শরীর জুড়ে যৌবন জ্বালা, চাই একটা পুরুষ - হতাশায় ডুবে যাচ্ছে বাংলাদেশের কাঞ্চি

সারা শরীর জুড়ে তার যৌবনের জ্বালা

অথচ গত ৭ বছর ধরে সে একেবারে একা

ক্রমে হতাশা গ্রাস করছে তাকে

একাকী হাতির পর সামনে এল একাকী গণ্ডারের কাহিনি

 

amartya lahiri | Published : Jan 15, 2021 4:48 PM IST / Updated: Jan 21 2021, 07:57 AM IST

একেবারে গনগন যৌবন। সারা শরীর চাইছে প্রেম। অথচ গত ৭ বছর ধরে একেবারে একা সে। আর সইছে না এই জ্বালা। আফ্রিকা থেকে আসার কথা ছিল তার নতুন দামাল প্রেমিকের। কিন্তু, বাধ সেধেছে করোনা মহামারি। ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার জেরে আসতে পারেনি সেই দামাল মদ্দা। তাই, ক্রমেই হতাশা বাড়ছে কাঞ্চির।

কাঞ্চি, বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার অন্যতম সেরা আকর্ষণ। আগে এই মহিলা গন্ডারটির একজন পুরুষ সঙ্গী ছিল, কিন্তু ২০১৪ সালে তার মৃত্যু হয়। তারপর ঢাকা শহরের উত্তর শহরতলির চিড়িয়াখানায়, তার কাদামাটির আস্তানায় একা-একাই ঘুরে বেড়ায় সে। আগে ততটা অসুবিধা না হলেও, এখন সে একেবারে যাকে বলে উদ্ভিন্ন যৌবনা। মা হওযার সময় হয়েছে তার। আর এই বয়সে একাকীত্বটা তার মোটেই সহ্য হচ্ছে না।

চিড়িয়াখানায় আগত দর্শনার্থীদের কাছেও ক্রমশ তার মনের হতাশা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। জানা গিয়েছে এক টন ওজনের নিরামিষাশী জন্তুটিকে প্রতিদিন ছয় কেজি করে চালের খুদ এবং এক কেজি করে ছোলা খেতে দেওয়া হয়। এখন সেই খাবার সে মুখেই তুলতে চাইছে না। ছোটবেলা থেকে তার দেখভাল করেন ফরিদ মিয়া নামে এক ব্যক্তি। একেবারে পারিবারিক সম্পর্ক তাদের। কিন্তু ইদানিং ফরিদ মিয়ার উপরও মাঝে মাঝে গর্জন করে উঠছে সে। ফরিদ মিয়া কাঞ্চিকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়, কাঁধ চুলকে দিলেও, এখন তার মেজাজ ভাল হয় না।

বিকল্প সঙ্গী হিসাবে কাঞ্চির খাঁচায় একটি পুরুষ ভেড়া রেখে দেওয়া হয়েছে

ফরিদ মিয়া জানিয়েছেন, কাঞ্চির মেজাজ এখন কখন কীরকম থাকবে, তা বোঝা যায় না। কখনও কখনও সে তাঁর কথাও শোনে না। এই মেজাজ খারাপের মূল কারণ তার এত বছরের একাকীত্ব, এমনটাই বলছেন তার পালক। তবে, তিনি কাঞ্চিকে শিগগিরই একজন পুরুষ অংশীদার খুঁজে দেওয়ার আশ্বাস দেন। চিড়িয়াখানার কিউরেটর আব্দুল লতিফ জানিয়ছেন, আফ্রিকা থেকে একটি পুরুষ গন্ডার আনার প্রায় সবকিছু চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু, কোভিডের কারণে সেই প্রক্রিয়া থমকে গিয়েছে। এই অবস্থায় তার বিকল্প সঙ্গী হিসাবে তার খাঁচায় একটি পুরুষ ভেড়া রেখে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তার দিকে কাঞ্চি ফিরেও তাকায় না।

কাঞ্চির এই দুরবস্থার দেখে তার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে পাকিস্তানের এক চিড়িয়াখানায় ২০১২ সাল থেকে একাকী থাকা হাতি 'কাওয়ান'এর কথা।  বৈশ্বিক পশু অধিকার সংস্থাগুলির উদ্যোগে, দীর্ঘ একাকীত্বের পর সেই এশীয় হাতিটিকে কম্বোডিয়ার একটি সংরক্ষিত অরণ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে কাঞ্চির সেই পরিণতি হোক, এমনটা চাইছে না বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষ। আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, একটি গণ্ডার বন্দী অবস্থায় ৩৮ বছর পর্যন্ত বাঁচে। তাই আরও অনেকদিন কাঞ্চি দীবিত থাকবে। এরমধ্যে যত দ্রুত সম্ভব তার পুরুষসঙ্গী খুঁজে দেওয়াটা তাঁদের কর্তব্য বলে জানিয়েছেন তিনি। ফরিদ মিয়া বলেছেন, এখনও তার শরীর-স্বাস্থ্য ঠিকই আছে, তবে আর বেশি দেরী হলে কী হবে, তা তিনিও জানেন না।

Share this article
click me!