চরম হিজাব-বিতর্কে কর্নাটক, বিশ্বের কোন কোন দেশে প্রকাশ্যে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ জানেন


ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে কর্ণাটকের হিজাব বিতর্ক (Karnataka Hijab Row)। বিশ্বের কোন কোন দেশে নিষিদ্ধ হিজাব, বোরখার মতো মুখাবরণী?

Web Desk - ANB | Published : Feb 8, 2022 5:06 PM IST

মঙ্গলবার ভিন্ন মাত্রা নিয়েছে কর্ণাটকের (Karnataka) বিভিন্ন স্কুল-কলেজে 'হিজাবের' বিতর্ক (Hijab Row)। উদুপি (Udupi) ও মান্ড্য-র (Mandya) দুটি কলেজে হিজাব বনাম গেরুয়া চাদর-পাগরির মধ্যে প্রায় সংঘর্ষের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই (CM Basaavraj Bommai) আগামী ৩ দিন কর্নাটকের সমস্ত স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে, 'সমতা, অখণ্ডতা এবং জনশৃঙ্খলা' বজায় রাখার দোহাই দিয়ে স্কুল-কলেজে হিজাব বাতিল করার সরকারি সিদ্ধান্ত থেকেই। যে সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কর্ণাটক হাইকোর্টে মামলা করেছে উদুপির একটি সরকারি কলেজের পাঁচ ছাত্রী। তবে, কর্নাটকেই প্রথম হিজাব পরা বাতিল করা করা হল, তা নয়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই হিজাব, বোরখার মতো মুখাবরণী নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোন কোন দেশে, আসুন দেখে নেওয়া যাক  - 

সুইজারল্যান্ড

২০২১ সালের মার্চে 'বোরখা' নিষিদ্ধ করেছিল সুইজারল্যান্ড। সেই দেশে মুখাবরণী নিষিদ্ধ করার বিষয়ে চরম ডানপন্থী দল সুইস পিপলস পার্টির প্রস্তাবিত বিল, এক গণভোটে সামান্য ব্যবধানে জয়লাভ করেছিল। মাত্র ৫১.২ শতাংশ ভোটের জোরেই সংশোধিত হয়েছিল সুইস সংবিধান। বিলটি অনুমোদিত হওয়ার পরও, এই নিয়ে বিতর্ক থামেনি। একে ইসলামের উপর নিষেধাজ্ঞা হিসাবে বলে দাবি করছেন বিরোধীরা। অন্যদিকে, গণভোট কমিটির চেয়ারম্যান তথা পিপলস পার্টির সাংসদ ওয়াল্টার ওবম্যান দাবি করেন,  মুখ দেখানোটাই সুইজারল্যান্ডের ঐতিহ্য, মৌলিক স্বাধীনতা। হিজাব পরার প্রবণতার সুইজারল্যান্ডে যার কোনো স্থান নেই।

নেদারল্যান্ডস

নেদারল্যান্ডস-এ ২০১৯ সালের অগাস্টে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল বোরখার উপর। শুধু বোরখা নয়, ওড়না, পুরো মুখ ঢাকা হেলমেট এবং বালাক্লাভাসের মতো সমস্ত ধরণের মুখাবরণীই নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৪ বছর ধরে মুখাবরণী নিষিদ্ধ করা নিয়ে বিতর্কের পর এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। বর্তমানে সেই দেশে প্রকাশ্যে মুখ ঢাকা থাকলে কমপক্ষে ১৫০ ইউরো জরিমানা করা যেতে পারে। 
 
ফ্রান্স

২০১১ সালে, ফ্রান্সে প্রকাশ্যে যে কোনওরকম মুখাবরণীতে মুখ ঢাকা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রয়েছে, মুখোশ, হেলমেট, বালাক্লাভাস, নিকাব এবং মুখ ঢেকে রাখলে বোরখাও। তবে এই আইন নিয়েও ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পক্ষে যারা তাদের দাবি, মুখ ঢেকে রাখা একদিকে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে ইসলামিক রীতিনীতির অধীনে মহিলাদের মুখ ঢেকে রাখতে বাধ্য করা লিঙ্গবিদ্বেষী এবং নিপীড়নমূলক। অন্যদিকে নিষেধাজ্ঞার বিরোধীদের বক্তব্য, এই আইন ব্যক্তি স্বাধীনতাকে হরণ করে এবং মুসলমানদের ধর্মবিশ্বাসকে নিশানা করে তৈরি করা হয়েছে। 

বেলজিয়াম

২০১১ সালেই ফ্রান্সের পাশের দেশ বেলজিয়ামে প্রকাশ্যে বোরখা-সহ সম্পূর্ণ মুখ ঢাকা আবরণ পরা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আইন লঙ্ঘন করলে মোটা জরিমানা বা সাত দিনের কারাবাসের সাজা হতে পারে। তবে, বেলজিয়ামে মাত্র ১০ লক্ষ মুসলিম জনসংখ্য়া রয়েছে এবং তাঁদের মধ্যে মাত্র ৩০০ জন বোরখা বা নিকাবের মতো মুখাবরণী ব্যবহার করেন।

শ্রীলঙ্কা

২০২১ সালের এপ্রিলে 'জাতীয় নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগের কারণে' প্রকাশ্যে সব ধরনের মুখাবরণী নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব অনুমোদন করে সেই দেশের মন্ত্রিসভা। এই পদক্ষেপটি এমন এক অদ্ভূত সময়ে নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা সরকার, যে সময় করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করতে জনসাধারণকে ফেসমাস্ক পরার জন্য আহ্বান জানাচ্ছিল সরকারই। এই পরিপ্রেক্ষিতে শ্রীলঙ্কা সরকার বলেছিল, পদক্ষেপটি এখনও প্রস্তাবের আকারেই রয়েছে। এটি তাড়াহুড়ো করে বাস্তবায়ন করা হবে না। 

চিন

২০১৭ সালে, চিনের মুসলিম অধ্যুষিত শিনজিয়াং প্রদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল বোরখা, নিকাব এবং 'অস্বাভাবিক' দাড়ি রাখা। 'ধর্মীয় উগ্রবাদকে দমন' করতেই এই পদক্ষেপ বলে দাবি করেছিল বেজিং। সেই সরকারি আদেশ অনুসারে, শিনজিয়াং প্রদেশের বাসিন্দাদের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন দেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। 

ডেনমার্ক

ডেনমার্কে, ২০১৮ সালের মে মাসে বোরখা নিষিদ্ধের আইনটি পাস হয়েছিল। এই বছরের অগাস্টে  আইনটি বলবৎ করা হয়। আইন লঙ্ঘনকারীদের ১৩৫ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। 

অস্ট্রিয়া

অস্ট্রিয়ার আইন অনুসারে, বাসিন্দাদের প্রকাশ্যে চুলের রেখা থেকে চিবুক পর্যন্ত মুখ দৃশ্যমান থাকা বাধ্যতামূলক। ২০১৭ সালে এই আইন কার্যকর করা হয়েছিল। আইনটি বোরখা নিষিদ্ধ আইন নামেই পরিচিতি পেয়েছে। আইন লঙ্ঘনকারীদের ১৫০ ইউরো জরিমানা দিতে হয়।

বুলগেরিয়া

বুলগেরিয়ায়, ২০১৬ সালে বোরখা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। লঙ্ঘনকারীদের ৭৫০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা করা হয়! তবে, ক্রীড়াক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে বা প্রার্থনার সময় বোরখা পরায় ছাড় দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন

২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালতে একটি আইন পাস করা হয়েছিল। যা, ইইউ অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে নিয়োগকর্তাদের কাজের ক্ষেত্রে মহিলারা হিজাব, নিকাব পরবেন কিনা, তা ঠিক করার অনুমতি দেয়। এই নিয়ে বিতর্কের মুখে গত বছর আইনটি পুনর্মূল্যায়ন করা হয়। ২০২১ সালের জুলাইয়ে আদালত, আগের আইনই বহাল রাখে। এই রায় নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী এবং মুসলিম দেশগুলি এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করে বলেছে, এই রায় ইউরোপে ইসলাম বিদ্বেষকে উত্সাহিত করবে।

Share this article
click me!