নতুন বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি, পর পর কয়েকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে তুরস্ক এবং সিরিয়ার বেশ কিছু অংশে। রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার চেয়েও বেশি এই ভূমিকম্পগুলি কার্যত নিস্তব্ধ করে দেয় এই দুটি দেশ এমনকি তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলিকেও।
তুরস্কে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আন্তাকিয়া এবং গাজান্তিয়েপ শহর। সিরিয়ায় ধ্বংসীভূত হয়ে যায় আলেপ্পো এবং ইদলিব। সারা পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ৩০টিরও বেশি দেশ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, জাপান, পাকিস্তান, ইজরায়েল এবং বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশের সাথে সাথে ত্রাণসামগ্রী, ফিল্ড হাসপাতাল, খনন এবং উদ্ধারকারী দল পাঠিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভারতও।
ভারতের পক্ষ থেকে শুরু হয়েছে ‘অপারেশন দোস্ত’ (বন্ধুত্বের উদ্যোগ)। এই অপারেশনের অধীনে কী কী করা হচ্ছে?
এনডিআরএফ ইতিমধ্যেই সিএসএসআর (ভেঙে পড়া স্তূপ থেকে খোঁজা এবং উদ্ধারকারী) সরঞ্জাম এবং কৌশল ব্যবহার করে উদ্ধারকাজে সাহায্য করার জন্য প্রশিক্ষিত কুকুর স্কোয়াড সহ প্রায় ১০০ উদ্ধারকর্মীকে তুরস্কে পাঠিয়ে দিয়েছে।
একটি ৩০ শয্যার সুবিধাবিশিষ্ট এবং বিশেষ এক্সরে মেশিন, ভেন্টিলেটর, জেনারেটর এবং ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সরবরাহের জন্য তুরস্কে আপৎকালীন সামরিক হাসপাতাল স্থাপন করেছে ভারত।
প্রায় ২৫ টন ত্রাণ সামগ্রী, প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম, জামাকাপড়, জরুরী ওষুধপত্র, চিকিৎসা সামগ্রী ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আরও সরবরাহ করার কাজ চলছে।
তুরস্কে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস ওখানকার ভারতীয়দের বিবরণ ট্র্যাক করছে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ৩ হাজার জন ভারতীয় বাস করেন, তাঁদের মধ্যে প্রায় ১০ জন নাগরিকের জন্য তথ্য বা সহায়তা পাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে, ভূমিকম্পের পর থেকে একজন ভারতীয় নাগরিক বর্তমানে নিখোঁজ রয়েছেন।
তুরস্ক এবং সিরিয়া, উভয় দেশেই নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে ভারত। তা সত্ত্বেও এই সাহায্যের হাত সারা বিশ্বের কাছে পরিলক্ষ্যণীয়।
কূটনৈতিকভাবে, ভারতের লাভ হল, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন। তুরস্ককে ভারতের সহায়তার সুযোগ এমন একটা সময়ে এসেছে, যখন সম্পর্ক ভীষণ উত্তেজনাপূর্ণ। কাশ্মীর সম্পর্কে তুরস্ক ভারতের বিপক্ষে মত দিয়েছিল, তা সত্ত্বেও ভারত সরকার রাজনৈতিক বিবেচনাকে সরিয়ে রেখে সাহায্য পাঠিয়েছে, ঠিক যেভাবে তুরস্কও কোভিডের সময় ভারতকে ত্রাণ পাঠিয়েছিল।
আরেকদিকে, সিরিয়ার ক্ষেত্রে, দামাস্কাসকে সহায়তা করা ভারতের পুরনো ঐতিহ্য। ভারত সেই অবস্থানকে দৃঢ় করেছে।
ভারতের আরেকটি লাভ হল, বৈশ্বিক ভাবমূর্তির উন্নতি। জি২০-র অধিনায়ক হিসেবে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর ভারতের সহায়তা করাটা এক উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতা হিসেবে বিশ্বের নজরে ভারতের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করে তোলে।
২০০৪ সালের সুনামির সময় একযোগে ৫টি মিশনের সমন্বয়কারী ভারতীয় নৌ অভিযানগুলি বিশ্বব্যাপী তাবড় নেতাদের নজর কেড়েছিল। ভারত তখন থেকে স্বাধীনভাবে এবং ইন্দো-প্যাসিফিকের কোয়াডের অংশ হিসেবে তার HADR দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন: এক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ভারতের পরিবহনকারী শক্তি, আপৎকালীন ফিল্ড হাসপাতাল এবং প্রযুক্তিগত দলের দক্ষতা কতটা, তা দেখিয়ে দেওয়া যায়।
নিজদের প্রতি অন্যান্য দেশের প্রতিক্রিয়া উন্নত হয়। ভবিষ্যতে যদি ভারতকে কোনও বিপর্যয়ের সাথে মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে সারা বিশ্ব মনে রাখবে যে, ভারতও একসময়ে বিপর্যয়কালে কতখানি সাহায্য করেছিল।
কূটনৈতিকভাবে দেখতে গেলে, প্রয়োজনের সময়ে যখন একটি দেশকে সাহায্য করা হয়, তখন তাতে লাভই বেশি থাকে। হারানোর তেমন নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপর্যয়মূলক কূটনীতি যখন বিচক্ষণতার সাথে করা হয় তখন সদিচ্ছায় আরও বেশি লভ্যাংশ নিয়ে আসে।