ভারত জুড়ে ক্রমশই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে বার্ড ফ্লু। হিমাচল থেকে কেরল একের পর এক রাজ্যেই মৃত্যু হচ্ছে পাখির। এই পরিস্থিতিতে সতর্কতা জারি করেছে বেশ কয়েকটি রাজ্য। কিন্তু এখনও পর্যন্ত আশঙ্কার কালো মেঘ কাটেনি ভারতের আকাশে। বার্ড ফ্লুর কারণে এখনও পর্যন্ত হিমাচলে ১৮ হাজার পরিযায়ী পাখির মৃত্যু হয়েছে। কেরলের দুটি জেলায় বার্ড আক্রান্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাজস্থানে এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০ কাকের মৃত্যু হয়েছে।
অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জ বা বার্ড ফ্লু কী
এটি মারাত্ন ছোঁয়াচে ভাইরাস ঘটিত একটি রোগ। এইটওয়ানএনওয়ান ভাইরাস হিসেবেই চিহ্নিত করা হয় এর জীবাণুকে। এটি খুব সহজে মুরগি আর টার্কি পাখিদের আক্রান্ত করে। এই ভাইরাসের বেশ কয়েকটি প্রজন্ম রয়েছে। কোনটিতে মৃদু আক্রান্ত আর কোনওটি দ্রুততার সঙ্গে সংক্রমণ ছড়িয়ে দেয়। কোনটি আবার শুধুমাত্র মুরগিদেরই আক্রান্ত করে। কোনও কোনও সময় এটি সন্তপ্যায়ী প্রাণী ও মানুষদেরও অসুস্থ করে দিতে পারে। এটি যখন মানুষদের আক্রান্ত করে তখন সেটিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা বলে।
বার্ড ফ্লু কী করে ছড়িয়ে পড়ে
বার্ড ফ্লু মূলত পোষ্য পাখি-হাঁস, মুরগি, টার্কি পাখিদের থেকে ছড়িয়ে পড়ে।
অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়- লো প্যাথোজেনিক অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা ও হাই প্যাথোজেনিক অ্যাভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জা। লো প্যাথেজেনিক জীবাণুটি খুব দ্রুত কোনও রোগের কারণ হতে পারে না। তবে হাই প্যাথোজেনিক জীবাণুটি মারাত্মক ও গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। এই জীবাণুটি মূলত হাঁস মুরগির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে কখনও কখনও শুকর, ঘোড়া , বিড়াল ও কুকুরকেও সংক্রমিত করতে পারে।
কখন ও কীভাবে বার্ড ফ্লু মানুষকে সংক্রমিত করে?
এজাতীয় জীবাণু প্রথম দেখা যায় ১৯৯৬ সালে চিনে। পরের বছরই এই জাতীয় জীবাণু মানুষকে সংক্রমিত করেছে-এমন নজীরও রয়েছে হংকং-এ। সেই সময় আক্রান্ত ১৮ জনের মধ্যে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। জীবাণুটির নাম এইচ৫এন১।
এটি কি খুব সহজে মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়?
জীবিত অথবা মৃত পশুর সংস্পর্শে আসা মানুষ জন এইচ৫এন১ জীবাণুতে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এটি একজন মানুষ থেকে অন্যজন মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে না। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ভালো করে রান্না খাবারের এই রোগের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। এই জাবীণুতে খুব বেশি তাপ সহ্য করতে পারে না।
বার্ড ফ্লুর লক্ষ্ণণ
বার্ড ফ্লু সরাসরি পাখিদের সংক্রমিত করে। মানুষকে নয়। তবে এই জীবাণুর প্রভাবে মানুষের শ্বাসনালীতে সংক্রমণ হতে পারে। নিউমোনিয়া বা তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের রোগ তৈরি করতে পারে এই ভাইরাস। প্রাথমিক লক্ষণ হল জ্বর সর্দি গলা ব্যাথা ও শরীরে ব্যাথা।
আমরা কেন ভয় পাচ্ছি ?
যে কোনও জীবাণুই দ্বিতীয় স্ট্রেইন তৈরি করে রাখে। সেগুলির মধ্যে কিছু দুর্বল অথবা শক্তিশালী হতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বার্ড ফ্লু যে মানুষকে সংক্রমিত করবে না তেমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। এটি মানুষের কোষকেই সংক্রমিত করতে পারে। আরও একবার মহামারি তৈরি করতে পারে। এইচওয়ান এনওয়ান ভাইরাসের মাধ্যমে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
প্রথম ভারতে আসা
২০০৬ সালে বার্ড ফ্লুর ভাইরাস প্রথম ভারতে আসে। কিন্তু সেই সময় মানুষকে সংক্রমিত করার কোনও পূর্ব ইতিহাস নেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সালে মহারাষ্ট্রে প্রথম বার্ড ফ্লু রেকর্ড করা হয়েছিল।
সরকারি পদক্ষেপ
ইতিমধ্যেই ২৫৩০০০ মুরগি ও ৫৮৭০০০ ডিম নষ্ট করা হয়েছে। ১৫০ জনস মানুষের রক্ত পরীক্ষার জন্য পুনের ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে পাঠান হয়েছে। সর্বত্র বার্ড ফ্লু নিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে।