কানাডার নিউ সাউথহ্যাম্পটনের সেন্ট জন্স থেকে আটলান্টিকে ডুব দেয় সাবমেরিন টাইটান। পাঁচ অভিযাত্রী নিয়ে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ চাক্ষুস করতে রওনা হয় সাবমেরিনটি।
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ অন্বেষণ করার পথে ডুবে যাওয়া অপারেটর ওসেনগেট বৃহস্পতিবার বলেছে যে এটি সমস্ত অনুসন্ধান এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম স্থগিত করছে। সংস্থাটি তার ওয়েবসাইটে পোস্ট করেছে যে এটি আর টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষে কাউকে পাঠাবে না। কানাডার নিউ সাউথহ্যাম্পটনের সেন্ট জন্স থেকে আটলান্টিকে ডুব দেয় সাবমেরিন টাইটান। পাঁচ অভিযাত্রী নিয়ে টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ চাক্ষুস করতে রওনা হয় সাবমেরিনটি। ৯৬ ঘণ্টার অক্সিজেনের রসদ নিয়ে সাগরে ডুব দিয়েছিল জলযানটি। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ঘটে যায় বিপত্তি। পৌনে দু'ঘন্টার মাথায় দিক নির্দেশকারী জাহাজ বা কমান্ড শিপ 'পোলার প্রিন্স'-এর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সাবমেরিনটির। তারপর থেকেই আর খোঁজ মেলেনি টাইটানের। পাঁচ অভিযাত্রী-সহ সাবমেরিনের খোঁজে চারদিন ধরে আটলান্টিকে তল্লাশি চালায় মার্কিন কোস্ট গার্ড। বুধবার কানাডার P-3 বিমান সমুদ্রের তলদেশ থেকে কিছু ভেসে আসা শব্দ চিহ্নিত করে। পরে C-130 হারকিউলিস বিমানও একই ধরনের সংকেত শব্দ চিহ্নিত করে। সেই মতো নামানো হয় রোবটও। কিন্তু বৃহস্পতিবারই ওই সাবমেরিনের ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পায় অনুসন্ধানকারীরা।
পাঁচ দিনের উন্মত্ত অনুসন্ধান অভিযানের পর, ইউএস কোস্ট গার্ড টাইটানিক সাইটের চারপাশে টাইটান সাবমার্সিবলের পাঁচটি বড় টুকরো সনাক্ত করেছে। অন্যদিকে টাইটানের পাঁচ যাত্রীর জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো নিয়েও উঠে আসছে নানা জল্পনা। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী নিকষ আঁধারের মধ্যেই মিলিয়ে যায় টাইটান। আলো বলতে ছিল আটলান্তিকের অতলে বায়োলুমিনেসেন্ট বা স্বআলোকিত প্রাণীদের বিচরণ। মহাসাগরের অত নীচে দিনের আলো প্রবেশ করতে পারে না, ফলে আলোঢ় একমাত্র উৎস ওই সামুদ্রিক প্রাণীদের শরীরের বিচ্ছুরিত আলো।
সাবমেরিনের যাত্রী ছিলেন পাকিস্তানের ধনকুবের শাহজাদা দাউদ এবং তাঁর ছেলে সুলেমান দাউদ। যাওয়ার কথা ছিল তাঁর স্ত্রী ক্রিস্টিন দাউদেরও। একটি সাক্ষাৎকারে ক্রিস্টিন জানিয়েছেন বহুদিন ধরেই তাঁর স্বামীর টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার ইচ্ছে ছিল। ২০১২ সালে তাঁরা সিঙ্গাপুরে একটি প্রদর্শনী দেখতে গিয়েছিলেন সপরিবারে। এই অভিযানে যাওয়ার কথা ছিল ক্রিস্টিনের। তবে সেই পরিকল্পনা বিঘ্নিত হওয়ায় ক্রিস্টিনের পরিবর্তে টাইটানে সওয়ার হন তাঁদের একমাত্র সন্তান ১৯ বছর বয়সি সুলেমান। ক্রিস্টিন জানিয়েছেন সাবমেরিনের ভেতর ছিল অপরিসর বাঙ্ক বেড, জেমস ক্যামেরনের আইকনিক ‘টাইটানিক ছবি’ দেখার ব্যবস্থা এবং বুফে কায়দায় খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্ত৷। নিজেদের পছন্দ মতো গানও শুনতে পারতেন যাত্রীরা। তবে সাবমেরিনের ব্যাটারি পাওয়ার বাঁচানোর জন্য আলো নিভিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যাত্রীদের। তাই অনুমান করা হচ্ছে সমুদ্রের অতলে নিষক অন্ধকারেই চির ঘুমে চলে গিয়েছিলেন যাত্রীরা।