ফ্রান্সিস সফরের সময় জেসুইট ধর্মীয় আদেশের একজন হাঙ্গেরিয়ান সদস্যকে তাঁর প্রয়াত ফাদার ফেঙ্ক জালিকসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। সেই সময়ই তিনি বলেন,আর্জেন্টিনা সরকার একটা সময় আমার মাথা কেটে ফেলতে চেয়েছিল।
আর্জেন্টিনা সরকার একটা সময় তাঁর মাথা কেটে নিতে উদ্যোগী হয়েছিল। সময়টা প্রায় এক দশকেরও আগে। সেই সময় তিনি বুয়ানস আইরেসের আর্চবিশপ ছিলেন। ১৯৭০ এর দশকের সামরিক স্বৈরাচারের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে, তাদের তিনি সহযোগিতা করেন- এমন মিথ্যা অভিযোগ সমর্থন জানিয়েই আর্জেন্টিনা সরকার তাঁর মাথা কেটে ফেলত।
সম্প্রতি হাঙ্গেরি সফরে রয়েছে পোপ ফ্রান্সিস। সেই সময় তিনি জেসুইটদের সঙ্গে কথা বলেন। ২৯ এপ্রিল তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন। ফ্রান্সিসও এজন জেসুইট। তাঁর এই মন্তব্যগুলি মঙ্গলবার ইতালির জেসুইট জার্নাল সিভিলটা ক্যাটোলিকাতে প্রকাশিত হয়েছিল। এজাতীয় অন্যান্য বৈঠকের বিষয়ও এই জার্নালে প্রকাশিত হয়।
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য জেসুইট কারা- রোমান ক্যাথলিক চার্চের সদস্যদের জেসুইট বলা হয়। এরা খ্রিস্টের সৈনিক। এদের থেকেও পোপ নির্বাচন করা হয়। এর প্রতিষ্ঠাতা লোয়োলার সেন্ট ইগনেতিয়াস পুরোহিত হওয়ার আগে একজন নাইট ছিলেন।
যাইহোক ফ্রান্সিস সফরের সময় জেসুইট ধর্মীয় আদেশের একজন হাঙ্গেরিয়ান সদস্যকে তাঁর প্রয়াত ফাদার ফেঙ্ক জালিকসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন। হাঙ্গেরিয়ান বংশোদ্ভূত জেসুইট যিনি বুয়েনস আইরেসের একটি শানটিটাউনে সামাজিক কাজ করছিলেন। বামপন্থীদের সাহায্য করেন এই সন্দেহে তাঁকে গ্রেফতার করেছিল গেরিলা বাহিনী।
জালিকসকে ১৯৭৬ সালে আরেক জেসুইট ধর্মযাজক, অরল্যান্ডো ইওরিও, একজন উরুগুয়ের সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ইওরিও ২০০০ সালে মারা যান এবং জ্যালিকস ২০২১ সালে মারা যান। তবে এই প্রসঙ্গ আগেও উঠেছিল।
ফ্রান্সিস যখন ২০১৩ সালে পোপ নির্বাচিত হন, তখন আর্জেন্টিনার এক সাংবাদিক ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর যুদ্ধ চলাকালীন ফাদার জর্জ মারিও বার্গোগ্লিও ও আর্জেন্টিনার জেসুইটদের উচ্চপদে থাকা দুই ধর্মীয় যাজকের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকা করার অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন। তবে তিনি সেই সময় জানিয়েছিলেন পরিস্থিতি (আর্জেন্টিনার) সত্যিই খুব বিভ্রান্তিকর ও অনিশ্চিত ছিল। তারপর কিংবদন্তি তৈরি হয়েছিল। তিনি তাদের কারাগারে পাঠিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন। পোপ নির্বাচনের সময় ফ্রান্সিস সবকিছুই অস্বীকার করেছেন। তখন জালিকস একটি বিবৃতি জারি করে বলেন, গ্রেফারিতে ভবিষ্যৎ পোপের কোনও দোষ ছিল না।
২০১০ সাল, সেই সময়ে ফ্রান্সিস বুয়েনস আইরেসের আর্চবিশপ হয়েছিলেন। তিনি স্বৈরাচারে সময়কালের তদন্তের জন্য তিন বিচারকের প্যানেলের সামনে দাঁড়িয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, সরকারের কিছু লোক আমার মাথা কেটে ফলতে চেয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যে নির্দোশ তা প্রমাণ করতে পেরেছিলেন। আর্চবিশপ হিসেবে তাঁর কাজের বিষদ বিবরণ দেননি পোপ। রাষ্ট্রপতি ক্রিস্টিনা ফার্নান্দেজ ডি কির্চনারের সঙ্গে তার সম্পর্ক খুব একটা মসৃণ ছিল না। ক্রিস্টিনার অভিযোগ ছিল ফ্রান্সিস রাজনৈতিক পক্ষ নিচ্ছেন। ফ্রান্সিসও বুয়েনস আইরেস এড়িয়ে চলেন।
হাঙ্গেরিতে জেসুইটদের সঙ্গে কথা বলার সময় পোপ ফ্রান্সিস বলেছিলেন তিনি পোপ হওয়ার পরে ২০১০ সালে তাঁকে যারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সেই তিন বিচারকের একজনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই একজন বিচারক তাঁকে বলেছিলেন, ফ্রান্সিসকে দোষী সাব্যস্ত করার জন্য সরকারই তাদের নির্দেশ দিয়েছিল। আর্জেন্টিনার রাজনীতিবিদদের সঙ্গে ফ্রান্সিসের সম্পর্ক খুবই অস্বস্তিকর। আর সেই কারণেই ফ্রান্সিক পোপ নির্বাচিত হয়েও এখনও পর্যন্ত নিজের দেশে একবারও যেতে পারেননি।