ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ১৪ জন ভাইস-প্রেসিডেন্টের একজন হলে ইভা কাইলি। এই অভিযোগ ওঠার পর এমইপিরা কাইলিকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে ‘সবচেয়ে বড় দুর্নীতির জাল’, রাজনীতিবিদদের ঘুষ দেওয়া ইউরো নোটের বান্ডিল ভর্তি স্যুটকেস উদ্ধার করে ছবি প্রকাশ করল বেলজিয়ামের পুলিশ। ইউরোপীয় সংসদে দায়িত্বপালনের সময় আর্থিক কেলেংকারির অপরাধে অভিযুক্ত চার ব্যক্তিকে ব্রাসেলসের এক আদালতে হাজির করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, এত বড় অঙ্কের অর্থ ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতার থেকেই ঘুষ হিসেবে নিয়ে আসা হয়েছিল।
ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের গ্রিক সদস্য বা এমইপি ইভা কাইলি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, রাজনৈতিক সমর্থন দেওয়ার বিনিময়ে তিনি কাতার থেকে এক লাখ ডলারেরও বেশি ঘুষ নিয়েছেন। তদন্তকারীদের দাবি, বেলজিয়ামের রাজধানীর আশেপাশের বিভিন্ন সম্পত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে দেড় মিলিয়ন ইউরোরও বেশি অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তবে ইভা কাইলি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। কাতারও এই ধরনের অন্যায়ের কথা অস্বীকার করেছে।
ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ১৪ জন ভাইস-প্রেসিডেন্টের একজন হলে ইভা কাইলি। এই অভিযোগ ওঠার পর এমইপিরা কাইলিকে তাঁর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছেন। উল্লেখ্য, নভেম্বর মাসে যখন তাঁর সহকর্মীরা কাতারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু করেছিলেন, তখন তিনি সংসদে একটি লক্ষ্যণীয় বক্তৃতা দিয়ে বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য এবং ‘শ্রমিক অধিকারে অগ্রগামী’ ভূমিকা রাখার জন্য কাতারের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
সংসদের নেতা রবার্টা মেটসোলা ইউরো বাজেয়াপ্ত করার ঘটনাকে ‘ইউরোপীয় গণতন্ত্রের জন্য এক কঠিন দিন’ বলে মন্তব্য করেছেন। সরকারি গোয়েন্দারা কয়েক’দিন ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির বাড়ি থেকে প্রায় ছয় লক্ষ নগদ ইউরো উদ্ধার করেছেন। এর পাশাপাশি, একজন এমইপির ফ্ল্যাট থেকে দেড় লক্ষ ইউরো এবং ব্রাসেলসের এক হোটেলের রুম থেকে একটি সুটকেস ভর্তি সাড়ে সাত লক্ষ ইউরো উদ্ধার করা হয়েছে।
বেলজিয়ামের পুলিশ মঙ্গলবার একটি ছবি প্রকাশ করেছে যেখানে ইউরোর নোটের স্তূপ দেখা গেছে। সূত্রের খবর, ইভা কাইলির ফ্ল্যাট থেকে নগদ দেড় লক্ষ ইউরো উদ্ধার হয়েছে। এবিষয়ে অবশ্য তাঁর আইনজীবী বলেছেন, "কোনও অর্থ পাওয়া গেছে কিনা, বা কত পাওয়া গেছে, তা আমার জানা নেই।" এই ঘটনা ইউরোপীয় পার্লামেন্টে লবি গ্রুপগুলোর ভূমিকার ওপর প্রভাব ফেলেছে। স্ট্রাসবার্গের সংসদ ভবনে ইভা কাইলির অফিসের দরজায় ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ লেখা একটি নোটিশ ঝুলিয়ে সিল করে দেওয়া হয়েছে। তাঁকে পার্লামেন্টের সোশ্যালিস্ট অ্যান্ড ডেমোক্র্যাটস গ্রুপ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে এবং গ্রীক মধ্য-বাম দল পাসোক পার্টি থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে। গ্রীক কর্তৃপক্ষ তাঁর, তাঁর স্বামী এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করেছে।
কাতারিদের জন্য ইউরোপীয় অঞ্চলে ভিসা-মুক্ত ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার একটি প্রস্তাবের ওপর চলতি সপ্তাহে এমইপিদের ভোট নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, এই ঘটনার পর তা বাতিল হয়ে গেছে। ইতালির পাশাপাশি ব্রাসেলসেও তল্লাশি চালানো হয়েছে। শুক্রবার থেকে ১০ জন সংসদীয় কর্মচারীর তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত জিনিসপত্র ‘বাজেয়াপ্ত’ করা হয়েছে যাতে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাদি কেউ বিনষ্ট করতে না পারেন।
কাতারে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে ইউরোপীয় সংসদের কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়েছেন এমন অভিযোগের তদন্তের অংশ হিসেবে গত শুক্রবার ছয় জনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর এঁদের মধ্যে দু’জনকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত অন্য তিন জনের প্রত্যেকেই ইতালির নাগরিক। ইভা কাইলির স্বামী ফ্রান্সেস্কো গিওরগে একজন সংসদীয় সহকারী। অভিযুক্তদের মধ্যে তিনিও রয়েছেন।
প্রাক্তন এমইপি পিয়ের আন্তোনিও প্যাঞ্জেরি, যিনি এখন মানবাধিকার গ্রুপ “ফাইট ইমিউনিটি” পরিচালনা করছেন, তিনিও চার অভিযুক্তের মধ্যে রয়েছেন বলে সূত্রের খবর। তাঁর স্ত্রী ও মেয়েকেও আটক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গিওরগে এর আগে প্যাঞ্জেরির পক্ষে থেকে সংসদীয় সহকারী হিসাবে কাজ করেছিলেন। অপর আরেক সন্দেহভাজন হলেন নিকোলো ফিগা-তালামানকা। তিনি লবি গ্রুপ “নো পিস উইদাউট জাস্টিস” পরিচালনা করেন।
আরও পড়ুন-
অমিত শাহের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ কি শুধুই প্রশাসনিক? রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে বাড়ছে জল্পনা
কলকাতায় এলেও অমিত শাহের সময় পরিমিত, ফের পিছিয়ে গেল জোকা-তারাতলা মেট্রোর উদ্বোধন
আধারের সঙ্গে ভোটার কার্ডের সংযুক্তিকরণ নিয়ে বড় ঘোষণা, সংসদে জানিয়ে দিলেন আইনমন্ত্রী কিরণ রিজিজু