আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সুপার মার্কেটে চাল কেনার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ নির্বিচারে চাল না কিনে। এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফও ভারতকে নন-বাসমতি সাদা চাল রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
গত মাসে, মোদী সরকার দেশীয় চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে নন-বাসমতি সাদা চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্ত বিশ্বব্যাপী চালের দামে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। সরকারের এই সিদ্ধান্তে সারা বিশ্বের মানুষকে চাল কেনার জন্য তাদের পকেট খুলতে হবে। যেহেতু বিশ্বের মোট উৎপাদনের ৪০ শতাংশই ভারতের। এমতাবস্থায় অবিলম্বে নন-বাসমতি সাদা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে ভাত খাওয়া মানুষের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। চাল বাণিজ্যের আন্তর্জাতিক অংশে ভারতের পরেই রয়েছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আতঙ্কে কেনাকাটা হচ্ছে
ভারত সরকারের এই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন দেশের মানুষ আতঙ্কে কেনাকাটা শুরু করেছে। এ বিষয়ে আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সুপার মার্কেটে চাল কেনার সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ নির্বিচারে চাল না কিনে। এমন পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে আইএমএফও ভারতকে নন-বাসমতি সাদা চাল রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২২ সালেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে
সরকার ২০২২ সালে ভাঙা বাসমতি চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করেছিল। এছাড়া বাসমতি চাল রপ্তানিতে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়েছে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত সারা বিশ্বে যারা চাল খায় তাদের টেনশন বাড়তে চলেছে। সে সময় অর্থনীতিবিদরা মনে করতেন, সরকারের এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক পর্যায়ে শস্যের দাম বাড়বে, যার প্রভাব সারা বিশ্বের সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে।
চাহিদা ও যোগানও বড় চ্যালেঞ্জ
সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে ২০২২ সালের পর বিশ্বব্যাপী চালের দাম অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের জুন থেকে বিশ্ববাজারে চালের দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ভারতীয় বর্ষার পার্থক্যের কারণে চালের সরবরাহও একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। তবে, এখন নতুন ফসল প্রস্তুত হওয়ার সময় রয়েছে, এই প্রেক্ষাপটে, সরবরাহ স্বল্পতার কারণে চালের দাম বাড়তে বাধ্য।
মোদী সরকার, সময়ে সময়ে, চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ করে এবং দেশীয় স্তরে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে ক্রমাগত কাজ করে। যেহেতু ভারত বিশ্বের বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ, তাই দেশীয় পর্যায়েও চালের ভোক্তা বেশি। এ প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করাও সরকারের অগ্রাধিকার হয়ে দাঁড়ায়।
গত বছর ভারত বিশ্বের ১৪০টি দেশে ২.২ কোটি মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ছয় লাখ টন ছিল অপেক্ষাকৃত সস্তা ইন্ডিকা সাদা চাল। সেই ইন্ডিকা চালের রপ্তানি ভারত এখন বন্ধ করে দিয়েছে। গত বছর ভাঙ্গা চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাসমতি নয় এমন চালের রপ্তানির ওপর ২০% শুল্ক আরোপের পর এবার এই ঘোষণা করা হয়। জুলাই মাসে আরোপ করা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে বিশ্বব্যাপী চালের উর্ধ্বমূখী দাম নিয়ে যে উদ্বেগ তৈরি হবে এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ পিয়ে-অলিভিয়ে গুগাঞ্চা মনে করেন ভারতের এই নিষেধাজ্ঞার ফলে চালের দাম এখন আরও বাড়বে।