চিনের (China) এক প্রাক্তন ভাইস-প্রিমিয়ারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলার পর থেকে বেপাত্তা টেনিস তারকা পেং শুয়াই (Peng Shuai)। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA), রাষ্ট্রসংঘ (United Nations) থেকে শুরু করে গোটা বিশ্ব তাঁর অবস্থান ও সুস্থতার প্রমাণ চাইছে।
ক্রমে গাঢ় হচ্ছে রহস্য। চিনের (China) এক প্রাক্তন ভাইস-প্রিমিয়ারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেছিলেন চিনা টেনিস তারকা পেং শুয়াই (Peng Shuai)। তারপর থেকেই তিনি ভ্যানিশ। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি আদৌ বেঁচে আছেন কিনা, তাই নিয়েই বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় শুক্রবারই চিনা সরকারি টিভি চ্যানেলের এক সাংবাদিক, পেং-এর বর্তমান ছবি বলে তাঁর কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু, তা যথেষ্ট প্রমাণ হিসাবে মানল না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA) এবং রাষ্ট্রসংঘ (United Nations)। পেং শুয়াই-এর অবস্থান এবং সুস্থতার 'স্বাধীন, যাচাইযোগ্য প্রমাণ' দাবি করেছে তারা।
শনিবার, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি (Jen Psaki) বলেছেন, জো বিডেনের (Joe Biden) প্রশাসন চায়, পেংয়ের অবস্থান সম্পর্কে চিন 'স্বাধীন, যাচাইযোগ্য প্রমাণ সরবরাহ করুক। অন্যদিকে, চিনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রবীন নেতা ঝাং গাওলি (Zhang Gaoli), যাঁর বিরুদ্ধে পেং যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ তদন্তের ওপর জোর দিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। সেই সঙ্গে, বিভিন্ন টেনিস তারকারা, ক্রীড়া সংস্থা, বিভিন্ন দেশের সরকার এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলিও ৩৫ বছর বয়সী এই প্রাক্তন বিশ্ব শীর্ষস্থানীয় মহিলা ডাবলস খেলোয়াড় সম্পর্কে 'গভীর উদ্বেগ' প্রকাশ করেছে।
চলতি মাসের শুরুতে, চিনা সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ওয়েইবো'তে পেং অভিযোগ করেছিলেন, ঝাং গাওলির সঙ্গে তাঁর দীর্ঘদিন ধরেই 'অন-অফ সম্পর্ক' ছিল। সেই সময় তাঁকে যৌনতায় বাধ্য করেছিলেন ঝাং। এরপর দ্রুত ওয়েইবো থেকে পেং-এর অভিযোগগুলি মুছে ফেলা হয়। তারপর থেকেই তাঁর আর কোনও খোঁজ নেই বহির্বিশ্বের কাছে। তবে, শুক্রবার চিনা সরকারি মাধ্যম সিটিজিএন-এর (CGTN) এক সাংবাদিক, শেন শিওয়েই (Shen Shiwei), 'পেং-এর ছবি' বলে দাবি করে কয়েকটি ছবি টুইট করেন। সেখানে 'নিখোঁজ' টেনিস তারকাকে কিছু সফট টয়েজের সঙ্গে পোজ দিতে দেখা গিয়েছে। শিওয়েইয়ের দাবি, ছবিগুলি পেং-এর উইচ্যাট থ্রেড থেকে নেওয়া। পেং-এর একজন বন্ধুই তাঁর সঙ্গে সেগুলি শেয়ার করেছেন।
তবে সেই প্রমাণ, বাকি বিশ্ব মানছে না। মহিলা টেনিসের শীর্ষস্থানীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ডব্লিউটিএ-র (WTA) প্রধান স্টিভ সাইমন (Steve Simon), সাফ জানিয়েছেন পেং বেপাত্তা থাকলে এবং তাঁর অভিযোগের তদন্ত না হলে, তাঁরা চিনে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের ব্যবসা হারাতেও পিছপা হবেন না। নোভাক জকোভিচের (Novak Djokovic) মতো তারকা ডব্লিউটিএ-র এই হুমকিকে সমর্থন করেছেন। পুরো টেনিস সম্প্রদায়কে পেং এবং তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন ২০ গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ী। এই পরিস্থিতির সমাধান না করে, চিনের মাটিতে টুর্নামেন্ট হতে পারে না বলে দিয়েছেন তিনি। সেরেনা উইলিয়ামস (Serena Williams) এবং নাওমি ওসাকাও (Naomi Osaka) চিনের সর্বকালের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড়ের জন্য তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
বেজিং, লন্ডন এবং রিও অলিম্পিকে চিনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন পেং। ২০১০ এশিয়ান গেমসে চিনের হয়ে সোনাও জিতেছিলেন। প্রাক্তন উইম্বলডন এবং ফ্রেঞ্চ ওপেন ডাবলস চ্যাম্পিয়নও তিনি। তবে, পেং-এর দাবির ফলে, চিনে মিটু (#MeToo) আন্দোলন প্রথমবারের মতো চিনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষপদের দিকে ধাবিত হয়েছে। পেং-এ গায়েব হয়ে যাওয়া, চিন সরকারের, 'সমালোচনার প্রতি শূন্য-সহনশীলতা দৃষ্টিভঙ্গি'রই পরিচয় বলে দাবি করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল (Amnesty International)। সংস্থার চিন বিষয়ক গবেষক ডোরিয়েন লাউ (Doriane Lau) বলেছেন, 'চিন সরকার পদ্ধতিগতভাবে দেশের মিটু আন্দোলনের মুখ বন্ধ করছে।'
চিন অবশ্য এখনও অবধি পেং নিয়ে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে তিনি কোথায় আছেন, কেমন আচেন, তাই নিয়েও কোনও মন্তব্য করেনি তারা। কমিউনিস্ট পার্টির মালিকানাধীন গ্লোবাল টাইমসের সম্পাদক হু শিজিন (Hu Xijin), অবশ্য শুক্রবার টুইট করে বলেছেন, পেং শুয়াই প্রতিশোধ এবং নিপীড়নের শিকার হয়েছে, এই কথা তিনি বিশ্বাস করেন না। চিনা রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল সিজিটিএন-ও তাদের টুইটারে একটি স্ক্রিনশট প্রকাশ করে বলেছে, সেটি সাইমন এবং অন্যান্য ডব্লুটিএ কর্তাদের পেং-এর পাঠানো ইমেল। সেই ইমেলে, পেং দাবি করেছেন, তাঁর আগের অভিযোগগুলি 'সত্যি নয়'। তিনি 'বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছেন এবং সবকিছু ঠিকই আছে'। কিন্তু ইমেলটির ভাষা ইমেলটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ তুলে দিয়েছে।