পরণে লাল শাড়ি, নাকে মস্ত বড় নাকছাবি, দুইহাতে শাঁখা-পলা, চুড়ি-বালা, কান থেকে ঝুলছে ঝুমকো দুল। মৃত্যুকে এড়াতে গত ৩০ বছর ধরে সবসময় এইভাবেই সেজে থাকেন উত্তরপ্রদেশের জৌনপুরের হাউজখাস গ্রামের চিন্তাহরণ চৌহান। পেশায় তিনি দিনমজুর। এক স্ত্রী ও দুই ছেলেও রয়েছে। কিন্তু কেন এমন সেজে থাকেন তিনি? এর পেছনে রয়েছে একই সঙ্গে এক গা ছমছমে এবং শোকের কাহিনী। ১ জন নিকটাম্তীয়কে হারিয়ে মৃত্যুভয়ে রাতের ঘুম উড়ে যাওয়ার গল্প।
এখন চিন্তাহরণের ৬৬ বছর বয়স। তাঁর প্রথম বিয়ে হয়েছিল মাত্র ১৪ বছর বয়সে। কিন্তু কয়েক মাসের মধ্যেই সেই স্ত্রীর মৃত্যু হয়।
এরপর ২১ বছরবয়সে তিনি পশ্চিমবঙ্গের দিনাজপুরের এক ইঁটবাটায় কাজ করতে আসেন। আর এখান থেকেই শুরু হয় কাহিনী। ইঁটভাটার চিন্তাহরণের কাজ ছিল শ্রমিকদের জন্য খাবার জোগার করা। কাছের এক দোকান থেকে তিনি চাল-ডাল কেনাকাটা করতেন। সেই বাঙালি দোকানদারের সঙ্গে তাঁর ক্রমে হৃ্যতা বাড়ে। এর চার বছর পর ওই দোকানদারের মেয়েকে বিয়ে করেন চিন্তাহরণ চৌহাীন।
কিন্তু, উত্তরপ্রদেশে তাঁর পরিবার চিন্তাহরণের বাঙালি বউকে মেনে নিতে পারেনি। পশ্মিমবঙ্গে বাঙালি বউকে ফেলে চুপি চুপি উত্তরপ্রদেশে চম্পট দেন চিন্তাহরণ। তবে বউয়ের প্রতি চটানও ছিল। একবছর পর আবার ফিরে যা দিনাজপুরে। কিন্তু গিয়ে শোনে তাঁর প্রতারণা সহ্য করতে না পেরে তাঁর স্ত্রী একবছর আগেই আত্মঘাতী হয়েছেন।
উত্তরপ্রদেশে ফিরে আসেন চিন্তাহরণ। পরিবারের পরামর্শে আবার বিয়ে করেন তিনি। এই তৃতৃীয় বিয়ের পর থেকেই তাঁর পরিবারে মৃত্যু মিছিল লেগে যায়। প্রথমে তাঁর বাবা রামজীবন, তারপর থেকে পরপর চিন্তাহরণের বড়দাদা ছোটু, তাঁর স্ত্রী ইন্দ্রবতী, তাঁদের দুই ছেলে, ছোট ভাই বাড়ৌ মারা যান। তারপর তাঁর ভাইদের তিন মেয়ে ও চার ছেলেরও মৃত্যু হয়।
শুধু তাই নয়, পরপর এতজন নিকটাম্তীয়কে হারিয়ে যখন মৃত্যুভয়ে কাঁপছেন চিন্তাহরণ, সেইসময় থেকে স্বপ্নে দেখা দিতে সুরু করেন তাঁর আত্মঘাতী বাঙালি স্ত্রী। চিন্তহরণ জানিয়েছেন, আত্মহত্যার জন্য তাঁকেই দায়ী করতেন স্ত্রী। চিৎকার করে কাঁদতেন।
এরপর একদিন চিন্তাহরণ তাঁর বাঙালী স্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন। নিজের ও পরিবারের প্রাণভিক্ষা করেন। বাঙালী বউ বলেন, চিন্তাহরণ স্ত্রী সেজে থাকলে তিনি সবসময় চিন্তাহরণের সঙ্গে সঙ্গে থাকতে পারবেন। আর তাহলেই চিন্তাহরণ ও তাঁর পরিবারের প্রাণ বাঁচতে পারে।
এই কারণেই গত ৩০ বছর ধরে নারী রূপ ধারণ করেই রয়েছেন চিন্তাহরণ চৌহান। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম প্রথম গ্রামের লোক তাঁকে ওইভাবে দেখে হাসাহাসি করত, টিটকিরি দিত। কিন্তু, তিনি জানিয়েছেন নারী সাজা শুরু করার পর থেকে তাঁর পরিবারে মরক বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কয়েক বছর আগে অবশ্য তাঁর তৃতীয় স্ত্রীও গত হয়েছেন। কিন্তু তাঁর দুই ছেলে রমেশ ও দীনেশ দিব্বি রয়েছে। এখন গ্রামের লোক তাঁকে সমবেদনা জানায়। জীবনের বাকি কটা দিন শাড়ি গায়ে তিনি বাঙালী বউকে সঙ্গে করেই কাটাতে চান।