস্তানে হিন্দুদের উপরে যে ভাবে অত্যাচার হচ্ছে তাতে সেখানে থাকা যাচ্ছে না। হরি-রা জুড়ে গিয়েছিলেন এই অসহায় মানুষগুলির সঙ্গে। 

পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে হিন্দু উদ্বাস্তুদের জন্য কাজ করছেন হরি এবং তাঁর সহযোগীরা। আদর্শ নগরে উদ্বাস্তু শিবিরে আশ্রয় নেওয়াদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়া থেকে শুরু করে চলাচলের রাস্তা বানানো, ছেলে-মেয়েদের জন্য স্কুল খোলা-সবই করছেন হরিরা। এমনকী, এই সব হিন্দুদের জন্য কাজের বন্দোবস্ত করা থেকে শুরু করে দুবেলা দুমুঠো অন্নের সংস্থান, পোশাক-আশাকের বন্দোবস্তও করছেন এঁরা। 


নাগরিকত্ব আইন এই উদ্বাস্তু শিবিরে থাকা হিন্দুদের জন্য বরদান বলেই মনে করছেন হরি। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে তিনি জানান, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংসদের বৈতরণী পার হতেই উৎসবে মেতে উঠেছিল এখানকার মানুষ। এই হিন্দু উদ্বাস্তুরা এখন নতুন ভোরের অপেক্ষায় রয়েছে বলেও জানান হরি। 

 

Share this article
click me!

Latest Videos

‘Chinmoy Krishna-কে আমি মুক্ত করবোই’ নির্ভীক Bangladeshi আইনজীবী Rabindra Ghosh-এর চরম প্রতিশ্রুতি
'ওদের লেজ কখনও সোজা হয় না' কেন বললেন শুভেন্দু! দেখুন বুঝে যাবেন | Suvendu Adhikari | Bangla News
জালে পুরনো পাপী! জাল পাসপোর্ট পৌঁছে যেত অনুপ্রবেশকারীদের হাতে! | Duttapukur News | Kolkata
বিস্ফোরক অভিযোগ Agnimitra Paul-এর! Mamata-র বিরুদ্ধে RG Kar কাণ্ডের প্রমাণ লোপাটের সরাসরি তোপ
'ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা' হিন্দুদের প্রতি সহানুভুতি, বাংলাদেশী জঙ্গিদের টার্গেট Suvendu Adhikari