UP Elections 2022: হারার জন্যই ভোটে লড়েন হাসনুরাম - ৯৩বার হেরেছেন, লক্ষ্য ১০০

হারবেন বলেই এই পর্যন্ত ৯৩টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) আগ্রার (Agra) বাসিন্দা হাসনুরাম আম্বেদকর (Hasnooram Ambedkar)। তাঁর এই অদ্ভূত আচরণের পিছনে রয়েছে এক বঞ্চনার গল্প।
 

Web Desk - ANB | Published : Jan 14, 2022 1:47 PM IST / Updated: Jan 14 2022, 09:40 PM IST

নির্বাচনে সবাই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জেতার জন্যই। ভারতে ভোটে জেতার উদগ্র বাসনায়, রাজনৈতিক নেতাদের সকাল-বিকাল দলবদল করতে দেখা যায়। তবে দৈত্য কূলে প্রহ্লাদ হলেন উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) আগ্রার (Agra) বাসিন্দা হাসনুরাম আম্বেদকর (Hasnooram Ambedkar)। যিনি ভোটে দাঁড়ান হারবেন বলে। ৭৫ বছরের হাসনুরামের অনন্য রেকর্ড - এই পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের ৯৩টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রতিটিতেই হেরেছেন। আসলে, তাঁর লক্ষ্য ১০০টি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজয়ের রেকর্ড করা। আর তাঁর এই অদ্ভূত ভোট-ইচ্ছের পিছনে রয়েছে এক বঞ্চনার গল্প।

হাসমুরামের এই নির্বাচনী কাহিনির শুরুটা হয়েছিল আজ থেকে ৩৬ বছর আগে। সেই সময় একটি বড় রাজনৈতিক দল নাকি তাঁকে নির্বাচনে টিকিট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু, পরে সময় এলে তাঁর বদলে অন্য এক ব্যক্তিকে প্রার্থী করেছিল তারা। আর তাঁকে টিকিট না দেওয়ার পিছনে, যে কারণ সেই দলের নেতারা উল্লেখ করেছিলেন, সেটাই হাসনুরামকে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি হারের রেকর্ড গড়ার দিকে ঠেলে দিয়েছিল। কী ঘটেছিল ৩৬ বছর আগে?

আরও পড়ুন - UP Elections 2022: গণধর্ষিতার মা'ই উন্নাও-এ কংগ্রেসের 'আশা', তবে জিতবেন কি

আরও পড়ুন - UP Elections 2022: 'কাজ নেই, শুধুই পাবলিসিটি', যোগী সরকারকে চূড়ান্ত কটাক্ষ গুর্জর নেতার

আরও পড়ুন - Covid-19: টিকা না নিলেই কীভাবে বাড়ছে মৃত্যুর ভয়, দেখুন দিল্লি-মুম্বইয়ের পরিসংখ্যান কী বলছে

হাসনুরাম আম্বেদকর জন্মেছিলেন ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট, অর্থাৎ, ঠিক যেদিন দেশ স্বাধীন হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সরকারের রাজস্ব বিভাগে কাজ নিয়েছিলেন। পাশাপাশি 'ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস অ্যান্ড মাইনরিটি কমিউনিটিজ এম্প্লয়িজ ফেডারেশন' বা 'বামসেফ' (BAMSEF) সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। হাসনুরামের দাবি, ১৯৮৫ সালে সংগঠন থেকে তাঁকে বলা হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশের একটি আঞ্চলিক দলের হয়ে তাঁকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। চাকরি ছেড়ে তাঁকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছিল। সেই নির্দেশ মেনে তিনি চাকরি ছাড়েন। নির্বাচনের লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কিন্তু, শেষ পর্যন্ত তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। দলীয় পদাধিকারীরা জানিয়েছিল, হাসমুরামকে তাঁর প্রতিবেশীরাই ভালভাবে চেনে না, মানুষ কেন ভোট দেবে?

এই কথাটাই এখনও তাঁকে কাঁটার মতো বিদ্ধ করে। দলের টিকিট না পেয়ে, ওই নির্বাচনেই তিনি ফতেহপুর সিক্রি বিধানসভা আসনে (Fatehpur Sikri Assembly Constituency) নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রথমবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ১৭৭১১ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থান পেয়েছিলেন। তারপর থেকে, ধারাবাহিকভাবে প্রায় সব নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন তিনি। বিধানসভা, লোকসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে তো বটেই, এমনকী দেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনেও মনোনয়ন দিয়েছেন একধীকবার। এর বাইরে এমএলসি, সমবায় ব্যাঙ্কের নির্বাচনেও লড়াই করে থাকেন হাসনুরাম। ২০২২ সালের উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন (UP Elections 2022) ৯৪তম বারের মতো নির্বাচনী ময়দানে  নামছেন তিনি। 

কিন্তু, কেন বারবার পকেটের টাকা খরচ করে নির্বাচনে হারার জন্যে লড়েন তিনি? হাসনুরামের দাবি, ইতিমধ্যেই সারা দেশের মধ্যে সবথেকে বেশিবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার রেকর্ড রয়েছে তাঁর দখলে। তাঁর আশা ১০০ বার হারের রেকর্ড করতে পারলে, শুধু তাঁর প্রতিবেশিরা কেন,  গোটা বিশ্বের মানুষই তাঁকে চিনবে, তাঁর আর পরিচিতির অভাব হবে না। আর তাই তিনি শুধুমাত্র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্যই একটি তহবিল গঠন করেছেন। রোজ সেখানে কিছু টাকা করে জমা করেন। বর্তমানে কৃষিকাজ তাঁর পেশা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কিষাণ সম্মান নিধিতে (PM Kishan Samman Nidhi) যে টাকা পেয়েছেন, তা দিয়েই আসন্ন নির্বাচনে লড়বেন তিনি। 

তবে, মনোনয়ন প্রক্রিয়ার খরচ ছাড়া, নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য তাঁর একটি টাকাও খরচ হয় না। ছোট-বড় দলগুলির মতো প্রচারের পিছনে কোনও খরচ করেন না তিনি। এমনকী ঘরে ঘরে ভোট চাইতেও যান না। তাহলে কারা ভোট দেন তাঁকে? হাসনুরাম আম্বেদকরের দাবি, যারা কোনও রাজনৈতিক দল বা নেতাদের প্রতিই সন্তুষ্ট নন, তাঁরা ভোট দেন তাঁকে। বঞ্চিত সমাজের প্রতিনিধিরা ভোট দেয় তাঁকে। আর তাই রাজনৈতিক দলগুলি বঞ্চনা করলেও, একের পর এক ভোট লড়ে চলেছেন হাসনুরাম আম্বেদকর।
 

Share this article
click me!