কনের সাজেই গতবছর পরীক্ষায় বসেছিলেন গুজরাটের শিবাঙ্গী বাগাথারিয়া নামের এক মহিলা। রাতারাতি সেই ঘটনা ভাইরাল হয়ে উঠেছিল নেটদুনিয়ায়। তবে শিবাঙ্গীর জীবনের এই অনুপ্রেরণার পিছনে ছিল দুটি মানুষের হাত যাঁদের সমর্থন এবং সাহসেই এই কঠিন পদক্ষেপ নিতে পিছ পা হন নি শিবাঙ্গী।
কম বয়সেই বিয়ে, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি কত কারণেই আজ ও আমাদের সমাজের কত মেয়েকে মাঝপথেই ছেড়ে দিতে পড়াশুনা, নিমেষেই মাটিতে নামিয়ে আনতে হয় তাঁদের স্বপ্নের উড়ান। কিন্তু শিবাঙ্গী বাগাথারিয়া তা করেন নি, লড়াই করেছিলেন এবং সেই লড়াই জিতে তাঁর জীবনকে আদর্শের এক নজির হিসাবে সকলের সামনে তুলে ধরেছেন। শিবাঙ্গী প্রমাণ করেছেন যে চেষ্টা আর ইচ্ছা এই ২টো থাকলেই অনেক বাঁধাকেও অতিক্রম করা সহজ হয়ে ওঠে।
পরনে লেহেঙ্গা, চেহারায় কনের সাজ এবং হাতে পেন এই বেশেই পরীক্ষার হলে গিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন শিবাঙ্গী বাগাথারিয়া। সেদিন পরীক্ষার হলে উপস্থিত প্রত্যেকটি পরীক্ষার্থীর কাছে দিনটা ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি ছিল তাঁদের পরীক্ষার দিন, তবে শিবাঙ্গী বাগাথারিয়ার জীবনে এই দিনটির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম কারণ সে জানত এটি যেমন তাঁর পরীক্ষার দিন তেমনই এই পরীক্ষার পর বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হবে তাঁকে, শুরু হবে জীবনের সম্পূর্ণ এক নতুন অধ্যায়। তবু সেদিনের সেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিল শিবাঙ্গী।
আরও পড়ুন- ভারতের সর্বকালের উষ্ণতম গ্রীষ্ণ, কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা- গরমে পুড়ছে গোটা দেশ
সম্প্রতি এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শিবাঙ্গী জানিয়েছেন সেদিনের তাঁর এই সাহস জোগানোর পিছনে ছিল ঠিক কাঁদের অবদান? শিবাঙ্গী বলেছেন, 'আমার মা বার যখন বিয়ে করেছিলেন তখন মা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তবে বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই মা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে যাওয়ায় মাঝপথেই পড়াশুনা ছেড়ে দিতে পর। তবে মা হার মানেন নি, তিনি পড়াশুনাটা শেষ করেছিলেন। আমার যখন ৮ বছর বয়স তখন মা আবার ডিগ্রি শেষ করার জন্য পুনরায় কলেজে ভর্তি হন। আমি আর আমার ভাই কলেজের বাইরে বসে থাকতাম মা যখন পরীক্ষা দিতেন। মায়ের জীবনে লক্ষ্য ছিল মাঝপথে আটকে যাওয়া পড়াশুনাটা শেষ করা। আর ঠিক তখনই আমি নিজের মাথায় একটা কথা বসিয়ে নিয়েছিলাম যে জীবনে আগে পড়াশুনা তারপরে অন্য সব কিছু।'
এরপর যখন বিয়ের দেখাশোনা শুরু হয় তখন পার্থ এবং শিবাঙ্গীর একে অপরকে পছন্দ হয়ে যায়। টোন নিজের স্বপ্নের কথা পার্থকে আগেই জানিয়েছিলেন শিবাঙ্গী। সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, 'আমার সাথে যখন পার্থর প্রথম দেখা হয় আমি তখনই ওকে জানিয়েছিলাম আমি আমার স্বপ্নগুলোর কখনওই আপোষ করবো না। শুনে পার্থ শুধু যে আমায় সমর্থন করেছিল তাই নয় বরং ও বলেছিল, আমিও আমার স্বপ্নপূরণ করতে চাই। এরপর আমরা যত একে অপরের বিষয়ে জানতে শুরু করেছিলাম ততই একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করেছিলাম। এইভাবেই একদিন আমাদের বিয়ের তারিখ ও ঠিক যায়।'
আরও পড়ুন- ২০৩০ সালের মধ্যে কি ধ্বংস হয়ে যাবে পৃথিবী? বছরে ৫৬০টি প্রকৃতিক বিপর্যয় নেমে আসতে চলেছে
তবে আসল চমকটা শিবাঙ্গী পেয়েছিলেন যখন তিনি জানতে পেরেছিলেন তাঁর বিয়ের দিনই পড়েছে তাঁর পরীক্ষা। এই প্রসঙ্গে শিবাঙ্গী জানান, 'ওই ঘটনাটা আমার কাছে একটা দুঃস্বপ্নের মত ছিল আমি কখনওই ভাবি নি যে আমার বিয়ে আর পরীক্ষা একদিনে পড়বে। আমি সঙ্গে সঙ্গেই পার্থকে ফোন করে জানিয়েছিলাম। পার্থ আমায় বলেছিল তুমি যা মনে হয় তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারো কিন্তু ভুলেও পরীক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিও না।'
এরপর পণ্ডিতকে বলে বিয়ের সময় সকালের পরিবর্তে দুপুরে করা হয়েছিল। বিয়ের আগের রাতটা শিবাঙ্গীর কেটে যায় বিউটি পার্লারেই। রাত ২টো নাগাদ পার্লারে পৌঁছন শিবাঙ্গী। সারারাত তাঁকে যখন সাজানো হচ্ছিল শিবাঙ্গী তখন পড়াশুনা করছিলেন। এরপর সকালে সেজেগুজে পরীক্ষার হলে পৌঁছানোর পর সবাই তাঁকে দেখে অবাক হলেও পরীক্ষার হলে থাকা শিক্ষক তাঁকে বাহবা দিয়ে বলেছিলেন 'এই পরিস্থিতিতে তুমি পরীক্ষা দিতে এসেছি দেখে আমার গর্ববোধ হচ্ছে, তুমি প্রমাণ করে দিয়েছ যে জীবনে পড়াশুনা সবার আগে।' ওপর পরীক্ষা দিয়ে বিয়ের মণ্ডপে বসেছিলেন শিবাঙ্গী এবং পার্থ। সাক্ষাৎকারে শিবাঙ্গী জানান, 'বিয়ের মণ্ডপে পার্থ আমায় বলেছিল আমিই না কি তাঁর জীবনের অনুপ্রেরণা। এটা শুনে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছিলাম।'