একুশের বিধানসভা নির্বাচনে একটিও আসন পায়নি বাম ও কংগ্রেস। স্বাধীনতার পর থেকে এই প্রথমবার কংগ্রেস ও বাম শূন্য পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা। এই ভরাডুবির পিছনে কি কারণ রয়েছে তা জানতে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু করে দিয়েছে বামেরা। তবে শোনা যাচ্ছে, কংগ্রেসের তরফে এখনও পর্যন্ত ভরাডুবির কারণ খোঁজার কোনও উদ্যোগই নেননি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। যদিও এই ভরাডুবির জন্য তাঁকেই দায়ি করেছে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। আর এই পরিস্থিতিতে বড়সড় রদবদলের পথে হাঁটতে চলেছে কংগ্রেস। সূত্রের খবর, লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে অধীরকে। তার পিছনে রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণ।
আরও পড়ুন- BJP-র পুরসভা ঘেরাও অভিযান মোকাবিলায় কড়া নিরাপত্তা, শহরে ৩ হাজার পুলিশ মোতায়েন
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে চিরকালই ভালো সম্পর্ক রয়েছে কংগ্রেস হাইকমান্ডের। সেখানে অধীর বরাবরই চাঁচাছোলা ভাষায় মমতাকে আক্রমণ করে এসেছেন। এমনকী, লোকসভায় অধীরের সঙ্গে বিরোধীদের সম্পর্ক একেবারেই ভালো নয়। তৃণমূলের এক সাংসদ বলেন, "কোনও বিল বা পরিকল্পনা বা ধরনার বিষয়ে আমাদের অধীর চৌধুরী নিজে জানান না। সব সময় লোক পাঠিয়ে জানিয়ে দেন। গত দু'বছর ধরে তাঁর সঙ্গে আমাদের কোনও সাক্ষাৎ হয়নি। এর আগে যখন মল্লিকার্জুন খারগে ও জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দলনেতা ছিলেন তাঁদের সঙ্গে বিরোধীদের সম্পর্ক অত্যন্ত মজবুত ছিল।"
এছাড়া কংগ্রেসের বরিষ্ঠ নেতাদের মতে, অধীর চৌধুরীর জন্যই তৃণমূলের সঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে গাঁটছড়া বাঁধতে পারেনি কংগ্রেস। সূত্রের খবর, প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অধীরের বিরুপ মনোভাবের জন্য জোট বাঁধা সম্ভব হয়নি। তৃণমূলের তরফে ভোটের আগেই জানানো হয়েছিল কংগ্রেসের তরফে জোট নিয়ে কোনও প্রস্তাব তাদের কাছে আসেনি।
আরও পড়ুন- 'রিজাইন দিলীপ ঘোষ', BJP প্রার্থী শ্রাবন্তী ইস্যুতে বিস্ফোরক তথাগত
অনেক কংগ্রেস নেতার মতে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়াতে ইন্ধন জুগিয়েছেন অধীর চৌধুরী। লোকসভার বিভিন্ন বিষয়ে তৃণমূলকে দেখা গেলেও কংগ্রেসকে অনেক সময়ই দেখা যেত না। এমনক কংগ্রেসের সংসদীয় দফতরে রাহুল গান্ধীর পৌরোহিত্যে ডাকা বিরোধী দলগুলির একটি বৈঠকে আমন্ত্রণ পায়নি তৃণমূল।
তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও কারণে সংসদে গেলে সব রাজনৈতিক দলের নেতারাই তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু, অধীর চৌধুরীকে কোনও সময় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেখা যায়নি। এর পিছনে অধীরের ব্যক্তিগত আক্রোশকেই দায়ি করেছেন তাঁরা। তৃণমূলের অভিযোগ, অধীর বরাবরই বিজেপির সঙ্গে সখ্যতা বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। আর সেই কারণেই তৃণমূলের তরফে তাঁর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো সম্ভব হয়নি।
আরও পড়ুন- সলিসিটর জেনারেলের সঙ্গে শুভেন্দুর বৈঠক, তুষার মেহতার অপসারণের দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে চিঠি তৃণমূলের
কংগ্রেসের অধিকাংশ নেতা মনে করেন রাজ্যে ও সংসদে যদি অধীরকে দলের মুখ করে রাখা হয় তাহলে পৌরসভা নির্বাচনেও কংগ্রেসের ফল ভালো হবে না। বাম-কংগ্রেস জোটে চলতি বছর শুরু থেকেই আইএসএফকে নিয়ে বিরোধিতা করেছিলেন অধীর। একাধিকবার তা প্রকাশ্যেও এসেছিল। আগেও তৃণমূলের সঙ্গে জোট করার সময় মুর্শিদাবাদে নির্দল প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছিলেন।
এদিকে মোদী বিরোধী মুখ হিসেবে মমতাকেই তুলে ধরছে বিরোধী দলগুলি। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ের পর মমতাকে কুর্নিশ জানিয়েছিলেন প্রায় সবাই। আর সেখানে মমতা বিরোধী হিসেবে পরিচিত অধীর। যদিও বিধানসভা নির্বাচনের পর মমতার প্রতি কিছুটা সুর নরম করতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাতে অবশ্য কোনও লাভ হবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। আর তাই লোকসভায় দলনেতা হিসেবে অধীরকে সরিয়ে ২০২৪-এর আগে নতুন মুখ এনে মমতার সঙ্গে কংগ্রেস সখ্যতা বাড়াতে চায় বলে সূত্রের খবর।