বিধায়ক হওয়ার সাধ ছিল বিকাশের, রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে সাম্রাজ্য স্থাপন করেছিল গ্য়াংস্টার

যৌবনে জামিন পেয়েছিল এক নেতার হাত ধরেই 
পরবর্তীকালে সেই নেতাই বিকাশ দুবের রাজনৈতিক গুরু হয়
দীর্ঘ দিন গ্রামীণ রাজনীতি চলত তারই পেশী শক্তিতে 
বিধায়ক হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল বিকাশ দুবে 
 

উত্তর প্রদেশ পুলিশের সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিয়ত গ্যাংস্টর বিকাশ দুবে। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েগেছে রাজনৈতিক তরজা। বিরোধীদের অভিযোগ এনকাউন্টার সাজানো ঘটনা। বিকাশের বিরুদ্ধে তদন্ত চললে মুখোশ খুলে যেত রাজ্যের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরই। তাই পরিকল্পনা করেই সরিয়ে দেওয়া হল বিকাশ দুবেকে। কিন্তু সত্যি কি তাই? চলুন বিকাশ দুবের মৃত্যুর পর আমরা ফিরে দেখি গ্যাংস্টারের অতীত। 

সালটা ছিল ১৯৯০। বিকাশ দুবের বাবা সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন এক প্রতিবেশী। সেই প্রতিবেশীকেই নিশানা বানিয়েছিল বিকাশ। তারপরই তাকে গ্রেফতার করে গারদে পোরে পুলিশ। কিন্তু সেই সময় বিকাশ দুবের জামিনের ব্যবস্থা করেছিলেন স্থানীয় এক রাজনীতিবিদ হরি কিশান শ্রীবাস্তব। 

Latest Videos

এই শ্রীবাস্তবের হাত থেকেই বিকাশের উত্থান বলে দাবি করেন অনেকে। ধীরে ধীরে হরি কিশান শ্রীবাস্তবের ডান হাত হয়ে উঠেছিল বিকাশ দুবে। শ্রীবাস্ত ১৯৯৩ সালে বিজেপি ও ১৯৯৬ সালে বহুজন সমাজ পার্টির প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন উত্তর প্রদেশ বিধানসভায়। তিনি চৌবেপুরে জনতা দলেরও প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু ২০১২ সাল থেকেই ওই বিধানসভা আসনটি বাতিল হয়ে যায়। হরি কিশান শ্রীবাস্তবকেই রাজনৈতিক গুরু বলে ঘোষণা করেছিল বিকাশ দুবে। 


শ্রীবাস্তবের ছত্রছায়য় বিকাশ দুবের বাহুবলী কার্যকলাপ শুরু। পেশীশক্তির প্রদর্শনের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে চলত 'বিকাশ রাজ'। আর তাই সেই গ্রামগুলিতে থেকে  ১ লক্ষ ভোট সংগ্রহ করে তার রাজনৈতিক গুরুকে বিধানসভায় পাঠাতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বিকাশকে। শ্রীবাস্তবের কাছ থেকেই বিকাশ শিখে নিয়েছিল ভোটের অঙ্ক। যা পরবর্তীকালে কাজে লাগাতে চেয়েছিল নিজের জন্য। 

১৯৯০। প্রায় গোটা দশক জুড়েই উত্তর প্রদেশে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন বিএসপি নেত্রী মায়াবতী।  ৯এর দশকের মাঝামাঝি বিকাশ ক্ষমাসীন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছিল। মায়াবতী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বিএসপির সদস্যপদও গ্রহণ করেছিল। 

২০০১ সাল। উত্তর প্রদেশে তখন বিজিপের শাসন।  সরকারের প্রধান রাজনাথ সিং। সেই সময়ই চৌবেপুর  থানার মধ্যে ঢুকে তৎকালীন মন্ত্রী সন্তোষ শুক্লাকে গুলিতে ঝাঁঝরা করি দিয়েছিল বিকাশ আর তার দলবল। কিন্তু থানার মধ্যে ঢুকে তাণ্ডব চালালেও সাক্ষী আর প্রমাণের অভাবে তাকে খালাস করে দেয় আদালত। চার বছর ধরে চলেছিল মামলা। 

তবে গত ২০ বছর ধরে উত্তর প্রদেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় গ্রাম পঞ্চায়েতের নির্বাচন হত বিকাশেরই অঙ্গুলী হেলনে। প্রতিপক্ষকে ভোটে লড়াইয়ের সুযোগও দিত না বিকাশের দলবল। গোটা গ্রামই দখল করে রাখত গ্যাংস্টারের সঙ্গীরা। প্রায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় জয়ী হত বিকাশের লোকজন। স্থানীয় কোল্ডস্টোরেজ আর ইঁটভাটার দখলদারি নিয়েই রফা হত বলে দাবি স্থানীয়দের। 

উত্তর প্রদেশের মন্ত্রী সন্তোষ দুবেকে হত্যার সময় থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিকাশ ছিল গিমাউ পঞ্চায়েতের সদস্য। তারপরে ২০১৫ পর্যন্ত এই আসনটি বিকাশের ঘনিষ্টদের জন্যই বরাদ্দ থাকতে। কিন্তু ২০১৫ সাল থেকে এই আসনটি মহিলা সংরক্ষিত আসন হয়ে যায়। তারপরেই এই আসন থেকে বিকাশ জিতিয়ে নিয়ে আসে তার স্ত্রী রিচাকে।  বর্তমানে তিনি পুলিশের হেফাজতে। 

২০২২ সালে উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন। আর ওই নির্বাচনে বিধায়ক হিসেবে লখনউয়ের বিধানসভায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিল বিকাশের। সেইমত শুরু হয়েছিল প্রস্তুতিও। বিএসপির টিকিটেই বিধানসভায় যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছিল বিকাশ। সেই সময় তার দলের সদস্যরা কানপুর লোকসভার অন্তর্গত রানিয়া বিধানসভা কেন্দ্রটিতে রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু করেছিল। সূত্রের খবর বিকাশের সঙ্গে সক্ষমতাসীন দল বিজেপির যোগাযোগ ভালো ছিল। রাজ্যস্তরের বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্তরের নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে বিকাশের পদ্মশিবিরে যোগ দেওয়া আটকানো গেছে বলেই উত্তর প্রদেশ বিজেপির একাংশের দাবি। 


এনকাউন্টারে মৃত্যু না হতে অন্যান্য বাহুবলীদের মত বিকাশও হয়তো আবাধে চরে বাড়াত রাজনীতির আঙিনায়। কারণ বিকাশ যে  মত সক্রিয় রাজনীতিতে আসার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করে ফেলেছিল তা স্পষ্ট করে দিয়েছে তারই দলের লোকজন। 

Share this article
click me!

Latest Videos

Suvendu Adhikari Live: বিধানসভার বাইরে মুখোমুখি শুভেন্দু অধিকারী, দেখুন সরাসরি
উপনির্বাচনে (By Election) কেমন ফল করবে বিজেপি? দেখুন কী বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
Guyana-র সরস্বতী বিদ্যা নিকেতন স্কুলে Narendra Modi, কথা বললেন পড়ুয়াদের সঙ্গে
Mamata Banerjee Live: নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মমতা, দেখুন সরাসরি
Bangla News : সুকান্তকে বাধা, বেলডাঙা নিয়ে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি | Asianet News Bangla