গালওয়ান ভ্যালি সংঘর্ষের পর থেকেই আওয়াজ উঠেছে চিনা পণ্য বয়কটের
চিনা সূত্র পাওয়া গেল খোদ ভারতীয় সেনার বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটেই
এর জন্য ভারতীয় সেনার অনেক অর্থ চলে যাচ্ছে চিনা সংস্থাগুলির হাতে
এই নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক, উঠছে অনেক গুরুতর প্রশ্ন
গালওয়ান ভ্যালি সংঘর্ষের পর থেকে গোটা ভারত জুড়ে চিনা পণ্য বয়কট করার ডাক উঠেছে। তারই মধ্যে, চিনা সূত্র পাওয়া গেল খোদ ভারতীয় সেনাবাহিনীর বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটেই। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এইরকম ৫০,০০০ বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট কিনেছে, যা পরে দায়িত্ব পালন করবেন আইটিবিপি-র কর্মীরাও। এই ইন্দো-তিব্বত বাহিনীই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার একটা বড় অংশে চিনের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে যে দেশ প্রতারণা করে ভারতীয় সেনাদের হত্যা করেছে, তাদের তৈরি জিনিসই সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করতে বাধ্য করা কি উপযুক্ত?
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় ১.৮ লক্ষ নতুন বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট অর্ডার করতে চলেছে। সমস্যা হল ২০১৯ সালে এই বিষয়ে চুক্তির সময়ে যে সংস্থার থেকে এই বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট কেনা হচ্ছে, তারা আমেরিকা এবং ইউরোপের তৈরি জ্যাকেট দেখিয়ে চুক্তিটি গ্রহণ করেছিল। পরে এই জ্যাকেট তৈরি করতে তারা চিন থেকে কাঁচামাল আমদানি করে। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হল উচ্চ পারফরম্যান্সের পলিথিন বা এইচপিপিই। নতুন অর্ডারের অর্ডারের ক্ষেত্রেও বিক্রেতা সংস্থাটিকে এইচপিপিই চিন থেকেই আমদানি করতে হবে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রক যত দ্রুত সম্ভব এই ১.৮ লক্ষ বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট অর্ডার করতে চায়। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে চিনের কাঁচামালে তৈরি বুলেট-প্রুফ জ্যাকেটের অর্ডার দেওয়া নিয়ে সংশয়ে পড়েছে মোদী সরকার।
চলতি মাসেই এই মোট ১.৮ লক্ষ বুলেটপ্রুফ জ্যাকেটের জন্য তিনটি দরপত্র ডাকা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি দরপত্র আইটিবিপি জওয়ানদের জন্য এবং অপরটি সিআরপিএফ জওয়ানদের জন্য। কোনও দরপত্রেই উল্লেখ করা হয়নি যে বিক্রেতারা চিন থেকে পণ্য আমদানি করতে পারবেন না। অর্থাৎ, বিক্রেতারা চাইলেই চিন বা যে কোনও দেশ থেকেই কাঁচামাল আনাতে পারেন। চিনের সঙ্গে বিরোধ চরমে উঠলেও এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়নি। এদিকে দরপত্র জমা দেওয়ার জন্য হাতে আর মাত্র কয়েক দিনই বাকি রয়েছে।
জানা গিয়েছে, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী যে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ব্যবহার করে সেগুলির কাঁচামাল সাধারণত ইউরোপ এবং আমেরিকার মতো দেশ থেকে আসত। ২০১৮ সালে, ভারতীয় সেনাবাহিনী ৬৩৯ কোটি টাকা মূল্যের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট অর্ডার করেছিল। যে সংস্থা এই বরাত পেয়েছিল, তারা পশ্চিমী দেশগুলির বদলে চিনা সংস্থাগুলি থেকে কাঁচামাল আমদানি করা শুরু করেছিলেন। ভারতীয় সেনার জমা ওই ৬৩৯ কোটি টাকার সিংহভাগই গিয়েছিল বিভিন্ন চিনা সংস্থায় কারণ জ্যাকেট তৈরির সামগ্রীর ৪০ শতাংশই দিয়েছিল তারা। এই বিষয়ে সরকার স্পষ্টতা আনুক এমনটাই চাইছেন সামরিক শিল্পের সঙ্গে জড়িত কর্তাব্যক্তিরা।