চীনা বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভূত্বকের ১০ হাজার মিটার অর্থাৎ ১০ কিলোমিটার নীচে গর্ত খনন শুরু করেছেন। এটি হবে চিনে খনন করা সবচেয়ে গভীর বোরওয়েল।
পাতাল প্রবেশ করছে চিন। অবাক হবেন না। কার্যত তাই করে ফেলেছে তারা। শুনলে অবাক হবেন যে চিন ইতিমধ্যেই মাটিতে বিশাল গর্ত খুঁড়ে ফেলেছে। চিন পৃথিবীর ভূত্বক অর্থাৎ এর পৃষ্ঠে ১০ হাজার মিটার অর্থাৎ ৩২,৮০৮ ফুট একটি গর্ত খনন করছে। কিন্তু কেন?
জেনে রাখা ভালো যে আমাদের পৃথিবী তিনটি স্তর দ্বারা গঠিত, যার মধ্যে ভূত্বক মানে উপরের পৃষ্ঠ বা পৃথিবীর ভূত্বক, ম্যান্টেল মানে পৃথিবীর ভূত্বক এবং কোর মানে ভূমধ্য এলাকা। পৃথিবীর ভূত্বক কঠিন শিলা এবং খনিজ পদার্থ দ্বারা গঠিত। তারপর এর নীচে ম্যান্টেল রয়েছে, এটিও বেশিরভাগ পাথর এবং খনিজ দিয়ে তৈরি। এর পরে আসে কোরের পালা, যা নিকেল এবং লোহা দিয়ে তৈরি। এটি একটি খুব গরম জায়গা। তাই পৃথিবীর ‘চামড়া’ ফুঁড়ে (ভূত্বক) যে গর্ত চিন খুঁড়তে শুরু করেছে, তা অন্তত ১০টি মহাদেশীয় স্তর ভেদ করবে। মহাদেশীয় স্তর আসলে পাথরেরই নানাবিধ আস্তরণ।
তেল ক্ষেত্রে তুরপুন
চিন কত গভীরে গর্ত খনন করছে? অনুমান করা যায় যে চীনা বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর ভূত্বকের ১০ হাজার মিটার অর্থাৎ ১০ কিলোমিটার নীচে গর্ত খনন শুরু করেছেন। এটি হবে চিনে খনন করা সবচেয়ে গভীর বোরওয়েল। সিনহুয়া নিউজ এজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন দেশটির তেল সমৃদ্ধ জিনজিয়াং অঞ্চলে খনন কাজ শুরু করেছে। জিনজিয়াং সেই একই এলাকা যেখানে চীন উইঘুর মুসলমানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়।
পরিবেশের ক্ষতি সম্পর্কে উদ্বেগ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চিন যেভাবে গর্ত খনন করছে তাতে তা পৃথিবীর ভূত্বকের শেষ অংশে পৌঁছাতে পারে। পৃথিবীর ভূত্বকের গভীরতা ১০ কিমি থেকে ৪০ কিমি পর্যন্ত। এরকম কিছু পাথর এমন গভীরতায় বিদ্যমান, যেগুলোর বয়স ১৪৫ মিলিয়ন বছর। চাইনিজ একাডেমি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর বিজ্ঞানী সান জিনশেং বলেন, পৃথিবীতে খনন করতেও অসুবিধা হচ্ছে। এ কারণে এ খননের ফলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চিন কেন পৃথিবীতে গর্ত খনন করছে?
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং চান তার দেশ পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে থাকা রহস্য খুঁজে বের করুক। ২০২১ সালে দেওয়া এক ভাষণে তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের তা করতে বলেছিলেন। এই ধরণের কাজ পৃথিবীতে লুকিয়ে থাকা খনিজ এবং শক্তির উত্স সম্পর্কে তথ্য সরবরাহ করবে। যাই হোক, চিনের চোখ সবসময় খনিজ পদার্থের দিকে। চিন তার প্রতিরক্ষা বিবৃতিতে আরও বলেছে যে এত গভীরে খনন করলে আমরা ভূমিকম্প এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ সম্পর্কে আরও ভালভাবে জানতে পারব।